শিরোনাম
◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ প্রাথমিক স্কুলে অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখার নির্দেশ ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার ২৭ বস্তা টাকা, গণনা চলছে ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ১৩ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৯:৪২ সকাল
আপডেট : ১৩ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৯:৪২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ছাড়তে চান না ব্যবসায়ীরা

ডেস্ক রিপোর্ট : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষিত ১৩টি মার্কেট ভবন ছাড়তে চান না ব্যবসায়ীরা। পুনর্বাসন ও ফের দোকান বরাদ্দের নিশ্চয়তা না থাকায় ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিয়েই ব্যবসা চালাচ্ছেন। সিটি করপোরেশন বলছে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ছাড়তে ব্যবসায়ীদের একাধিকবার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এসব ভবনে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ডিএনসিসি দায় নেবে না।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ডিএনসিসি এলাকার মার্কেট ভবনগুলো পরীক্ষা করে। ডিএনসিসির ৩৬টি মার্কেট ভবনের মধ্যে ১৪টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে ডিএনসিসিকে প্রতিবেদন দেয়। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর মধ্যে কতগুলো ভবন পুরোপুরি ভেঙে ফেলার, কতগুলোতে ‘রেট্রোফিটিং’ (কাঠামো অক্ষত রেখে সংস্কার) করার সুপারিশ করে বুয়েট। জরুরি ভিত্তিতে ভবনগুলোর ভার কমাতে বলে বুয়েট।

গত বছরের ২ জানুয়ারি দিবাগত রাতে আগুনে গুলশান ১ নম্বরের ডিএনসিসির কাঁচা মার্কেটটি ধসে পড়ে। এ মার্কেটটিও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় ছিল। বুয়েটের ওই প্রতিবেদনে গুলশান-১ কাঁচা মার্কেট সম্পর্কে বলা হয়েছিল, অপরিকল্পিতভাবে মার্কেটটির তৃতীয় ও চতুর্থ তলা বানানো হয়েছে। মার্কেটের দোতলার দোকানগুলোতে ভার অনেক বেশি। জরুরি ভিত্তিতে মার্কেটের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা ভেঙে ফেলতে হবে। ভার কমাতে হবে। এর কোনোটিই ব্যবসায়ীরা মানেননি। ফলে আগুনে চারতলা ভবনের পুরোটাই ধসে পড়ে।

ঝুঁকিপূর্ণ অন্য ভবনগুলো হচ্ছে গুলশান (উত্তর) পাকা মার্কেট, গুলশান (দক্ষিণ) পাকা মার্কেট, গুলশান (দক্ষিণ) কাঁচা মার্কেট, খিলগাঁও তালতলা সুপার মার্কেট, খিলগাঁও তালতলা কাঁচা মার্কেট, কারওয়ান বাজার ১ নম্বর ভবন, কারওয়ান বাজার ২ নম্বর ভবন, কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেট, কারওয়ান বাজার কাঁচামালের আড়ত, মোহাম্মদপুর টাউন হল পাকা মার্কেট, মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচা মার্কেট, প্রান্তিক সুপার মার্কেট (গাবতলী) ও বিজয় সরণির কলমীলতা কাঁচা মার্কেট।

মামলার জালে আটকা

ডিএনসিসি সূত্র জানায়, সাদেক হোসেন খোকা মেয়র থাকার সময় করপোরেশন বেশ কয়েকটি মার্কেট ভেঙে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা নির্মাণপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিকে অসম আখ্যা দেন। তাঁরা নতুন ভবন নির্মাণের সময় পুনর্বাসনের নিশ্চয়তা এবং নতুন ভবনে চাহিদামতো জায়গা পাওয়ার দাবিতে একাধিক মামলা করেন। অন্যদিকে কাজ করতে পারার নিশ্চয়তা দাবি করে ঠিকাদারেরাও মামলা করেন।

মার্কেট ভবন নিয়ে মোট ১১টি মামলা চলছে। সব কটি মামলাই সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে এবং এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মার্কেট পুনর্নির্মাণের সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন পুনর্বাসন ও পুনরায় বরাদ্দ পাওয়ার নিশ্চয়তাসহ তাঁদের দাবি মেনে নিলে তাঁরা মামলা তুলে নেবেন।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া বলেন, সিটি করপোরেশন মার্কেটগুলো পুনর্নির্মাণ করতে আগ্রহী। গুলশানের মার্কেটটি ধসার পরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দুবার সভা করা হয়েছে। একবার ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ছেড়ে দিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা করপোরেশনকে সহায়তা করতে নারাজ।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই ব্যবসা: কারওয়ান বাজার কাঁচামালের আড়ত, মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচা মার্কেট, গাবতলীর প্রান্তিক সুপার মার্কেট ও বিজয় সরণির কলমীলতা কাঁচা মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ভবনগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। মার্কেটের দেয়াল ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। কোথাও লোহার রড বেরিয়ে আছে। ভবনের পিলারে ভাঙন ধরেছে। ঝুঁকিপূর্ণভাবে বৈদ্যুতিক তার বের হয়ে আছে।

জানতে চাইলে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, বুয়েটের পক্ষ থেকে ভবনগুলো পরিদর্শন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই সুপারিশ করা হয়েছিল। এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ তাতে সন্দেহ নেই। সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগে বুয়েটের সুপারিশ অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।

কিন্তু ব্যবসায়ীরা ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ছাড়তে নারাজ। কলমীলতা কাঁচা মার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল বলেন, ব্যবসায়ীদের পরিবার এসব দোকানের ওপর নির্ভরশীল। মার্কেট বানাতে কয়েক বছর লাগবে। এই সময়ের জন্য অস্থায়ীভাবে পুনর্বাসন না করলে ব্যবসায়ীদের পথে বসতে হবে।

গত বছর ২ জানুয়ারি দিবাগত রাতে আগুনে গুলশান ১ নম্বর কাঁচা মার্কেট ধসে পড়ে আর পাকা মার্কেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আগুন লাগার তিন দিন পরেই পাকা মার্কেটে আবার ব্যবসা শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। ডিএনসিসি পাকা মার্কেটের অবস্থা যাচাই করতে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলকে দায়িত্ব দেয়। বুয়েট ভবন পরীক্ষা করে গত ১ এপ্রিল প্রতিবেদন দেয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকা মার্কেটের ভবনটি জান ও মালের নিরাপত্তার জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ। মার্কেটটি ভেঙে নতুন স্থাপনা করতে হবে। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বুয়েট সুপারিশ করে।

ডিএনসিসি রাজস্ব বিভাগ বুয়েটের প্রতিবেদনের অংশবিশেষ উল্লেখ করে পাকা মার্কেটের ব্যবসায়ীদের ভবনটি খালি করতে চিঠি দেয়। এসব ভবনে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ডিএনসিসি দায় নেবে না বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পায়নি করপোরেশন।

ডিএনসিসি পাকা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি তালাল রিজভী বলেন, এই মার্কেটটি নিয়ে একটি মামলা চলমান। ব্যবসায়ীরা সিটি করপোরেশনকে কয়েকটি দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু সিটি করপোরেশন কোনো সাড়া না দেওয়ায় আলোচনা এগোয়নি।

করপোরেশনে আস্থা নেই: একাধিক মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, সিটি করপোরেশনের কোনো মার্কেট ১০-১২ বছরের আগে নির্মাণকাজ শেষ করার ইতিহাস নেই।

ব্যবসায়ীদের এই দাবি অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। কারণ, সিটি করপোরেশন (বর্তমানে ডিএনসিসি) চারটি মার্কেটের নির্মাণকাজ ১০ বছরের বেশি সময়েও শেষ করতে পারেনি। এর মধ্যে মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনে নিউ ঢাকা সিটি করপোরেশন মার্কেটের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২১ বছর আগে। আবার মিরপুর ১ নম্বরের হজরত শাহ আলী (রহ.) মার্কেটের সম্পূর্ণ নির্মাণকাজ ১৩ বছরেও শেষ হয়নি।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা অনিশ্চয়তায় থাকুক এটি ডিএনসিসি চায় না। সুনির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক নির্মাণকাজ শেষ করতে ব্যবসায়ীরা সমঝোতা করতে পারে। নির্মাণকাজ সঠিক সময়ে শেষ করার ক্ষেত্রে ডিএনসিসিরও জবাবদিহি থাকতে হবে।’

সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ এসব মার্কেটেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। নির্দিষ্ট সময়ে নির্মাণকাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতিসহ আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত এসব ভবন খালি করার উদ্যোগ না নিলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রথম আলো

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়