শিরোনাম
◈ কবে দেশে ফিরবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান? (ভিডিও) ◈ যুবককে কুপিয়ে হত্যা, কেটে নিয়ে গেল হাত (ভিডিও) ◈ বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ: সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত ◈ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হলেন তাজুল ইসলাম ◈ ‘দেহ ব্যবসা’র ভিডিও প্রতিবেদন ইস্যুতে সোহানা সাবার হুঁশিয়ারি ◈ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ইতালির মোনফ্যালকনে ◈ নিউইয়র্কে ইউনূস-মোদি সাক্ষাতে ঢাকার অনুরোধ, এখনো চুপ দিল্লি ◈ হদিস মিলছে না পলকের দুটি আগ্নেয়াস্ত্রের ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক ও সময়োপযোগী: ফখরুল ◈ ট্রাক থামিয়ে চাঁদাবাজি, যুবদল নেতাকে পুলিশে দিলো সেনাবাহিনী

প্রকাশিত : ২২ নভেম্বর, ২০২৩, ০১:১৮ রাত
আপডেট : ২২ নভেম্বর, ২০২৩, ০১:১৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

খেলা নিয়ে বিরোধ ও বৈরিতাকে খাটো করে দেখবেন না

সেজান মাহমুদ

সেজান মাহমুদ: বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার জন-মানসের সিরিয়াস সাইকোএনালিসিস হওয়া দরকার। এটা উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের ভাবা উচিত। কারণ ধীরে ধীরে এটা সাম্প্রদায়িক রূপ নিচ্ছে এবং বৈরি প্রতিবেশিতে পরিণত হচ্ছে। আমার নিজের কিছু সাইকোএনালিসিস আছে, কিন্তু এতো কম পরিসরে তা বোঝানো মুশকিল হবে। কিছু গালিগালাজও শুনতে হবে। তবু কয়েকটা কথা বলি। এক. আপনাদের মনে আছে কি না আমি একবার লিখেছিলাম যে, আমি উনিশটা বিয়ের সফল ঘটক, নিজেরটা ধরলে কুড়িটা। কিন্তু বিয়ের পর কিছু দম্পত্তি খুব ভালো থাকা সত্ত্বেও আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়েছে কোনো ঝগড়া বা কারণ ছাড়া। কেন এমন করলো তাঁরা তা জানতে এক হার্ভার্ড মনোবিজ্ঞানীর শরণাপন্ন হই। তিনি ব্যাখ্যা করলেন, এঁরা যখন নিজেদের সুখী জীবনের জন্য মনে করে অন্য কারো অবদান আছে তখন কৃতজ্ঞ হবার পরিবর্তে নিজের ইগোর জন্যে ডিনায়েলে চলে যায়। তাই সামনে এলেই তো মনে পড়ে, তা এড়াতে নিজেরা দূরত্ব তৈরি করে। আর যাঁরা ভালো মানুষ তাঁরা মনে রাখে ও কৃতজ্ঞ হয় এই অবদানের জন্যে। 

এই গল্পের সঙ্গে বাংলাদেশের বাঙালির সম্পর্ক কী? তাহলো এই বিয়ের মতোই যখনই তারা মনে করে যে ইন্ডিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে নিজেরা যুদ্ধে জড়িয়েছে, মিলিয়নস মানুষদের আশ্রয় দিয়েছে, খাদ্য দিয়েছে ও আন্তর্জাতিক লবি করেছে, যা না করলে বাংলাদেশকে আজ প্যালেস্টাইনের মতো ধুকে ধুকে মরতে হতো তখন কিছু মানুষ নিজেদের ইগোর কাছে ছোট হয় এবং অকৃতজ্ঞের মতো ডিনায়েলে ভোগে, ইন্ডিয়া বিরোধিতা করে। 

দুই. ইন্ডিয়া নিজের স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। কিন্তু বিশাল ঝুঁকিও নিয়েছে। এই স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হতো না, এমনকি ইন্ডিয়াও কিছু করতে পারতো না যদি না শেখ মুজিবের মতো নেতা, ১৯৭১ সালের বিশ্বে চূড়ান্ত জনপ্রিয়তা নিয়ে ভোটে জিতে, জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে না যেতেন। সুতরাং এটা ইন্ডিয়ার জন্যেও বিশাল রাজনৈতিক বিজয় ও লাভ। চিরশত্রু পাকিস্তানকে ভেঙে দুর্বল করার সুযোগও বাংলাদেশ এনে দিয়েছিলো, তাই পারফেক্ট ম্যারিজ বলা যায় বিশ্ব রাজনীতিতে। (আমার ইংরেজিতে লেখা ছোট্ট প্রবন্ধ আছে এটা নিয়ে)। সুতরাং ইন্ডিয়ারও মনোভাব এমন হওয়া উচিত নয় যে, এই স্বাধানতা বাংলাদেশ কে উদ্ধার করে দেয়া। বরং মিউচুয়াল বেনিফিশিয়াল। কিছু পলিটিক্স ও পলিসি সেই বিগ বসের মতো বৈরিতা তৈরি করছে। 

