হ্যাপী আক্তার: ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় মায়ের মৃত্যুর আগে পেট চিড়ে জন্ম নেয়া ফুটফুটে নবজাতককে আপাতত হাসপাতালের তত্ত্বাবধানেই রাখা হয়েছে। বর্তমানে শিশুটির চিকিৎসার প্রতি বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। তবে শিশুটি আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ আছে বলে জানিয়েছে হাতপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শিশুর দায়িত্ব নিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক। গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে লাবিব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই শিশুকে দেখতে গিয়ে শিশুটির চিকিৎসা ও পরবর্তী ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন তিনি।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, শিশুটির ভালো চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিচ্ছি। সে সম্পূর্ণ সুস্থ হোক। এরপর তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সরকারি প্রতিষ্ঠানে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। এর আগে শিশুটির নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে দিব। যেকোনো ব্যক্তি চাইলে অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে পারবেন। শিশুটির ভবিষ্যৎ মসৃণ করতে, যা করা প্রয়োজন আমরা তাই করব।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় শনিবার ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান উপজেলার রায়মনি এলাকার ৪২ বছরের জাহাঙ্গীর আলম, তার ৩২ বছর বয়সী স্ত্রী রত্না বেগম ও তাদের ৬ বছর বয়সী মেয়ে সানজিদা আক্তার।
রত্নার প্রসবের সময় দুদিন আগে পার হয়ে যাওয়ার কথা জানান তার শ্বশুর মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু। তিনি বলেন, ‘সময় পার হয়ে যাওয়ার কারণেই তাকে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে নিয়ে গিয়েছিল আমার ছেলে। ফেরার পথে তাদের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।’
প্রতিবেশী শাহজাহান জানান, নবজাতক শিশুটিকে প্রথমে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ময়মনসিংহের সিবিএমসি হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফ আল নূরের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি জানান, শিশুটি বর্তমানে সুস্থ আছে। তবে এক্সরে করার পর দেখা যায় তার ডান হাতের দু’টি অংশ ভেঙে গেছে। পরে শিশুটিকে ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া লাবিব হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
লাবিব হাসপাতালের পরিচালক বলেন, আমি সিবিএমসি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর এক্সরে করে জানতে পারি তার ডান হাত ভেঙে গেছে। তখন আমি অর্থোপেডিক্স ডা. সোহেল রানা সোহাগের সহযোগিতা চাই। উনি সহযোগিতা করবেন বললে, আমি বাচ্চাটিকে ওনার কাছে নিয়ে আসি এবং উনি দ্রুত হাতে রুল ব্যান্ডেজ দিয়ে প্লাস্টার করে দেন। তখন আমি ওনার পরামর্শে আমার নিজের জিম্মায়, লাবিব হাসপাতালে নিয়ে আসি। এরপর থেকে শিশুটি লাবিব হাসপাতালেই আছে।
নবজাতক বর্তমানে ময়মনসিংহের চরপাড়া এলাকায় লাবীব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুঞ্জুর রহমান রিপন বলেন, ‘নবজাতকের ডান হাতের দুটি অংশ ভেঙে গেছে। আমাদের হাসপাতালে বাচ্চা জন্ম দেয়া কয়েকজন নারী ভর্তি আছেন। তারাই আগ্রহ করে নবজাতককে দুধ দিচ্ছেন। ফলে নবজাতক সুস্থ আছে। ১০ দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে। নিউজবাংলা, মানবজমিন
আপনার মতামত লিখুন :