শিরোনাম
◈ প্রার্থীদের ঋণতথ্য যাচাইয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক ◈ জাকির নায়েকের বাংলাদেশে আসা নিয়ে যা বললেন ধর্ম উপদেষ্টা (ভিডিও) ◈ সাংবাদিককে কনুই মারলেন বিএনপি নেতা সালাম, ভিডিও ভাইরাল ◈ বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসা ইস্যুতে যে পদক্ষেপ নিল ভারতীয় দূতাবাস ◈ গণভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানা যাবে সোমবার! ◈ দুর্দান্ত ব‌্যা‌টিং‌য়ে অঙ্কনের শতক, ঘুরে দাঁড়ালো ঢাকা বিভাগ  ◈ ৯১ সালে জামায়াত সমর্থন না দিলে বিএনপি এ পর্যায়ে আসতো না: তাহের ◈ ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ নিয়ে বিএনপি কী কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে ◈ সংসদ নির্বাচনের পর ফেব্রুয়ারিতেই একুশে বইমেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত ◈ মনোনয়ন নয়, দল ও দেশ বড়—মনোনয়নবঞ্চিতদের প্রতি তারেক রহমানের আহ্বান

প্রকাশিত : ০১ নভেম্বর, ২০২৫, ০২:২৭ দুপুর
আপডেট : ০২ নভেম্বর, ২০২৫, ০৮:৩৮ রাত

প্রতিবেদক : আর রিয়াজ

শেখ হাসিনার তিন আন্তর্জাতিক সাক্ষাৎকারে আলোড়ন: নির্বাচন বয়কট প্রসঙ্গে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া

বিবিসি নিউজ: একইদিনে তিনটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর এ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশ নিতে দেওয়া কিংবা না দেওয়ার প্রসঙ্গে তার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকে, যার মধ্যে আছেন রাজনৈতিক দলের নেতারাও।

তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনই বলছেন, পরপর তিনটি নির্বাচনে শেখ হাসিনা নিজেই যেখানে জনসাধারণের ভোটাধিকার হরণ করেছেন, সেখানে তার মুখে এই ধরনের কথা "শোভা পায় না"।

অন্যদিকে বুধবার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে নির্বাচন ঘিরে 'সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি' মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেছেন, "নির্বাচন বানচালে ভেতর থেকে, বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাটো নয়, বড় শক্তির কাছ থেকে আক্রমণ চলে আসতে পারে। এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে"। সেক্ষেত্রে এই চ্যালেঞ্জের বড় একটি অংশজুড়েই আওয়ামী লীগ থাকবে, এমনটাও বলেছেন কোনো কোনো রাজনীতিবিদ।

নির্বাচন নিয়ে যা বলেছেন শেখ হাসিনা

গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত পাঁচই অগাস্ট দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার প্রায় ১৫ মাস পর তিনটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কাছাকাছি সময়ে তার সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়।

ইমেইলের মাধ্যমে নানা প্রশ্নের জবাব দেন তিনি, যেগুলোর একটি ছিল বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন।

রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগকে অংশ নিতে দেওয়া না হলে দলটির লাখ লাখ সমর্থক আগামী বছরের নির্বাচন বয়কট করবে।

পরবর্তী সরকারের অবশ্যই নির্বাচনি বৈধতা থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "একটি কার্যকর রাজনৈতিক সিস্টেম চাইলে আপনি লাখ লাখ মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারেন না"।

"আমরা আওয়ামী লীগের ভোটারদের অন্য দলকে সমর্থন করতে বলছি না। আমরা এখনো আশা করি শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং আমরা নিজেরাই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবো", বলেন তিনি।

তবে পরপর তিনটি নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর মুখে এমন কথা সাজে কি না এমন প্রশ্ন তুলেছেন অন্তত চারটি রাজনৈতিক দলের নেতারা।

'উনি কতগুলো নির্বাচন প্রতিনিধিত্বমূলক করেছেন?'

বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মতে, কে ভোট দেবে না দেবে এটা বাংলাদেশের জনগণের ব্যাপার।

"কেউ যদি মনে করে, বাংলাদেশের মালিকানা কেউ নিয়ে নিয়েছে, এটা তো সঠিক হবে না"। সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনার বক্তব্যকে ব্যক্তিগত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভোটাররা কাকে ভোট দেবে, না দেবে – গণতান্ত্রিক দেশে এটা তাদের নিজেদের অধিকার।

দলটির আরেকজন নেতা হাসান মাহমুদ টুকু মনে করেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচন বয়কট করলে তার খুব একটা প্রভাব পড়বে না।

এ নিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ বিবিসি বাংলাকে বলেন, "উনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তার কতগুলো নির্বাচন উনি প্রতিনিধিত্বমূলক করেছেন?"

"ভোটাধিকার হরণের নিকৃষ্ট নজির স্থাপন করে জনরোষের মুখে পালিয়ে গিয়ে এই কথা বলা ওনার মুখে শোভা পায় না", বলেন তিনি। অনেকটা একই কথা বলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।

অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন সকলের আকাঙ্ক্ষিত হলেও শেখ হাসিনা নিজে "তিন-তিনটা নির্বাচনকে চূড়ান্ত যে তামাশা-প্রহসনে পর্যবসিত করেছিলেন, এ ব্যাপারে তার বা তার সরকারের সামান্যতম উপলব্ধি" দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