তিন. কিছু মানুষ এখনো পাকিস্তানপন্থী। এরা এতোটাই ধর্মান্ধ যে শুধু মুসলমান শুনলেই তাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে যাবে। দুখের বিষয় হলো অপ্রিয় হলেও সত্যি যে এভাবেই মুসলমানদের মানস তৈরি হয়। ধর্মগ্রন্থেও বিধর্মীদের নিয়ে প্রচুর ভালো কথা বলা যেমন আছে তেমনি মন্দও বলা আছে। বিশেষ করে পৌত্তলিক পুজা নিয়ে। এই দল কোনো কারণ ছাড়াই ইন্ডিয়া বিরোধী ধর্মের কারণে। চার. বিগত সরকারগুলো কেউ কেউ আন্তর্জাতিক অস্ত্রব্যবসায়ীদের সঙ্গে জড়িত হয়ে ব্যাপক অস্ত্রসস্ত্র ইন্ডিয়ার নানান বিচ্ছিন্নতাবাদী দল যেমন গূর্খা, নাগা, মিজোদের ইন্ধন যুগিয়েছে, যা ইন্ডিয়ার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। অন্যদিকে ইন্ডিয়াও শান্তিবাহিনির মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের নাশকতায় ইন্ধন যুগিয়েছে। এই বৈরিতা কিছু মানুষের মধ্যে স্থায়ী দাগ কেটে দিয়েছে। 

পাঁচ. বর্তমান সরকারের প্রতি ভারতের প্রকাশ্য সমর্থন অটোম্যাটিক্যালি বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের নাখোশ করেছে এবং তা খেলার মধ্যেও প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। ছয়. ইন্ডিয়ার বর্তমান সরকারের হিন্দুত্ববাদী নীতি ও কোন কোন প্রদেশে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপরে অত্যাচার, বাণিজ্য ও পানি সম্পদের ওপরে আধিপত্য একটি শ্রেণীকে চিরশত্রুতে পরিনত করেছে। এরা ভারত বিরোধিতা করবেই। সাত. সদ্য বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলায় ইন্ডিয়ার সমর্থকদের বিপক্ষ অবস্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। যা বহু নিরপেক্ষ বাংলাদেশিদের হতাশ করেছে এবং বাধ্য করেছে ভারতবিরোধী হতে। 

উপসংহার : এগুলো ছাড়াও হয়তো আরও কারণ আছে। কিন্তু দুটো প্রতিবেশি দেশ আরো সিমবায়োটিক হতে পারে। বাংলাদেশের মানুষজনেরও বিশ্বরাজনীতি বুঝতে হবে। ভারত একটি বিরাট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি। আমেরিকাও ভারতকে চটাবে না। কারণ চীনকে ঠিক রাখতে ইন্ডিয়াকে দরকার। আবার বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান সবার জন্যেই দরকারি। পাকিস্তান এর মধ্যেই ব্যর্থ গণতন্ত্র ও অর্থনীতিতে রূপ নিয়েছে। জঙ্গিবাদ বা ধর্মীয় উন্মত্ততা ধ্বংস করতে তাদের উস্কে দেবে পশ্চিমাশক্তি। তাই বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার জনগণের ও রাজনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরালো থাকা উচিত নিজেদের পারস্পরিক স্বার্থে। এই সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে একমাত্র উপাদানÑ সাম্প্রদায়িকতা। অতএব সাধু সাবধান। খেলা নিয়ে বিরোধ ও বৈরিতাকে খাটো করে দেখবেন না। এটাই হয়তো সেই সাম্প্রদায়িকতার প্রথম বীজ, যা থেকে মহিরুহ যেন তৈরি না হয়। লেখক : গীতিকার, চিকিৎসক ও শিক্ষাবিদ। নভেম্বর ১০, ২০২৩ নভেম্বর ২১, ২০২৩। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়