শিরোনাম
◈ পাল্টা শুল্ক আরও কমার ইঙ্গিত দিলেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা ◈ গার্ডিয়ানে টিউলিপের সাক্ষাৎকারের ‘ছয়টি উল্লেখযোগ্য বিষয়ে’ বার্গম্যানের অভিমত ◈ পদ্মা-মহানন্দার ভাঙনে হুমকিতে জনপদ, সরানো হচ্ছে নারায়ণপুর ইউপি ভবন, স্থায়ী বাঁধের দাবি ◈ ভাইরাল হওয়াই কাল হল ফুটপাতের সেই বুফে বিক্রেতার! (ভিডিও) ◈ ভাইসা আসি নাই, কথা বলার সময় মুখ সামলায় বলবা : আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (ভিডিও) ◈ ফোন হারিয়ে রেলস্টেশনে বিদেশির কান্না ভাইরাল, অভিযোগ পায়নি পুলিশ (ভিডিও) ◈ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে সম্মতি, তবে পিআর পদ্ধতিতে ভোটের দাবিতে অটল জামায়াত ◈ রিজার্ভ এখন ৩০.২৫ বিলিয়ন ডলার ◈ মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা, গুরুত্ব পাবে যেসব বিষয় ◈ বাংলাদেশের মেয়েরা যেভা‌বে অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপের মূলপর্বে 

প্রকাশিত : ০৯ আগস্ট, ২০২৫, ১১:৪৩ দুপুর
আপডেট : ১১ আগস্ট, ২০২৫, ০৯:০০ সকাল

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

জুলাই সনদের প্রশ্নে বিএনপির বিরোধিতা জামায়াত ও এনসিপির, সংকট কোথায়?

এল আর বাদল : জাতীয় ঐকমত্য কমিশনেরই মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত করা যায়নি সংস্কারের জুলাই সনদ। এই সনদ চূড়ান্ত হলে এর বাস্তবায়ন কিভাবে হবে, এনিয়েও বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য প্রকাশ্যে এসেছে।

প্রশ্ন উঠছে, সংস্কার প্রশ্নে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না কেন, সংকটটা কোথায়? তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বলছে, সনদ চূড়ান্ত করা ও এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি ঠিক করতে তারা আবারও আলোচনা শুরু করবে আগামী সপ্তাহে। --- সূত্র, বি‌বি‌সি বাংলা

এ পর্যায়ে প্রথমে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিশন। এরপর ওই আলোচনাকে ভিত্তি হিসেবে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় বৈঠক করে সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জুলাই সনদ তৈরি করতে দফায় দফায় দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসেছে ঐকমত্য কমিশন এবং দলগুলোর কাছে একাধিকবার সনদের খসড়াও পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ গত ২৮শে জুলাই সনদের খসড়া পাঠানো হয় দলগুলোর কাছে। দলগুলোও তার জবাব দিয়েছে। তবে আগামী দুই একদিনের মাঝে দলগুলোর কাছে ফের সনদের পূর্ণাঙ্গ খসড়া পাঠানো হবে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

এদিকে, চলতি বছরের ১৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় মাসের জন্য কাজ শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তাই, স্বভাবতই কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ১৫ই অগাস্ট।

প্রাথমিকভাবে লক্ষ্য ছিল, চলতি বছরের জুলাই মাসের মধ্যে সনদ চূড়ান্ত করা হবে। কিন্তু তা হয়নি, বরং মেয়াদের একদম দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে কমিশন। এখন যদি ঐকমত্যে পৌঁছে চূড়ান্ত সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর করা সম্ভব না হয়, তখন কী হবে, এই আলোচনাও রয়েছে।

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিয়ে মূল সংকট 

গত বছরের আটই অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর এই সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কার আনার জন্য নানারকম উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই লক্ষ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ মোট ১১টি কমিশন গঠন করা হয়।

কমিশনগুলো রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব দেয়, যা নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে ৩০টি রাজনৈতিক দলের সাথে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন।

কমিশনগুলোর প্রস্তাবিত যেসব সুপারিশ বাস্তবায়নে সকল রাজনৈতিক দল একমত হবে, সেগুলো নিয়ে 'জুলাই জাতীয় সনদ' তৈরি হওয়ার কথা রয়েছে।

কিন্তু দলগুলো সকল প্রস্তাবের সাথে একমত না হওয়ায় সনদের খসড়া তৈরি হলেও এখনো পর্যন্ত এটিকে চূড়ান্ত করা যায়নি। ওই খসড়ায় বলা আছে, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে দলগুলো।

এই দুই বছরের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের বিষয়ে বিএনপি'র আপত্তি না থাকলেও কিছু দলের এখানে আপত্তি রয়েছে। বিশেষ করে, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই বাস্তবায়ন চাইছে।

কারণ সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হলে, তা শেষপর্যন্ত কতটা বাস্তবায়ন হবে এই প্রশ্ন জামায়াত ও এনসিপির। তারা চায়, জুলাই সনদকে একটি আইনি ভিত্তি দেওয়া হোক।

একমত না হলে কী হবে?

