শিরোনাম
◈ সন্ত্রাসী অপরাধে গ্রেপ্তারদেরও নিজেদের কর্মী দাবী করছে বিএনপি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ গাজীপুরে হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু  ◈ বিশৃঙ্খলার পথ এড়াতে শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী ◈ তাপপ্রবাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা ◈ সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৮৪০ টাকা ◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ২৬ মার্চ, ২০২৩, ০১:৫৬ রাত
আপডেট : ২৬ মার্চ, ২০২৩, ০১:৫৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘নিজেদের শক্তি’র ওপর ভর করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়

ড. আতিউর রহমান

ড. আতিউর রহমান: তিনিই নেতা যিনি মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে পারেন। আর পারেন সেই স্বপ্নের সমান হওয়ার জন্য তাদের অনুপ্রাণিত করতে। আমাদের বড়ই সৌভাগ্য যে তেমন এক মহৎ-প্রাণ নেতা আমরা পেয়েছিলাম যিনি বাঙালিকে একটি জাতি সত্ত্বার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছিলেন। আর সেই জাতিকে উদ্বেলিত করে তাদের জন্য একটি জাতিরাষ্ট্র গঠনের সংগ্রামেও তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। আত্মশক্তির মূল মন্ত্রে তাদের এমন করেই উংৎসাহিত করেছিলেন যে সেই লড়াকু মন বা ফাইটিং স্পিরিটকে সম্বল করে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে সকল সংকট পায়ে দলে। আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে গভীর প্রত্যয়ের সমগে উচ্চারন করেছিলেন, ‘... নতুন বিশ্বের অভ্যুদয় ঘটিতেছে। আমাদের নিজেদের শক্তির ওপর আমাদের বিশ্বাস রাখিতে হইবে। আর লক্ষ্য পূরণ এবং সুন্দর ভাবীকালের জন্য আমাদের নিজেদের গড়িয়া তুলিবার জন্য জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমেই আমরা আগাইয়া যাইব’। তৎকালিন ভূ-রাজনৈতিক ও বহিঃঅর্থনীতির বাস্তবতার প্রতি সংবেদনশীল থেকে আমাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক শক্তি ও সম্ভাবনার ওপর ভরসা রেখে আত্মপ্রত্যয়ী সমুন্নয়নের অভিযাত্রার এক সুদূরপ্রসারী পথনকশা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছিলেন তিনি সেদিন। 

ভুল রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দুই যুগের বেশি সময় ধরে শোষিত-বঞ্চিত বাঙালির অর্থনেতিক মুক্তির আকাক্সক্ষাকে কেন্দ্রে রেখে যে রাজনৈতিক সংগ্রাম তিনি গড়ে তুলেছিলেন তার ফলেই জন্ম হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের। আর সদ্যপ্রতিষ্ঠিত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের দায়িত্বভার যখন তিনি কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তখন তাঁর সামনে ছিল পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ। ঠাণ্ডা যুদ্ধের আবহে আন্তর্জাতিক রাজনীতির পরিবেশ ছিল অস্থির। প্রকৃতিও ছিল বৈরি। অথচ যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে মনের মতো করে গড়ে তোলার কোনো সম্পদই ছিল না বঙ্গবন্ধুর হাতে। এর ওপর দেশের অভ্যন্তরেও বিভ্রান্তির রাজনীতি আর দুর্নীতির সঙ্গে লড়াই করে এগোতে হচ্ছিল তাঁকে। তবুও ভরসা হারাননি তিনি। বরং সবাইকে ভরসা যুগিয়েছেন। সদ্যস্বাধীন দেশে গণমুখী সংবিধান, সুচিন্তিত উন্নয়ন নির্দেশনার জন্য প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, আশাবাদী তরুণ জনশক্তি বিনির্মাণে শিক্ষা কমিশন, কৃষি পুনর্গঠন ও বিস্তারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এবং রাষ্ট্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় বৃহৎ শিল্পের বিকাশের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের গড়ে তোলার উদ্যোগÑ এ সবই তিনি করেছিলেন খুব অল্প সময়েই। এদেশের মানুষের ‘আত্মশক্তি’র ওপর তাঁর অগাধ আস্থা ছিল। সেই আত্মবিশ্বাসকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে সচেষ্ট থেকেছেন। তাই তো চার বছরের কম সময়ের মধ্যেই মানুষের মাথাপিছু আয় ৯৩ মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ২৭৩ মার্কিন ডলারে উন্নিত করতে পেরেছিলেন। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রেও সে সময়ে একই রকম সাফল্যের মুখ দেখেছিল বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পরিবার পরিকল্পনা, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা এবং সামাজিক নিরাপত্তায় নেওয়া বঙ্গবন্ধুর শুরুর দিককার উদ্যোগগুলোর সুফল তো আজও ভোগ করছে বাংলাদেশ।

আজ ৫২-তম স্বাধীনতা দিবসে এসে ভাবছি ‘নিজেদের শক্তি’র ওপর ভর করে যে আত্মপ্রত্যয়ী অগ্রযাত্রা বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন তা নিরবচ্ছিন্নভাবে এগুলে আমরা কোথায় না পৌঁছাতে পারতাম। বঙ্গবন্ধুর অন্তর্ভুক্তিমূলক অভিযাত্রা থমকে গিয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে। কারণ অপশক্তির চক্রান্তে সেদিন আমরা বঙ্গবন্ধুকে শারীরিকভাবে হারিয়ে ফেলেছিলাম। আর পরিণামে এ দেশ থেকে বিদায় নিয়েছিলো সামাজিক ন্যায়বিচার আর অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের অগ্রাধিকার। এরপর নামে-বেনামে বহু বছর চলেছে অগণতান্ত্রিক শাসন। তবে বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষের মনে-মননে রয়ে গিয়েছিলেন। এখনও রয়েছেন সমান দাপটে। তাই তাঁর দেখানো পথে ফিরতে গণআন্দোলন গড়ে উঠেছে অবলীলায় এই বাংলাদেশে। দীর্ঘ সংগ্রামের পরে দেশকে আবার গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনা গিয়েছিলো বঙ্গবন্ধুকে শারীরিকভাবে হারানোর ১৫-১৬ বছর পর। তারপরও পথটি মসৃণ ছিল না। গণতন্ত্রের যাত্রাপথও ছিল কন্টকে ভরা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-বিরোধীরা বারবার চেষ্টা করেছে দেশকে ভুল পথে চালিত করার। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর গণমুখী উন্নয়নের ধারাকে প্রকৃত অর্থে জাগ্রত করা গেলেও ২০০১ সালে আবার ছেদ পড়ে। তবে ২০০৮-এ জনগণের বিপুল জনসমর্থন নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার আবার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসে। মাঝের ৬-৭ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যাঁরা দেশকে এগিয়ে নিতে চান তাদের প্রাণঘাতি চক্রান্তসহ আরও বহু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। তবে এই সব ত্যাগ মোটেও বৃথা যায়নি। ২০০৮ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছরে সামাষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর মানে যে অভাবনীয় ইতিবাচক অগ্রগতি আমরা অর্জন করতে পেরেছি তা দেখলেই মনে হয় এমন কথা।

প্রকৃত অর্থেই গত প্রায় ১৫ বছরে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতি একটি ‘কোয়ান্টাম জাম্প’-এর মধ্য দিয়ে গেছে। স্থির মূল্যে আমাদের মাথাপিছু আয় স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত চার গুণেরও বেশি বেড়েছে। আর এই বৃদ্ধির ৬০ শতাংশই হয়েছে বিগত ১৪-১৫ বছরে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় (কারেন্ট প্রাইস হিসেবে) ২,৮০০ মার্কিন ডলারেরও বেশি। রপ্তানির ক্ষেত্রেও স্বাধীনতা উত্তরকালের প্রবৃদ্ধির ৬১ শতাংশ এসেছে এ সময়ে (গত অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বার্ষিক রপ্তানির পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে)। গত পাঁচ দশক ধরে রেমিটেন্সের যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তার ৬০ শতাংশ এবং আমদানি প্রবৃদ্ধির ৬৯ শতাংশ এ সময়েই ঘটেছে। আর এ সময়ে সবচেয়ে বড় রূপান্তরটি ঘটেছে রিজার্ভে। দেশের রিজার্ভ স্বাধীনতার পরে ১৭১ গুণ বেড়েছে। আর এই প্রবৃদ্ধির ৮৭ শতাংশ ঘটেছে ২০০৮-পরবর্তীকালে। বিগত ১৪-১৫ বছর ধরে সুবিবেচনাপ্রসূত সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়নে সাফল্যের বড় প্রমাণ হলো সবচেয়ে রক্ষণশীল হিসেবেও এ সময়টিতে আমাদের গড় প্রবৃদ্ধি ৬.২৫ শতাংশ থাকা। আর এই অর্জন ঘটেছে পদ্মা সেতুসহ মেগা প্রকল্পগুলোর অবদান ছাড়াই। এর মধ্যে পদ্মা সেতু চালু হয়ে গেছে। দক্ষিণের একুশটি জেলার মানুষ এই সংযোগ প্রকল্পের সুংফল পেতে শুরু করেছে। কল্পনা করুন বাদবাকি মেগা প্রকল্পগুলো যখন চালু হয়ে যাবে তখন প্রবৃদ্ধির কী হার হবে। নিশ্চয়ই তা ডাবল ডিজিটে পৌঁছে যাবে। 

