এম এম লিংকন: বিএনপি অনেক বড় বড় কথা বলে এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে ভয় পাচ্ছে মন্তব্য করে যুবলীগ সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, আপনারা (বিএনপি) না ১০ লাখ লোক জড়ো করবেন? অন্তত পক্ষে ৫ লাখ তো হবে। তাহলে ভয় কিসের? আমি আগেও বলেছি এরা মিথ্যাবাদীর দল, প্রতারণা করে জনগণের সঙ্গে। তবে রাজপথে শেখ মনির যুবলীগ, জনগণের ওপর বিএনপির জুলুম অত্যাচার ও প্রতারণার জবাব দিতে সর্বদা প্রস্তুত। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ শেখ ফজলুল হক মনির ৮৪ তম জন্মদিন (রোববার, ৪ ডিসেম্বর) উপলক্ষে শনিবার (৩ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এ এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
একটা তথাকথিত বিরোধী দল বিএনপি- জামায়াত আজ দেশবিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত মন্তব্য করে তিনি বলেন, কীভাবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা রোধ করা যায়, শেখ হাসিনার জনবান্ধব সরকারকে পরাস্ত করে কীভাবে ক্ষমতায় আসা যায় সেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তারা। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে একটা মৌলবাদী, ব্যর্থ রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করা।
রাজনৈতিক যুদ্ধে আমাদের পরাজিত করতে পারে এমন শক্তি বাংলাদেশে সহজে জন্মাবে না দাবি করে শেখ মনির ছেলে বলেন, কিন্তু আমাদের সমাজনীতি, অর্থনীতি যদি ব্যর্থ হয়ে যায় তাহলে রাজনীতিটাই টিকবে না। অর্থনৈতিক মুক্তির দ্বারপ্রান্তে আমাদের এনে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এখন আমরা যদি আমাদের প্রকট সামাজিক সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণ না করি তাহলে আমাদের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অর্জন মুখ থুবড়ে পড়বে।
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ গত তিন বছর যে মানবিক সমাজ ব্যবস্থা গঠনের আন্দোলন করছে সেটা সফল এবং সার্থক সমাজনীতি প্রতিষ্ঠার একটা বড় ধাপ দাবি করে তিনি বলেন, তাই এই বিজয়ের মাসে অঙ্গীকার করতে চাই যে, আমরা জনগণের পাশে থাকার এই মানবিক এবং সামাজিক আন্দোলন অব্যাহত রাখব।
শেখ ফজলুল হক মনি আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ততার প্রতীক স্বরণ করিয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, ১৫ আগস্টের প্রথম শহীদ হিসেবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে আনুগত্য ও বীরত্বের অবিনশ্বর উদাহরণ রেখে গেছেন তিনি। শেখ মনির অনুসারী এবং সংগঠনের কর্মী হিসেবে আমরাও গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জন্য সর্বোচ্চ আত্মাহুতি দিতে প্রস্তুত যুবলীগের নেতা-কর্মীরা।
শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক এবং ন্যায়বিচার সম্পন্ন জাতিরাষ্ট্র নির্মাণের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই বলে উপলব্ধি করতেন শেখ মনি। ঠিক একইভাবে শেখ মনির উত্তরসূরি হিসেবে আমরা আজকের যুবলীগ মনে করি, একটি অসাম্প্রদায়িক , প্রগতিশীল, উন্নয়নশীল, এবং আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই।
শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, শেখ মনির জন্মদিন আমার কাছে ব্যক্তিগত পর্যায়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিকভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ। ব্যক্তিগতভাবে আমার বাবা শেখ মনিকে আমি খুব কম পেয়েছি। মাত্র ৫ বছর, তারমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ, সাংবাদিকতা, লেখালেখি, রাজনীতি, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠন সবমিলিয়ে বাবা ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটাতেন। কিন্তু যতটুকু সময় পেয়েছি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ স্মৃতি হিসেবে তা চিরভাস্বর।
বাবার স্মৃতি চারণ করে তিনি বলেন, বাংলার বাণীতে বাবার ব্যক্তিগত লাইব্রেরি দেখে অনুমান করা যায় যে, বাবা জ্ঞান চর্চা করতে ভালবাসতেন এবং একজন রুচিশীল পাঠক ছিলেন। বাংলা সাহিত্যের ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ব সাহিত্যের প্রতি তার অনুরাগ তার পাঠাগার দেখলে বুঝা যায়। বাবা বাংলাদেশে একটা জ্ঞানভিত্তিক প্রগতিশীল, বৈষম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থা সৃষ্টিতে আগ্রহী ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, বাবার যেই বিষয়টা আমাকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দেয়, সেটা হলো বাবার কর্ম ও বাবার মমত্ববোধ। তিনি আত্মকেন্দ্রিক রাজনীতিবিদ ছিলেন না, নেতা-কর্মীদের প্রতি ছিল তার অপরিসীম দরদ। একজন কর্মী মারা যাওয়ায় আমি বাবাকে শিশুর মতো কাঁদতে দেখেছি।
শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, শেখ মনির যে বিষয়টা নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমি সবচেয়ে বেশি গর্ববোধ সেটা হলো একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার ভূমিকা।
একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শেখ মনি রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আজ ৩ ডিসেম্বর, ৭১ সালের ভারতের সশস্ত্র বাহিনী এই দিনে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে এবং পাকিস্তানিদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এর আগে ২৩ নভেম্বর জেনারেল উবানের নেতৃত্বে দেশের পূর্বাঞ্চলে শুরু হয় ‘অপারেশন ঈগল’। শেখ মনি বিএলএফের কয়েকজন সদস্য নিয়ে তাদের সঙ্গে তাতে যোগ দিয়ে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন।
এমএমএল/এনএইচ
আপনার মতামত লিখুন :