সঞ্চয় বিশ্বাস: সাইবার দুনিয়ায় যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হচ্ছে তরুণ-তরুনীরা। কিছু ব্যাক্তি ইন্টারনেট যোগাযোগ মাধ্যম গুলোকে ব্যবহার করে অনৈতিক কাজ করছে। সাইবার ক্রাইমে ছড়িয়ে পড়ছে তরুণরা। সময় টিভি
কর্মক্ষেত্রে সীমা আক্তার ঢাকা উত্তরার রাজলক্ষী থাকেন। বাস্তব জীবনে ফেসবুকে হয়রানীর শিকার হন তিনি। আরফিন শুভ সাগর নামে ফেসবুক আইডি থেকে নিজের ছবি অনৈতিক ভাবে এডিট করে হয়রানি করা হয়। ছবি গুলো ফেসবুক টিকটকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে কিছু টাকা দাবি করে ছেলেটি । পরে ৯হাজার টাকার বিনিময়ে ছেলেটির সাথে বিষয়টি মিটিয়ে নেন।
জবা চাকমা (ছদ্মনাম) একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। শিক্ষাক্ষেত্রের সর্বোচ্চ স্তরে থাকা সত্ত্বেও একটি ক্ষেত্রে তার উচ্চশিক্ষাও গৌণ হয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি হয়রানির শিকার হন, শুধুমাত্র তার নামের সঙ্গে ‘চাকমা’ উপাধি থাকার কারণে। এমনকি ভয়ে, ক্ষোভে তিনি ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল থেকে চাকমা উপাধিটি সরিয়ে দেন।
জবা চাকমা বলেন, ‘যদি কোন পাবলিক পোস্ট এ কমেন্ট করতাম, তাহলে অনেকে খুঁজে খুঁজে আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতো। মেসেঞ্জারে নক করতো।’
মেসেঞ্জারে উত্তর না দিলে বা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ না করলে বিপত্তি আরও বাড়ত। তিনি বলেন, ‘জবাব না দিলে গালাগালি করতো, খারাপ ভিডিও পাঠাত, বাজে ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত করতো।’ একটা সময় তিনি মেসেঞ্জারে ও কমেন্টে জবাব দেয়া শুরু করলেন, বোঝানো শুরু করলেন। কিন্তু এতে হিতে বিপরীতই হয়; আরও বেশি ব্যক্তিগত আক্রমণ হতে থাকে। এসব কারণে তার পড়াশোনা ও ব্যক্তিগত জীবন উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটা সময় প্রচণ্ড হতাশায় ভুগতে শুরু করেন তিনি।
শুধু জবা চাকমা নয়, এমন অনেক শিক্ষার্থীই ইন্টারনেট দুনিয়ায় এমন ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছেন। একটা সময় তাদের অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন। মূলত এদেশে ধর্ম, বর্ণ কিংবা লিঙ্গের কারণেও সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের।
যদিও বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেই এখন সচেতন হচ্ছেন। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো কীভাবে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে তা বুঝতে পারছেন ব্যবহারকারীরা। তবে, সংখ্যাটা এখনও কম বলে জানালেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কার্যকর ব্যবহার নিয়ে কাজ করা ডিনেট এর যুগ্ম পরিচালক আসিফ আহমেদ তন্ময়। তার মতে, তরুণ প্রজন্মের মাঝে ডিজিটাল জগতে ইতিবাচক যোগাযোগের সংস্কৃতি তৈরি করতে সবার আগে দরকার সচেতনতা। এরমাধ্যমে নিজের জ্ঞাত বা অজ্ঞাতভাবে ঘটা এমন তীর্যক মন্তব্য বা কথা থেকে অন্যরা স্বস্তি পাবে।
তিনি বলেন, ‘সাইবার দুনিয়ায় কাউকে হুমকি দেয়া ফৌজদারি অপরাধ, এটা অনেকেই জানেন না। এই আইনগুলো সম্পর্কে অবহিত থাকলে কেউ যেমন নিজের অজান্তে আইন ভঙ্গ করা থেকে বিরত থাকতে পারবেন, তেমনি অন্য কেউ তার সাথে কোনো অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।’
ডিনেটের নির্বাহী পরিচালক এম. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘ডিজিটাল মিডিয়া মাঝে মাঝে অবমাননাকর এবং প্রতারণামূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধর্মের সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, এলজিবিটি সম্প্রদায় এবং মুক্ত চিন্তাবিদেরা অনলাইন মাধ্যমে হয়রানি ও হুমকির শিকার হয়ে থাকেন। এ সমস্যা সমাধানের জন্য বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী, সাংবাদিক এবং নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বসে এবং আলোচনার ভিত্তিতে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :