শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ২৬ মার্চ, ২০২৩, ০২:০৭ রাত
আপডেট : ২৬ মার্চ, ২০২৩, ০২:০৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘স্বাধীনতা’ ও ‘মুক্তি’র অভিযাত্রা- চলছে, চলবে

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী: একাত্তরের এই দিনে স্বাধীনতাকামী পূর্ব বাংলার জনগণ বঙ্গবন্ধুর ডাকে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলো পাকিস্তানি জানতার বিরুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু জনতার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তখনই দেশবাসী বুঝে নিয়েছিলো আমাদের সম্মুখে এখন কেবলই স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রাম খোলা রয়েছে, নতুবা পাকিস্তানের শোষণ নির্যাতন আর পরাধীনতাই আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। তখন থেকেই জনগণ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। 

২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামে যে গণহত্যা শুরু করে তার বিরুদ্ধে নিরস্ত্র বাঙালি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার আহ্বান পরদিন বিশ্ব গণমাধ্যমের কল্যাণে জনগণ জানতে পারে। ২৬ মার্চ ইয়াহিয়ার বেতার ভাষণ পূর্ব বাংলার জনগণকে আরও বেশি ক্ষুব্ধ করে। স্বাধীনতার জন্য মানুষ তখন সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ঐক্যবন্ধ হতে থাকে। বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানিরা ২৬ মার্চ রাতে গ্রেফতার করে কারাগারে নিয়ে যায়, গোটা পূর্ব বাংলাব্যাপী গণহত্যা বিস্তৃত করেছিলো জাতিকে ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্য। তারা মানুষ নয় পোড়ামাটি নীতি অনুসরণ করতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাঁরই পূর্ব নির্দেশ মোতাবেগ সীমান্ত অতিক্রম করে সরকার গঠনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে, স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের আয়োজনে জনগণকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে একটি সরকার গঠন করেন। জনগণ এই সংবাদ  শোনে তখনই দলে দলে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের উদ্দেশে প্রিয়জনদের কাছ থেকে বিদায় নেয়। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার শপথ নেওয়ার পরথেকে মুক্তিযুদ্ধের সাংগঠনিক শক্তির দৃঢ় অবস্থান দেশে ও বিদেশে দেখা যায়। হাজার হাজার কৃষক, শ্রমিক, যুবক, বিভিন্ন, পেশাজীবী, বাঙালি, সৈনিক, পুলিশ, ইপিআর, আনসারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ শুরু করে।
 
গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী, গেরিলাবাহিনীসহ মুক্তিযুদ্ধকে সফল করার জন্য যত ধরনের প্রশিক্ষণ বাহিনী এবং অস্ত্রসস্ত্র সংগ্রহ ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে আক্রমণ, প্রতি-আক্রমণ সকল আয়োজন। অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই একটি নিরস্ত্র জনগোষ্ঠি একটি নিয়মিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিদিন এর সম্ভাবনায় স্বাধীনতার লক্ষ্য পূরণে শক্তিসঞ্চয় করতে থাকে। আমাদের রাজনৈতিক সরকার মুক্তিযুদ্ধকে পরিকল্পিত পথেই পরিচালিত করছিলো। ফলে সারাবিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থন জানাতে থাকে। দেশে অভ্যন্তরে জনসাধারণ পাকিস্তানিদের অত্যাচার নির্যাতন ও গণহত্যার জ¦ালাও পোড়াও নিতীতে ভিত নাহয়ে মুক্তিযুদ্ধকে সফল করতে যে যার অবস্থান থেকে সহায়তা প্রদান করছিলো। ফলে পাকিস্তানিদের পোড়ামাটি নীতি দিনদিন অকার্যকর হতে থাকে, স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনে জনগণ এবং সরকার নতুন নতুন বিজয় অর্জন করতে থাকে। জনগণ এবং মুক্তিবাহিনী একের পর এক বিজয় ছিনিয়ে নিতে থাকে। বাঙালি এবং অন্যন্য জনগোষ্ঠি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই তখন বিরত্বের সঙ্গে সশস্ত্র্র মুক্তিযুদ্ধকে একটি গণযুদ্ধে রূপদান করতে থাকে। 

সরকার সফল রণনীতি ও রণকৌশল গ্রহণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে নিয়ে যায়। ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব আমাদের পাশে দাঁড়ায়। অবশেষে নভেম্বর ডিসেম্বরে এসে মুক্তিযুদ্ধ যখন চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায় তখনই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠি পূর্ব বাংলার স্বাধীনতাকে রুখতে না পেরে রাস্তাখাট, পুল কালভার্ট, ব্যাংক-বীমা, নানা প্রতিষ্ঠান একের পর এক ধ্বংস করতে থাকে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যাও করতে থাকে। তারপরও তাদের ভাগ্যে বাঙালিকে দমন করার ইচ্ছে পূরণ হয়নি। ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা সদস্য নিয়ে যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য এইদিন পূরণ হয়। বঙ্গবন্ধুর সম্মোহনী নেতৃত্বে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধকে শেষ পর্যন্ত বিজয় অর্জনে গোটা জাতিকে ঐক্যবন্ধ রেখেছিলো। 
এরপর তিনি ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রে ফিরে এলেন পাকিস্তানের কারাগার হতে মুক্তি পেয়ে, বাংলাদেশের জনগণকেও পাকিস্তানিদের শাসন ব্যবস্থার অধীনতা থেকে চিরকালের জন্য মুক্ত করে আনলেন। বাঙালি এবং এই ভূখণ্ডে বসবাসকারী ছোট ছোট জাতিগোষ্ঠির হাজার বছরের সংগ্রাম আর স্বাধীনতার স্বপ্ন ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে সশস্ত্র পন্থায় যে অভিযাত্রা শুরু করেছিলো তা ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণতা পেয়েছিলো, কিন্তু স্বাধীনতার লক্ষ্য বঙ্গবন্ধু আগেই নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। তিনি ভৌগলিক স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে সংগ্রাম তথা অভিযাত্রা অব্যহত রাখার কথা বলেছিলেন। সেটি তিনি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জনতার মধ্যে ফিরে এসে আবারও উচ্চরণ করলেন এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণের যে যাত্রা নতুন করে শুরু করেছিলেন তাতেই পরিস্ফুট হয়। 

সাড়ে তিন বছরে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিকভাবে স্বাবলম্বী এবং আত্মমর্যাদাশীল জাতিরাষ্ট্র রূপে গড়ে তুলতে একের পর এক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে থাকেন। একটি সংবিধান প্রণয়ন, পঞ্চবার্ষিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ, শিক্ষানীতি প্রণয়ন এবং আইন বিধিবিধান ও সংস্কারের কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে ক্ষুদামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত এবং আত্মনির্ভরশীল জাতীরাষ্ট্র রূপে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে থাকে। একটি যুদ্ধ পীড়িত দেশকে সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই তিনি স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করতে সক্ষম হন। মাথাপিছু আয় ৯৩ ডলার থেকে সাড়ে তিন বছরের মাথায় ২৯২ ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হন। বাংলাদেশ তখন অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষেই ব্যাপক আর্থসামাজিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছিল। কিন্তু তার এই পথচলা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক অপশক্তির পছন্দ হয়নি। ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্য পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। 

বাংলাদেশ প্রায় ২১ বছর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যচুত ছিলো। ফলে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্য আমাদের পিছিয়ে যায়। রাষ্ট্রব্যবস্থায় সামরিক স্বৈরশাসন, লুটপাট, দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতা, শোষণ, বৈশম্য এবং পাকিস্তানি ভাবাদর্শকে ফিরিয়ে আনা হয়। এর ফলে আমাদের অগ্রযাত্রা জটিল আবর্তে পড়ে যায়। সেখান থেকে মুক্ত হওয়া রাজনৈতিক সংগ্রাম ব্যর্থ করে দেওয়ার নানা প্রচেষ্টা রাষ্ট্রীয়ভাবে করা হয়েছিলো। কিন্তু ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা নির্বাচিত হয়ে সরকারের দায়িত্ব লাভের পর আবার বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ ফিরে পায়। কিন্তু এই সুযোগ মাত্র ৫ বছর স্থায়ী হয়েছিলো। আবার ২০০১-২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ পূর্ববর্তী বিক্ষুব্ধ এবং লক্ষ্যভ্রষ্ট পথে পরিচালিত হয়। ফলে বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির যাত্রা ভয়ানকভাবে দেখা দেয়। বাংলাদেশ মাথাপিছু আয় অর্জনে তখনও পর্যন্ত ৬০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারিনি। এর মূলে ছিলো অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্য থেকে বাংলাদেশকে বিচ্যুত করা হয়েছিলো। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা দিন বদলের সদন এবং ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র রূপে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে সরকারের যাত্রা শুরু করেন। তার এই অভিযাত্রায় বিদ্যুৎ, কৃষি, ব্যবসা, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি, যোগাযোগ ব্যাপকভাবে স্থান পায়। ফলে বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিকভাবে পরিবর্তিত হওয়ার এক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। 

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পদার্পন করে। ২০২১ সালের আগেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদাও লাভ করে। দেশে দারিদ্রের হার বিশ শতাংশে নেমে আসে। দারিদ্রবিমোচনের নানা পরিকল্পনা একের পর এক বাস্তবায়ন হতে থাকে। দু’বছর করোনার অভিঘাত বাংলাদেশ সামলিয়ে ওঠার মুহূর্তেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, অর্থনৈতিক অবরোধ, ডলার সংকট আমাদের অগ্রযাত্রায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই অভিঘাতগুলো না ঘটলে আমরা গত তিন বছরে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অনেকদূর এগিয়ে যেতে সক্ষম হতাম। আমাদের মাথাপিছু আয় এখন দাঁড়িয়েছে ২৮৩০ ডলারের বেশি, যা আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। শেখ হাসিনার সরকার আশ্রয়হীন প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন,আশ্রয়হীন মানুষদের মধ্যে বিনামূল্যে বাড়ি প্রদান এবং কর্মসংস্থানের যে ব্যবস্থা করছেন তা অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে সূচিত অভিযাত্রারই একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যগ। অচীরেই সব আশ্রয়হীন ও কর্মহীনদের এই পরিকল্পনার মধ্যে অন্তর্ভুক্তিকরণ সম্পন্ন হলে অর্থনৈতিক মুক্তির পথ অনেকটাই সফলতার কাছাকাছি যেতে সক্ষম হবে। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২ বছর পূর্তিতে নানা বাধা বিপত্তি অতিক্রমের পরও আমাদের অর্জন অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে যতটুকু এগিয়েছে তার সিংহ ভাগই বঙ্গবন্ধু এবং তার কণ্যা শেখ হাসিনার প্রচেষ্টাতে সম্ভব হয়েছে। এই ধারা অব্যহত থাকলে স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্য আমাদের ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণ হবেই। পরিচিতি : শিক্ষক ও কলামিস্ট। অনুলিখন : খসরুল আলম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়