একইসাথে এত লম্বা সময় ধরে আত্মোপলব্ধির সময়-সুযোগ পাওয়ার পরও শেখ হাসিনার কোনো সাক্ষাৎকারে তার অতীতের কোনো কর্মকাণ্ড নিয়ে অনুশোচনার লেশমাত্র না থাকায় "ভবিষ্যতে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সমাজে তাদের (আওয়ামী লীগের) অংশগ্রহণ ঝুঁকির মধ্যে আছে" বলেই মনে করেন এই বামপন্থি নেতা।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিষয়ে শেখ হাসিনার মন্তব্যকে যথার্থ মনে করছেন না গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। তার মতে, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তারা (আওয়ামী লীগ) জনগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন।

"ফ্যসিবাদী শাসনের পতনের পর সেসময় অন্যায়-অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িতরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে এবং সাধারণ সমর্থকরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন দলে যুক্ত হয়ে গেছে," বলেন এই রাজনীতিবিদ।

২০১৪ সালে নির্বাচনের আগেই ১৫৪টি আসনে প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা কিংবা ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের রাতেই ব্যালটবাক্স ভর্তি করে কারচুপির নির্বাচনের অভিযোগ উঠেছিল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে।

সেই উদাহরণ টেনে মি. নুর বলেন, "আওয়ামী লীগ বা কোনো রাজনৈতিক দল ছাড়া যে নির্বাচন হতে পারে, সেই নজিরতো শেখ হাসিনাই তৈরি করেছিলেন। সেখানে এই কথা বলা তার যুক্তিতেও আসে না"।

অনেকটা একই বক্তব্য জাতীয় নাগরিক পার্টি – এনসিপিরও। দলটির মতে, "কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া যায় না"।

"দেশবাসী গত তিনটি কথিত নির্বাচনে ভোটদানের সুযোগ বঞ্চিত হয়েছে। দেশের মানুষ যদি আগামী নির্বাচনে উৎসাহের সাথে ভোট দেয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তাহলেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে", বলেন দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব ও মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন।

সেক্ষেত্রে ডাকসু নির্বাচনের উদাহরণ টানেন এই এনসিপি নেতা। বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের না থাকা সেখানে যেমন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো অন্তরায় হয়নি, একই চিত্র আগামী জাতীয় নির্বাচনেও ঘটবে।

"সাধারণ মানুষ ভোট দিয়ে বুঝিয়ে দেবে যে অংশগ্রহণমূলন নির্বাচনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ আর কোনো ফ্যাক্টর না"।

প্রসঙ্গত, গত মে মাসে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সব সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।

সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মূলত জাতীয় নাগরিক পার্টির একজন নেতা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করার পরের পরিস্থিতিতেই সরকার এই ঘোষণা দিয়েছিল।

এর আগে গত বছর নভেম্বরে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছিলো মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই সরকার।

নির্বাচন ঘিরে শঙ্কা

বড় কোনো শক্তি নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করতে পারে বলে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন খোদ প্রধান উপদেষ্টা। আর তা অতিক্রম করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রকাশ এবং এ নিয়ে চলমান আলোচনার মধ্যেই প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এসব কথা জানানো হয়। নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের কথা জানিয়েছেন রাজনৈতিক দলের নেতারাও।

এনিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ও মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন বিবিসি বাংলাকে বলেন, "এই নির্বাচন ঠেকাতে সবার আগে চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ"।

"সন্ত্রাসী এই সংগঠন সন্ত্রাসী আক্রমণ হোক কিংবা অনলাইনে বিভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি করে, গুজব ছড়িয়ে এক ধরনের অস্থিরতা কিংবা সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে অনেক কিছু করতে চাইতে পারে", বলেন তিনি।

কিন্তু অগণতান্ত্রিক কোনো ব্যবস্থা বা ফ্যাসিবাদকে ফিরতে না দেওয়ার প্রশ্নে গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি সম্মিলিতভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকলে এটা মোকাবিলা করা কোনো সমস্যাই হবে না এবং নির্বিঘ্নেই নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ নিয়ে শঙ্কার কথা বলছিলেন নুরুল হক নুরও।

তার মতে, গত ১৬ বছর যারা ক্ষমতার সাথে যুক্ত যারা এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছে, তাদের কাছে প্রচুর পাচার করা অর্থ আছে, যা দিয়ে গত এক বছর ধরেই তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।

শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া কিংবা উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদানের সুযোগ করে দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে এসব কাজে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত তাদের সাহায্য করছে বলেও দাবি করেন তিনি। বলেন, দেশটি নিজের স্বার্থে আওয়ামী লীগকে যেভাবে ব্যবহার করতে পেরেছে, অন্যদের তা পারেনি।

"ফলে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে কামব্যাক করাতে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে দলটি কিছুটা হলেও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করতে পারে"।

এছাড়াও ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দলগুলোর মধ্যে যে ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে সেই সুযোগও আওয়ামী লীগ কাজে লাগাতে পারে বলে সতর্ক করেন মি. নুর।

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সচেতন থাকলে এই ধরনের সমস্যা সমাধান করা যাবে বলে মনে করেন তিনি।

বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ অবশ্য মনে করছেন, "সরকার নিজেই ঝামেলা তৈরি না করলে" এমন কিছু হওয়ার সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে ঐকমত্য কমিশনের বিষয়ে সরকারের অবস্থানের প্রসঙ্গও টানেন তিনি। বলেন, "সরকারই জাতির মধ্যে অনৈক্য তৈরি করছে"।

তবে বিএনপি নেতা মি. খসরু বিষয়টিকে কিছুটা ভিন্নভাবেই দেখছেন। তার মতে, লম্বা সময় ধরে এদেশের কেউ ভোট দিতে পারেনি। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম গণতান্ত্রিক পরিবেশে ফিরে যেতে চায়, ভোট দিতে চায়।

"সেটাকে বাধাগ্রস্ত করে কেউ খুব একটা সুবিধা করতে পারবে, আমি বিশ্বাস করি না"।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়