যেহেতু ঐকমত্য কমিশনের সময়সীমা প্রায় শেষের দিকে, সেক্ষেত্রে এই সময়ের মাঝে যদি দলগুলো চূড়ান্ত সনদের বিষয়ে একমত না হয়, তাহলে কী হবে?

এর উত্তরে জামায়াত নেতা মি. আকন্দ বলেন যে, এখানে সরকারের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। "জুলাই সনদ কোনও একক দলের বিষয় নয়" উল্লেখ করে তিনি বলেন আগামী সপ্তাহে কমিশন দলগুলোকে ডাকলেও সব বিষয়ে একমত হওয়া নিয়ে "এখনও সংশয় আছে।"

"যদি একমত হওয়া না যায়, কাদের জন্য একমত হওয়া গেল না, সেগুলোও সনদে উল্লেখ থাকবে। এই সনদ দ্রুত স্বাক্ষর করে ঘোষণা দিয়ে এর ভিত্তিতে নির্বাচন হতে হবে" বলেন মি. আকন্দ।

এখানে জামায়াতের দিক থেকে কোনও ছাড় দেওয়ার বিষয় আছে? উত্তরে তিনি বলেন, "আমরা এমন কোনও বিষয় ধরি নাই, যেখানে জামায়াতের স্বার্থ জড়িত। সবকিছু জাতীয় স্বার্থে বলেছি। এখানে জামায়াতের ছাড় দেওয়ার কোনও বিষয় নাই।

যেমন, আমরা বলেছি যে একই ব্যক্তি একই সময়ে প্রধানমন্ত্রী ও সরকার প্রধান থাকতে পারবেন না। এখানে একটি জাতীয় দল একমত হচ্ছে না। তাহলে কী করা যাবে? সরকারকে এখানে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দিতে হবে। জনগণের সমর্থন আদায়ে প্রয়োজনে গণভোট নিতে হবে। এই উদ্যোগ যদি সরকার না নেয়, তাহলে এটা সরকারের ব্যর্থতা" বলেন জামায়াত নেতা মি.আকন্দ।

এদিকে, এনসিপি নেতা আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, দলীয় পদে প্রধানমন্ত্রীর না থাকা, দুই সংসদের নির্বাচিত প্রার্থীদের গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতির নির্বাচনের মতো কিছু বিষয়ে একমতে আসা না গেলে এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না।

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, তারা সবসময় জুলাই সনদ নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য রাজি। তবে কমিশন চূড়ান্ত জুলাই সনদ পাঠালে "আলোচনা অনুযায়ী সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেই" বিএনপি তাতে স্বাক্ষর করবে।

যেকোনও সাংবিধানিক ও আইনি প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের সম্মতি আছে। এর বাইরেও যদি কোনও প্রক্রিয়া কেউ প্রস্তাব করে, সে বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। আমরা নিশ্চয়ই আলোচনায় অংশগ্রহণ করবো," জানান এই বিএনপি নেতা।

একদিকে ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে, অপরদিকে এখনও দলগুলো একমতে আসতে পারছে না। তাহলে এই সনদ শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হবে কীভাবে?

এ প্রসঙ্গে কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বিবিসিকে বলেন, কমিশনের পরবর্তী কাজ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ করা। তবে দলগুলোকেই বাস্তবায়নের পথ খুঁজে বের করতে হবে। ঐকমত্য কমিশন অনুঘটকের কাজ করতে পারে।

"সনদে যেসমস্ত জায়গায় ঐকমত্য হওয়ার, তা হয়েছে। এরপর আর এটা নিয়ে নতুন কিছু করার আমরা চেষ্টা করছি না। যেগুলো নোট অব ডিসেন্ট আছে। ওগুলো নিয়েই সনদ হবে," জানান তিনি এবং আরও বলেন, "সব বিষয় নিয়ে ঐকমত্য তৈরি করতে গেলে তো বছরের পর বছর লেগে যাবে। এগুলো পরামর্শ হিসাবে থাকলো। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে এগুলো দেখবে ও তার ভিত্তিতে সরকার পরিচালনা করবে বলে আমরা আশা করছি" বলেন আলী রীয়াজ।

তবে স্বাক্ষর কবে নাগাদ হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলেননি তিনি। "এটি নির্ভর করছে, চূড়ান্ত খসড়া ও দলগুলোর প্রতিক্রিয়ার ওপর। আমরা চাই দ্রুততার সাথে করতে," বলেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়