শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

প্রকাশিত : ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ০৪:৫৫ দুপুর
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ০৪:৫৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দেশে ২০২৩ সালে অর্থনীতির মন্দা দেখা দেবে: গোলাম মসীহ

গোলাম মসীহ

শাহীন খন্দকার: ২০২৩ সালে অর্থনীতি সংকট প্রসঙ্গে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এর রাজনৈতিক সচিব সাবেক কুটনীতিবিদ গোলাম মসীহ বলেন- যুদ্ধ, মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানি সংকটের ধাক্কা রয়েছে। এই তিন সংকট নতুন বছরেও একই রকম থাকবে। তিনি বলেন, আমি অর্থনীতিবিদ না। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন- যুদ্ধ, মূল্যস্ফীতি এবং জ্বালানিসংকটের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হবে। দেখা দেবে অর্থনীতির মন্দা।

গোলাম মসীহ আরো বলেন, কোভিড-১৯ তিন বছর বিরতির পর অর্থনীতিতে প্রবেশ করছে চীন। তারা সরে এসেছে ‘জিরো কোভিড’ নীতি থেকে। নতুন বছরে চীনের অংশ গ্রহণের প্রভাব থাকবে বিশ্ব অর্থনীতিতে। অনেকেই মনে করছেন, এতে অর্থনীতি লাভবান হবে। আবার চীনের মাধ্যমে নতুন করে কোভিড ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। তাহলে এটাই হবে নতুন বছরের সবচেয়ে খারাপ ঘটনা।

বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরো বলেন, সামান্য কমলেও নতুন বছরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বজায় থাকবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রাক্কলন হচ্ছে, নতুন বছরে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমে সাড়ে ৬ শতাংশ হবে। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলো এই চাপ থেকে রেহাই পাবে না। তাদের গড় মূল্যস্ফীতি থাকবে ৮ দশমিক ১ শতাংশ। জ্বালানি ও শিল্পের কাঁচামালের দাম বেশিই থাকবে। ফলে আমদানি ব্যয় খুব একটা কমবে না।

এদিকে, আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অন্তত তিন মাস আগেই বলে দিয়েছিল, নতুন বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২২ সালে যা ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ। তবে সংস্থাটি মনে করে, প্রবৃদ্ধির হার আরো কমে ২ শতাংশের নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

অন্যদিকে, ইউরোপীয় দেশগুলোর সংগঠন ওইসিডির মতে, প্রবৃদ্ধি হবে আরো কম, অর্থাৎ ২ দশমিক ২ শতাংশ। এর অর্থ হচ্ছে নতুন বছরে বিশ্ব অর্থনীতি নিশ্চিত করেই মন্দায় ঢুকে যাবে। সাধারণত পরপর দুটি প্রান্তিকে অর্থনীতিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হলে তাকে মন্দা বলা হয়। আর এর সঙ্গে যুক্ত হবে পণ্যের উচ্চ মূল্য ও উচ্চ সুদহার। মূলত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরো অঞ্চলের পরিস্থিতি এ রকমই থাকবে। তবে চীনের প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারে।
 
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে আইএমএফ পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড বর্ধিত ক্রেডিট সুবিধা (ইসিএফ) বা বর্ধিত তহবিল সুবিধার (ইএফএফ) অধীনে প্রায় ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আরএসএফ তহবিলের আওতায় ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে। যার ৪২ মাস ধরে ধাপে ধাপে এই ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করা হবে। এতো শর্তে এই ঋণের  প্রয়োজন ছিলো না।

জাতীয় পার্টির নেতা গোলাম মসীহ বলেন, কুটনৈতিকভাবে সরকার আমাদের বন্ধু প্রতিমদেশ গুলোতে যোগাযোগ করলে শর্তবিহীন ঋণ পেতো। কুটনীতিবিদ আরো বলেন, বিশেষ করে সৌদি আরব সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার বিনা শর্তেই দিতেন বলে জানান তিনি। আমরা কেনো আইএম এফ এর কাছে যাবো।