একইসঙ্গে এটাও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, এই প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ের সুফল সামাজিক পিরামিডের পাটাতনে পৌঁছানোর ক্ষেত্রেও এ সময়ে সাফল্য এসেছে। তাই করোনা-জনিত অর্থনৈতিক স্থবিরতা আসার আগে আমাদের দারিদ্র্য ও অতিদারিদ্র্য হারকে যথাক্রমে ২০ শতাংশ ও ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিলো। আর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাস, সকলের জন্য শিক্ষার সুযোগ তৈরির মতো খাতগুলোতে তো আমাদের সাফল্য সারা বিশ্বের জন্যই অনুসরণীয় মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ সময়ে সরকারের যথাযথ সহায়তায় দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতৃত্বে যে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নের অভিযান চলেছে সেটিও কৃষি ও অ-কৃষি খাতের প্রান্তিক মানুষের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরির পাশাপাশি দেশের এসএমই ও পরিবেশবান্ধব শিল্পের বিকাশে খুবই কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। কৃষিতে আমাদের অর্জনগুলো খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি রপ্তানিমুখী কৃষির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। 

ইতোমধ্যে শেষ হওয়া পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, দেশব্যাপি সেতু নেটওয়ার্কের পাশাপাশি চলমান অন্যান্য বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পসহ গভীর সমুদ্র বন্দর, পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ইত্যাদি দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষজ্ঞাদের ভাষ্যমতে বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে প্রতিটির কারনে ১ শতাংশ করে যুক্ত করা সম্ভব হবে। অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগগুলোর পাশাপাশি ২০২৬ সালের মধ্যে আরও ১২ গিগাওয়াট-আওয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা তৈরি, ওই সময়ে মোট বার্ষিক রপ্তানির পরিমাণ ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়া এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণের অমিত সম্ভাবনা (যেমন: আইসিটি খাতের আকার বর্তমানের ২ বিলিয়ন থেকে ৫ বিলিয়ন হওয়া) বিবেচনায় নিলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিষয়ে এই আশাবাদকে বাস্তবানুগ বলে মানতেই হবে। এ কারণেই ১৯৮০ আর ১৯৯০-এর দশকে পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতগুলো যে বেগে এগিয়েছে আগামী দশ বছর বাংলাদেশও সেভাবে এগোবে বলে প্রক্ষেপণ করেছেন অনেকে।

বিগত ১৪-১৫ বছরে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির এমন একটি শক্ত ও সম্ভাবনাময় ভিত্তি তৈরি করা গিয়েছিলো বলেই করোনাকালিন দুর্যোগ সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বের অধিকাংশ দেশের চেয়ে অনেকটাই ভালো করেছি। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট চলমান সংকটের কালেও এ জন্যেই আমরা ভরসা পাচ্ছি। তবে সেই সাথে এটাও মানতে হবে যে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা এখন আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এমন বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষেত্রেই বঙ্গবন্ধু ‘নিজেদের শক্তি’র ওপর আস্থা রাখার দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। ঠিক যেমন রবীন্দ্রনাথও বরাবর গ্রাম-বাংলার ‘আত্মশক্তি’র মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলার দর্শনচর্চা করে গেছেন। শুরুতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া যে ভাষণ থেকে উদ্ধৃত করেছি তার প্রায় পাঁচদশক পরে আজ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা আবারও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সেকালে বাংলাদেশ ছিল সদ্য-স্বাধীন। যুদ্ধবিধ্বস্ত। তখন সামনে ছিল ওই ছাইভস্মের অর্থনীতিকে টেনে তোলার পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ। আজ আমরা বিশ্বে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের রোল মডেল। অচিরেই স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ হতে যাচ্ছি। তবে আজও কিন্তু আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আয়-বৈষম্য, কর্মসংস্থানের অভাব, সামাজিক অস্থিতিশীলতা, সুশাসনের ঘাটতি এবং সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ তো আগে থেকেই ছিলো। হালে করোনাজনিত ক্ষতি থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার আর রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলোও সামনে এসেছে। তাছাড়া আগের চেয়ে এখনকার বাংলাদেশ আরও বেশি করে বিশ্বায়নের সাথে যুক্ত। উন্নত দেশের আর্থিক সঙ্কটের ঢেউ দ্রুতই আমাদের অর্থনীতির গাড়ে আছড়ে পড়ে। দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগের ওপর বড় রকমের প্রভাব ফেলে। তবে আমাদের রয়েছে স্বদেশি উন্নয়নের শক্ত জমিন। যার ভিত্তি বঙ্গবন্ধুই তৈরি করে দিয়ে গেছেন। এ কারণেই বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও চিন্তাগুলো এখনও একইভাবে বা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক আমাদের জন্য। তবে এটা মানতেই হবে যে, সৌভাগ্যবশত এখন দেশ পরিচালিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর দর্শন আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখেই। আর চ্যালেঞ্জমুখর ও সম্ভাবনাময় এই অভিযাত্রায়  নেতৃত্বের পরম্পরা যথেষ্ট শক্তি জুগিয়ে চলেছে।

লেখক: বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়