সঞ্চয় বিশ্বাস: মহাকাশে ঘুরে বেড়ানো ছোট বড় গ্রহাণু পিণ্ডের কোনোটি যদি সরাসরি এসে পৃথিবীতে আঘাত হানে, সেটা কীভাবে মোকাবেলা করা যায়, সেই কৌশল নিয়ে বিজ্ঞানীরা ভাবছেন বহুদিন ধরেই। অবশেষে তৈরি করতে সক্ষম হন ‘ডার্ট মহাকাশযান’। রয়টার্স
শব্দের চেয়ে বেশি গতিতে ছুটে গিয়ে পৃথিবী থেকে ৬৮ লাখ মাইল দূরের এক গ্রহাণু পিণ্ডকে সফলভাবে আঘাত করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার একটি ‘ডার্ট মহাকাশযান’।
এ পরীক্ষা চালানো হয় মোটামুটি ১৬০ মিটার চওড়া একটি গ্রহাণুর ওপর, যার নাম দেওয়া হয়েছে ডাইমরফোস। ২০২১ সালের নভেম্বরে সাড়ে ৩২ কোটি ডলারের এই মিশনে ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যানডেনবার্গ স্পেস ফোর্স ঘাঁটি থেকে ডার্ট মহাকাশযানটি নিয়ে মহাকাশের দিকে রওনা হয় স্পেসএক্স এর ফ্যালকন-নাইন রকেট। নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ডার্ট, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ কাটিয়ে সূর্যের চারদিকে নিজ কক্ষপথে ঘুরতে শুরু করে। গত সোমবার সফলভাবে ‘ডার্ট মহাকাশযান’ওই গ্রহাণুর গায়ে আছড়ে পড়ে এবং ধ্বংস হয়ে যায়।
মোটামুটি একটি ফুটবল স্টেডিয়াম আকারের ওই গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ডার্টের গায়ে বসানো ক্যামেরা প্রতি সেকেন্ডে একটি করে ছবি পাঠাতে থাকে পৃথিবীতে। পুরা দৃশ্য ওয়াশিংটন ডিসির বাইরে নাসার মিশন অপারেশন সেন্টার থেকে ওয়েবকাস্ট করা হয়।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, ঘণ্টায় প্রায় ১৫ হাজার মাইল বেগে ডার্টের ওই আঘাতে ডাইমরফোসেরগতি খুব সামান্য হলেও কমবে, সেটা হতে পারে প্রতি সেকেন্ডে এক মিলিমিটারের ভগ্নাংশ পরিমাণ। তাতেও এর কক্ষপথে সুক্ষ্ম পরিবর্তন আসবে, যা দীর্ঘমেয়াদে এর গতিপথ পাল্টে দেবে।
পৃথিবীর জন্য বিপদজনক গ্রহাণুর গতিপথ বদলে দেওয়ার এই কৌশলের নাম দেওয়া হয়েছে কাইনেটিক ইমপ্যাক্টর টেকনিক। নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডাইমরফোসের ক্ষেত্রে গতিপথের পরিবর্তন কতটা হল, তা মাপতে কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে। তবে ডার্ট মহাকাশযান পাঠিয়ে গ্রহাণুকে আঘাত করার অংশটুকু তারা সফলভাবেই শেষ করেছেন।
নাসার ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পাম মেলোরি বলেন, ‘নাসা কাজ করে মানবজাতির মঙ্গলের জন্য।… কে বলতে পারে, হয়ত এ প্রযুক্তিই একদিন আমাদের এই গ্রহকে রক্ষা করতে পারবে।’
আপনার মতামত লিখুন :