শিরোনাম
◈ মধ্যরাতে গ্রেফতার ব্যারিস্টার সুমন (ভিডিও) ◈ অক্টোবরেও ঊর্ধ্বমুখী  রেমিট্যান্সের গতি ◈ বাতিল হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প  ◈ বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিচ্ছে ◈ ‘আমি কোন দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নিই’: (ভিডিও) ◈ ফিল্মি স্টাইলে প্রকাশ্যে গুলি করে ছাত্রলীগ কর্মীকে হত্যা (ভিডিও) ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা প্রশ্নে যা বলেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট ◈ রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে মশাল মিছিল (ভিডিও) ◈ শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতি অসত্য বলেননি: মানবজমিন সম্পাদক (ভিডিও) ◈ দিল্লি থেকে মীরাটের সেনানিবাসে শেখ হাসিনা?

প্রকাশিত : ০৩ জুন, ২০২৩, ১০:৪৬ রাত
আপডেট : ০৩ জুন, ২০২৩, ১০:৪৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশের একটি অন্ধ উঁইপোকা

মাসকাওয়াইথ আহসান, ফেসবুক থেকে: ভারতের নতুন সংসদ ভবনে একটি ‘অখণ্ড ভারত’এর মানচিত্র রাখা হয়েছে, যেখানে আফগানিস্তান থেকে শুরু করে পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং শ্রীলঙ্কা সব দেশগুলিকেই দেখানো হয়েছে।

‘অখণ্ড ভারত’-এর ধারণাটি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএসের মূল মতাদর্শগত চিন্তার অন্যতম। ওই ধারণায় বলা হয়ে থাকে, প্রাচীন কালে ইরান থেকে বর্তমানের মিয়ানমার, উত্তরে তিব্বত, নেপাল, ভূটান আর দক্ষিণে বর্তমানের শ্রীলঙ্কা – সবই ছিল অখণ্ড ভারতের অন্তর্ভুক্ত। (বিবিসি)

ভারত অত্যন্ত কল্পনাপ্রবণ একটি দেশ। এই পৃথিবীতে মানুষ তার কল্পনার সমান। কিন্তু এই কল্পনা যখন পাগলামিতে পরিণত হয়; তখন তাকে রাঁচিতে পাগলা-গারদে রেখে আসা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।

চলচ্চিত্রকার সত্যজিত রায় তাঁর "হীরক রাজার দেশে" চলচ্চিত্রে এই ভারতীয় শাসকের মনোজগতের পাগলামিটাকে ধ্রুপদী লেলুলয়েড বন্দী করে গেছেন। ফলে ভারত সরকারের কোন কাজকেই আমি ঠিক যেন সিরিয়াসলি নিতে পারিনা।

অখণ্ড ভারতের মানচিত্রটি হীরক রাজার মূর্তি উন্মোচনের মতোই কষ্টকল্পনা।

ভারতীয় কষ্টকল্পনাকে যারা প্রত্যাখ্যান করেছেন তারাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যজিত রায়, অমর্ত্য সেনের মতো বিশ্বমানচিত্রে অমরতার আয়োজন করেছেন।

আর ভারতীয় কষ্টকল্পনার নেশায় যারাই মেতেছেন, তারাই রিপাবলিক টিভির অর্ণব গোস্বামী, "দাদা আমি সাতে পাঁচে থাকিনা'-র রুদ্রনীল ঘোষ কিংবা কলকাতার  অহংকারী চ্যাটবট হয়েছেন; ফেসবুকে যারা পূর্ব বঙ্গের জমিদার হিসেবে বিরাজ করেন।

১৯৪৭ সালের পরে পূর্ব বঙ্গ থেকে আগত শরণার্থীদের ক্ষতিপূরণ দেবার লক্ষ্যে , কী পরিমাণ জমাজমি ফেলে এসেছে তার হিসাব দিতে বলা হয়েছিলো ভারত সরকারের পক্ষ থেকে। তারা যে হিসাব দিয়েছিলো, তাতে পূর্ব বঙ্গের আয়তন চীনের সমান দেখাচ্ছিলো।

আমি বলিউডের স্পাই মুভিগুলো কমেডির টানে দেখি। হলিউডের স্পাই মুভি দেখে ঐ রকম টান টান উত্তেজনার ছবি বানাতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার 'পাঠান' অপারেটিভের এমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা সি আই এ-র র‍্যামবো হয়ে ওঠার যে আকাংক্ষা; এটা অনেকটা হাতির পাশে দাঁড়িয়ে ব্যাং-এর ফুলে ফুলে হাতি সদৃশ হবার কমিক এফোর্ট যেন।

