ফারহানা আহমেদ: জজ সাহেব বললেন, থামুন। থামুন সবাই। এবার মিসেস হামিদাকে বললেন, আপনি বলুন। আমি ব্যক্তিগতভাবে জানতে আগ্রহী। কেন আপনি আপনার সন্তানদের সঙ্গে থাকতে চান না? যারা আপনাকে গ্রহণ করার জন্য এতো আগ্রহভরে দাঁড়িয়ে আছে। মিসেস হামিদা, যার বয়স ষাটোর্ধ্ব। তিনি বার কয়েক চোখ মুছলেন। মৃদু হাসলেন যেন। তাচ্ছিল্যের হাসি। জজ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন, হুজুর। আমি মানুষ। কোনো শো-পিস নই। পড়ালেখা সামান্য হলেও করেছি। আমার সন্তানদের বিষয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। শুধু আমার স্বামীর সম্পদে আমার সামান্য যে অংশ আছে, সেটি চেয়েছি। জজ সাহেব বললেন, সেটি আপনার পাওনা। কিন্তু যারা আপনার আপনজন এবং আপনাকে নেওয়ার জন্য একপায়ে দাঁড়িয়ে আছে, তাদের নিরাশ করছেন কেন? দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বললেন, আমাকে আমার ছেলেমেয়েদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে থাকতে হয়। প্রথমে তারা নিয়ম করলো ৩ মাস পরপর তারা ৪ ভাইবোন আমাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রাখবে।
তাতে বছর পার হবে। এরপর আমি ব্যাগ নিয়ে ঘুরতে শুরু করলাম। এক বাড়ি ৩ মাস থাকার পর, আরেকজনের সময় হয়। যার বাড়িতে আছি সে তখন ফোন করে বলে, তোর যেন একদিনও দেরি না হয়। নিয়ে যাবি এসে। মাকে নিয়ে যাবি বাক্য থেকে মা শব্দটা বাদ পড়ে যায়। মনে হয় আমি কোনো ফার্নিচার। যার অদল-বদল চলছে। বিজ্ঞ আদালত আমি জানি এটি খুব ক্ষুদ্র একটি শব্দ। কিন্তু আমার পুরো দুনিয়া ওই শব্দে আটকে ছিলো একসময়ে। এখন আমি আসবাবে পরিণত হয়েছি। এই ঘোরাঘুরির চাইতে বৃদ্ধাশ্রম আমার জন্য ভালো। তারা আমাকে কম বা বেশি যাই ভালোবাসুক। আমি সেটি আর চাই না। আমি কেবল আমার ঠিকানা চাই। জজ সাহেব চশমার ফাঁকে চোখ মুছলেন। আদালতে পিনপতন নীরবতা। বৃদ্ধাশ্রমে এসব কাহিনি ডালভাত জানি। সন্তানরা এসব বৃদ্ধাদের মনে রাখে না। সম্পত্তি হারানোর ভয়ে কেবল দাঁতে দাঁত চেপে সয়ে যায়। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :