রহমান বর্ণিল: চালের দাম হয়তো ষাট টাকা থেকে আর কমবে না, গরুর মাংস আটশ টাকার নীচে নামবে না। কিন্তু গত একযুগ ধরে দেশব্যাপী অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন হয়েছে এবং হচ্ছে সেগুলো দেশের অর্থনীতিকে অচিরেই সমৃদ্ধ করতে শুরু করবে এবং সেই সমৃদ্ধির হাত ধরে খুব শীঘ্রই ষাট টাকার চাল আর আটশো টাকার গরুর মাংস কেনার ক্রয়ক্ষমতায় পৌঁছাবে নিম্নআয়ের মানুষ।
সব রকম নিত্যপণ্যের সঙ্গে মাসে দুয়েকবার আটশ টাকায় গরুর মাংস কিনেও কেন হাতে আরো কিছু টাকা অবশিষ্ট থাকছে নিম্নআয়ের মানুষ সেটা বুঝবে না। তাই অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে দেশের অর্থনীতি যে সমৃদ্ধ হবে সেটার ক্রেডিট আওয়ামী লীগ কখনোই পাবে না। এর কারণ দুটি, প্রথমত সাধারণ মানুষের এতোটা এনালাইটিক্যাল চিন্তার গরজ নেই। দ্বিতীয়ত ততোদিনে হয়তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে না। আজকের এইসব উন্নয়নের ফলে সেদিন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়লে তার পুরো ক্রেডিট নিবে তখনকার ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগ এখানটায় বড় ভুল করছে। কারণ তিরিশ হাজার কোটি টাকার পদ্মাসেতু বা দশ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে কর্ণফুলী ট্যানেল কখনোই ভোটের রাজনীতিতে কাজে আসবে না। কাজে আসতো দ্রব্যমূল্য সাধারণের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে পারলে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটা পারেনি। এখানটায় আওয়ামী লীগ দেশের চেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে দলের।
সাধারণ মানুষের যেহেতু চিন্তাক্ষমতা কম তাই আওয়ামী লীগ দলের উন্নয়ন চাইলে ভর্তুকি দিয়ে হোক, কিংবা সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিয়ে হোক বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত ছিলো। কিন্তু নিত্যপণ্যের বাজারদরের প্রতি উদাসীনতা দেখিয়ে আওয়ামী লীগ দুটি বিষয় প্রমাণ করেছে; এক. এদের রাজনীতিক দূরদর্শিতা কম। দুই. এরা সত্যিকার অর্থে দেশের উন্নয়ন চায়। তাই কোনো উন্নয়নে দেশের চেয়ে দলের উপকার বেশি হবে সেই বিবেচনা এরা করেনি।
দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বমুখিতার জন্য মানুষ ভয়াবহ কষ্টে আছে এ বিষয়ে অনৈক্যের কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা পৃথিবীর কোনো প্রান্তে কোনো একটি ঘটনা ঘটেছে শুনলেই তার অজুহাতে জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয়। করোনা মহামারী হোক কিংবা রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ হোক, জিনিসপত্রের দাম বাড়বে বাংলাদেশই। যেন সমগ্র পৃথিবীর মানুষের করোনার চিকিৎসা ব্যয় আর রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের পুরো খরচ বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা মিটিয়েছে। আওয়ামী লীগ এইসব মুনাফালোভী ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট ভাঙতে পুরোদমে ব্যর্থ হয়েছে এবং এটা অনুমেয় ছিল, অনাক্সিক্ষত নয়। ব্যবসায়ীদের ক্রমাগত রাজনীতিতে যুক্ত করার ফল এটা। অবকাঠামোগত উন্নয়ন দীর্ঘমেয়াদে দেশের সমৃদ্ধির কারণ হতে পারতো। কিন্তু ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে যুক্ত করার খেসারতসরূপ সেটা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
আপনার মতামত লিখুন :