শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৭ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৫:২০ বিকাল
আপডেট : ২৭ জানুয়ারী, ২০২৩, ১১:১১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

উপহার দেওয়া হচ্ছে বিয়েতে

ফিলিপাইনে বিলাসী পণ্যের তালিকায় পেঁয়াজ

বিয়েতে ফুলের পরিবর্তে পেঁয়াজের তোড়া নিয়ে উপস্থিত কোনে

মিহিমা আফরোজ: ফিলিপাইনে এখন মাংসের দামের চেয়ে এক কেজি পেঁয়াজের দাম বেশি। দেশটিতে গত ডিসেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম প্রতি কিলোগ্রামে বেড়েছে প্রায় ৭০০ পেসো, যা প্রায় ১৩ ডলারের সমান। পেঁয়াজ ক্রয় করা এখন যেন তাদের কাছে বিলাসিতা। দেশটির শ্রমিকদের দৈনিক ন্যূনতম মজুরিকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে পেঁয়াজের দাম। বিবিসি 

ফিলিপিনো রান্নায় পেঁয়াজ একটি অপরিহার্য উপাদান, ঠিক ভারতের মতো। সেই পেঁয়াজ এখন দেশের জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে। গত মাসে ফিলিপাইনে মূল্যস্ফীতি পৌঁছেছে ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র কৃষি মন্ত্রণালয়কে নিজের হাতে রেখেছেন। তিনি খাদ্যের দাম বৃদ্ধির পরিস্থিতিকে 'জরুরি অবস্থা' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। চলতি মাসের শুরুতে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে লাল ও হলুদ পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেন তিনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিলিপাইনের অর্থনীতি মন্দা থেকে পুনরুদ্ধার শুরু হওয়ায় বাজারে চাহিদা বেড়েছে। এদিকে প্রতিকূল আবহাওয়ায় পেঁয়াজসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তাতে দাম আরও বেড়েছে।

আইএনজি ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ নিকোলাস মাপা জানান, গত আগস্টে খাদ্য সংকটের পূর্বাভাস দিয়েছিল কৃষি বিভাগ। এরপর দুইটি শক্তিশালী ঝড় ফিলিপাইনে আঘাত হানে, ফলে ফসলের যথেষ্ট ক্ষতি হয়। 

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ফিলিপিনোদের এতটাই হতবাক করেছে যে, গত এপ্রিল মাসে ইলোইলো শহরের মেয়ে লাইকা বিরে তার বিয়েতে ফুলের পরিবর্তে পেঁয়াজের তোড়া নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, বিয়ের পর ফুলগুলো শুকিয়ে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত ফেলে দেওয়া হবে। তাই আমি আমার বরকে জিজ্ঞাসা করলাম আমরা ফুলের পরিবর্তে পেঁয়াজ ব্যবহার করতে পারি কিনা। রসিকতার সুরে তার বর বলেন, এমন দিনে ফুলের চেয়ে পেঁয়াজ বেশি বাস্তবসম্মত। তাছাড়া বিয়ের পরেও আমাদের কাজে লাগবে।

মূল্যস্ফীতির এই চক্রের কারণে সেবুতে রাস্তার খাবারের দোকানগুলো ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ফিলিপাইনে পেঁয়াজের সংকটে এখন রেস্তোরাঁয় নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে লেখা, “বেরেস্তার সঙ্গে খাবার পরিবেশন করা হয় না”। রিজালদা মাউনেস সেবুর কেন্দ্রীয় শহরে একটি পিজ্জার দোকানের মালিক।

তিনি জানান, আগে তার দোকানে প্রতিদিন তিন থেকে চার কেজি পেঁয়াজ লাগত। এখন তারা আধা কেজির বেশি কেনেন না, আসলে এর বেশি কেনার সামর্থ্য তাদের নেই।

ফিলিপাইনের এই পেঁয়াজের দুর্ভিক্ষে অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ পাচার হচ্ছে। এই মাসের শুরুতে ফিলিপাইন এয়ারলাইন্সের ১০ জন ক্রু সদস্য তাদের লাগেজে প্রায় ৪০ কেজি পেঁয়াজ বহন করার জন্য তদন্ত করা হয়েছিল। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির বিষয়ে সাম্প্রতিক শুনানিতে ফিলিপাইনের সিনেটর গ্রেস পো বলেছেন, প্রথমে ছিল চিনি, এখন পেঁয়াজ। রান্নাঘরের বিষয়ে শুনানির মাধ্যমে আমাদের দিন শেষ হবে।

কান্টার ওয়ার্ল্ডপ্যানেল কনসালটেন্সির মেরি-অ্যান লেজোরাইন জানান, ফিলিপাইনের মতো দেশেও জলবায়ু পরিবর্তন খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। অধিকাংশ ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতা সীমিত। এখন তাদের শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার দিকেই নজর দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্য ঘাটতি ও দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।  

এমএ/এইচএ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়