ব্রাত্য রাইসু: [২] আমাদের সদাশয় সরকার নিজেই যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে চাইতেছে তার লক্ষণ এই কয়দিনে বেশ স্পষ্ট হইয়া উঠছে।
গত মঙ্গলবার ১৪ মার্চ তারিখে সচিবালয়ের সভাকক্ষে এই বিষয়ক একটা জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হইছে। সভায় আইনমন্ত্রী আছিলেন, আছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানও।
ওনাদের কথাবার্তায় তার একটা লক্ষণ টের পাওয়া গেলো। আইনমন্ত্রীর আলাপ টানলাম না। সময় নিউজ ডট টিভি থিকা ইফতেখারুজ্জামান সাহেবের আলাপটা বরং এইখানে কোট করি। তিনি বলতেছেন, ‘আইনমন্ত্রীও এ আইনের অপব্যবহার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। সরকার এ বিষয়ে অবহিত আছে। সার্বিকভাবে নাগরিক সমাজের অবস্থান হলো, আমরা মনে করি, এ আইনটি বাতিল করা দরকার। এছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই’।
তো সরকার যে অবহিত আছে তা জানাইলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক মহোদয়। সরকার কী অবহিত আছে? যে ‘এ আইনের অপব্যবহার হচ্ছে’। ভারি সুন্দর অবহিতি! সভায় ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বললেন, ‘এখানে মৌলিক যে বিচ্যুতি, উদ্বেগ ও পাশাপাশি আইনটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপব্যবহারের যে সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে, আমরা মনে করি, আইনটি ঢেলে সাজানো হলেও তা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। জনকল্যাণমুখী হবে না। সে কারণে আমরা আইনটি বাতিল করা দরকার বলে মনে করি’।
এই আমরা কারা? উনি যেহেতু সরকারের অবহিতির কথা বললেন, ধইরা নিতে সাধ হয় যে নাগরিক সমাজের পাশাপাশি এই মনে করাটা সরকারেরও। নাকি? নাকি না? তা আমাদের সেইসব গরম বুদ্ধিজীবী এবং অ্যাকটিভিস্ট ভাই ও বোনেরা ভাববেন যারা সরকারের কাঠিপুতুল হিসাবে ক্রিয়া করেন। জাইনা শুইনা করেন তেমন না। তবে কেন সরকার তাদের দিয়া কী করাইয়া নেয়, তারা তা আগে ধরতে পারেন না!
[৩] বেশ কিছুদিন ধইরাই শোনা যাইতেছে, এই আইন বাতিলের জন্যে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ধারাবাহিক চাপ বিদ্যমান। কিন্তু বিদেশিদের চাপে কেন সরকার আইন বদলাবে, যেখানে দেশেই চাপ তৈরি করার কলকাঠি ও বুদ্ধিজীবীরা আছেন। তো বুদ্ধিমান সরকারের দরকার ছিল বৈদেশিক চাপরে অদৃশ্য বা গৌণ কইরা আনা। তাতে সরকার সফল হইছে। এই করতে গিয়া উনি, মানে সরকার সাহেব, বুদ্ধিজীবী এবং অ্যাকটিভিস্ট মহলের প্রয়োজনীয় হেল্প লইলেন।
তো এখন যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করবে সদাশয় সরকার তখন আমরা বলতে পারব, হাঃ হাঃ (এইখানে বলার আগে হাইসা নিতে হবে), বুদ্ধিজীবী এবং অ্যাকটিভিস্টদের চাপেই না সরকার বাধ্য হইলো এই কালো রঙের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি বাতিল করতে! সরকার এই সম্ভাব্য বাতিল করণে একযোগে সাহায্য নিতেছেন নায়িকা মাহিয়া মাহির এবং তার গ্রেফতারে যারা বিবৃতি দিলেন তাদের। এই সম্মিলিত চাপের কাছে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপ কেমন হালকা, লঘু ও লাপাত্তা হইয়া গেলো তা কি ওই বোকা বিদেশিরা জীবনেও বুঝতে পারবে নাকি? না, বুঝবে না! ওদের বোঝার দরকারও বিশেষ নাই। আমাদের ভারি ভারি বুদ্ধিজীবী ও অ্যাকটিভিস্ট স্যার ও ম্যাডামেরা তা বুঝলেই হয়। লেখক: কবি
আপনার মতামত লিখুন :