মার্কিন মেরিনেরা পাকিস্তানের এবোটাবাদে ঢুকে ওসামা বিন লাদেনকে যেভাবে চ্যাং দোলা করে নিয়ে যাওয়া দেখে; মোদিজীর শখ হয় পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সার্জিক্যাল অপারেশানের। এই করতে গিয়ে যুদ্ধ বিমান ভেঙ্গে পড়ে ভারতীয় এয়ারফোর্সের অফিসার অভিনন্দন 'চা'-এর অভিনন্দন পেলো পাকিস্তানে।

কিন্তু মোদিজীর তো শখ মেটে না। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আর এস এস)-এর বিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদদের লাগিয়ে দেন, মেরা ভারত মহান প্রকল্পে। বিজ্ঞানী মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ব্যবহৃত যুদ্ধ বিমান থেকে তেজস্কৃয় গোবরের ইতিবৃত্ত বের করে আনে। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম গোবরের তৈরি পারমানবিক বোমা ব্যবহৃত হয়েছে কুরুক্ষেত্রে। 

হনুমানজী যেন গন্ধমাদন পর্বত তুলে এনে মোদীজীর অখণ্ড ভারতের মানচিত্রে একে একে জুড়ে দেয়, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, শ্রীলংকা প্রয়োজনে আফঘানিস্তান।

 কবি একবার খুশিজলের আধিক্যে যে বলেছিলেন, আসমুদ্র হিমাচল। কিংবা সারে জাঁহাছে আচ্ছা; এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি। এইরকম ভ্রান্ত অধ্যাস নিয়ে বেঁচে আছে শিবসেনার পলিসি মেকাররা। কিছু বলতে গেলেও সংকোচ হয়, মোদীজীর মনে আঘাত লেগে যাবে। একাকী মানুষ; নির্জনতায় অশ্রু ফেললে যে মহাপাপ হবে আমার।

অমিত শাহ, নিজেকে ফ্রিডেরিশে নিটশের সুপিরিয়র জীনের লোক মনে করেন বলেই, বাংলাদেশের মানুষকে উঁইপোকার সঙ্গে তুলনা করেন। যে কারণে বাংলাদেশের একটি অন্ধ উঁইপোকা এই লেখাটি লিখছে।

মোদিজীর স্ত্রী-পুত্র-কন্যা-পরিবার নেই। ফলে পারিবারিক বন্ধনের বোধ অনুপস্থিত তাঁর মাঝে। ফলে ১৯৪৭ সালে খুশিজলপ্রেমী রেডক্লিফের পেন্সিলে ভারত-পাকিস্তানে ছিটকে পড়া পরিবারগুলোকে রীতিমতো উগ্র হিন্দুত্ববাদের পাঁচিল তুলে বিচ্ছিন্ন করে দিলেন। পিতার কবরে এক মুঠো মাটি দিতে পারে না সন্তান; মায়ের অসুস্থতায় তাকে শেষ দেখা দেখতে পারে না সন্তানেরা। মানবিকতার হৃদপিণ্ড খণ্ড-বিখণ্ড করে দিয়ে মোদীজী অখণ্ড ভারতের কল্পনায় মাতোয়ারা।

পাকিস্তান ও নেপাল দেখলাম ভারতের সংসদ ভবনের এই আগ্রাসী অখণ্ড ভারতের মানচিত্রে দেশগুলোর দখল চিত্র আঁকার প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগেই বলেছেন, দিল্লী হচ্ছে ঢাকার স্বামী। এই কথা বলার পরই ভারত এক দোরাইস্বামীকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলো স্ত্রীকে দেখে শুনে রাখতে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ-ও বলেছেন, আমি ভারতে গিয়ে ওদের বলেছি যে কোন ভাবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে।

ভারতের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি তাঁর আত্মজীবনীতে খোলাখুলিভাবে লিখে গেছেন, কীভাবে এক-এগারোকালে ঢাকা থেকে সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদকে নতুন দিল্লীতে ডেকে; কয়েকটি ঘোড়া উপহার দেন; যেন "মঈনের ঘোড়াগুলি"তে চড়ে মঈন সেইফ এক্সিটে এমেরিকা চলে যেতে পারেন। তার পরিবর্তে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশ ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দিতে হবে।

হয়েছেও তাই। প্রণব কংগ্রেসের রাজনীতিক; আর মোদিজী বিজেপির। ফলে এটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট যে আওয়ামী লীগই ভারতের পছন্দের প্রিয়া। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে, অখণ্ড ভারতের মানচিত্রে বাংলাদেশকে এমবেডেড করলেও; ঢাকা কোন প্রতিবাদ না করে; বরং অপরুপ লাস্যে বলে, এই দুষ্টু ছাড়ো না; সবাই দেখে ফেলবে!

(পাদটীকাঃ এই লেখায় ভারত অর্থ ভারতের ক্ষমতা কাঠামো। ভারতের সাধারণ মানুষ; দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সাধারণ মানুষের মতো পাগলা রাজার দেশে শাসন-ত্রাসন-সংহারে বিপর্যস্ত)

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়