সব মিলিয়ে নতুন বছরের বড় ঘটনা হচ্ছে বিশ্ববাণিজ্য চীনের অংশগ্রহণ। এর আগে চীনের শেষ সরব উপস্থিতি ছিল ২০১৯ সালে। তখন ডোনাল্ড ট্রাম্প ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সময়টা ছিল বাণিজ্য যুদ্ধের। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখন জো বাইডেন। নতুন পরিস্থিতিতে এই দুই বড় অর্থনীতির দেশের মধ্যকার সম্পর্কের ওপরও নির্ভর করছে নতুন বছরের অর্থনীতির গতিপথ।

বাংলাদেশের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেশের অর্থনীতির প্রধান ঝুঁকি। ঝুঁকির পাঁচটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে ডব্লিউইএফ। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে আরো যে চারটি ঝুঁকির খাত তারা চিহ্নিত করেছে, সেগুলো হলো ঋণ সংকট, উচ্চ পণ্যমূল্যের ধাক্কা, মানবসৃষ্ট পরিবেশগত ক্ষতি ও সম্পদের জন্য ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা। দেশে এক বছর ধরে মূল্যস্ফীতি লাগামছাড়া। ২০২১ সালের নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর থেকে মূল্যস্ফীতি মাত্রা ছাড়িয়েছে। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০২২ সালের আগস্টে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। পরের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে তা কিছুটা কমে ৯ দশমিক ১ শতাংশ হয়। ওই দুই মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিল।

পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালের আগস্টে গত ১১ বছর ৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ২০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। ২০১১ সালের মে মাসের পর মূল্যস্ফীতি আর কখনো ৯ শতাংশের বেশি হয়নি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এখন অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতির হার কমার সম্ভাবনা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের মূল্যস্ফীতি অনেকাংশে আমদানি নির্ভর। বিশ্ব অর্থনীতির যে বাস্তবতা, তাতে ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে মূল্যস্ফীতি হ্রাসের সম্ভাবনা তেমন একটা নেই।

তিনি মনে করেন, অনিশ্চয়তার কারণে রপ্তানিকারকেরা আগে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে তারপর রপ্তানি করছেন। সেই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। আবার দেশের আমদানি কয়েকটি গোষ্ঠীর হাতে সীমাবদ্ধ। তারা যখন ঝুকি দেখেন, তখন আমদানি কমিয়ে দেন, পাছে বিক্রি না হয় এই ভয়ে। সে কারণেও বাজারের ওপর চাপ পড়ে।

তিনি আরো বলেন, খাদ্য মূল্যস্ফীতির বড় কারণ ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি। সেই সঙ্গে আছে জ্বালানির উচ্চ মূল্য। শীতকাল শেষ হলে ইউরোপে জ্বালানির চাহিদা কিছুটা কমবে। কিন্তু তা এতটা কমবে না যে, মূল্যস্ফীতি এক ধাক্কায় অনেকটা কমে যাবে। তবে অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন ভালো অবস্থায় আছে। সারের সরবরাহ ঠিক থাকলে দেশি খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি হবে না।

এদিকে শ্রীলঙ্কার ঋণসংকটের পর বাংলাদেশ ঋণসংকটে পড়বে কি না, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০২২ সালে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। জনমনে এক ধরনের আশঙ্কা তৈরি হয়, বাংলাদেশ যেভাবে বিদেশি ঋণে বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে, তাতে শ্রীলঙ্কার মতো ঋণসংকট হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। কারণ আমাদের ভূমি উর্বর। আর তাই খাদ্যের কোন সংকট হবে না। তাই শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা আপতত দেখছি না।

গোলাম মসীহ বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ২৭৮ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ২০২৯-৩০ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ ৫১৫ কোটি ডলার খরচ হবে। এরপর ঋণ পরিশোধ কমতে থাকবে।

তিনি বলেন, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতির গতি আরো কমবে। মন্দা না হলেও প্রবৃদ্ধির ধীরগতির কারণে মানুষের আয় কমে যাবে। সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হারও একেবারে কমে যাবে না। বিশ্ব অর্থনীতিতে এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের গায়েও তার আঁচ লাগবে। তাই এখনই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এবং বন্ধু প্রতিম দেশগুলোতে কুটনৈতিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়সহ অর্থ মন্ত্রনালয় যৌথভাবে কুটনৈতিক তৎপরতার মধ্যদিয়ে সংকট সমাধানে উদ্যোগ নিলে সরকার সফল হবে বলেও তিনি মনে করেন। সম্পাদনা: মাজহারুল ইসলাম

এসকে/এমআই/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়