শিরোনাম
◈ সাভারে শো-রুমের স্টোররুমে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ২ ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ০১:২৫ রাত
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ০১:২৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বহুগামিতা এবং পুঁজিবাদী সমাজের দ্বন্দ্ব

আহসান হাবিব

আহসান হাবিব: ‘আমি বানরের বংশধর’- কথাটা ধর্মান্ধদের গায়ে আগুন জ্বেলে দেয়, ঠিক তেমনি ‘আমি বহুগামি’ বললেই তারা মাটিতে পুঁতে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করার জন্য রায় দিয়ে বসে। অথচ দুটোই সত্য। দুটোই প্রাকৃতিক সত্যের অন্তর্গত। প্রথমটিকে আপনি চাইলেও বদলাতে পারবেন না। তবে ‘বানর’ শব্দটি আপনার মানব-মর্যাদায় আঘাত এবং ধর্মের দাবির অসারতা দেখায় বলে ক্ষেপে উঠেনÑএটা বোঝা সহজ, কিন্তু বহুগামিতা বংশের উত্তরাধিকার এবং সম্পদ রক্ষার জন্য জরুরি বলে এর ওপর আইনি বিধি-নিষেধ চাপাতে পারেন। ধর্ম এটা চাপিয়েছে তথাকথিত পবিত্রতা এবং নারীর উপর আধিপত্য কায়েমের জন্য এবং পুঁজিবাদ চাপিয়েছে ব্যক্তিগত সম্পত্তি আত্মসাৎ করে উত্তরাধিকারের মাধ্যমে নিরাপদ রাখার নিমিত্তে। দুটোর লক্ষ্যে সামান্য পার্থক্য আছে, কিন্তু এর বলি উভয়ক্ষেত্রে নারী। 

প্রাণিজগতের বহুগামিতা নিয়ে না ধর্মের না পুঁজিবাদের মাথাব্যথা আছে। সব মাথাব্যথা মানুষকে নিয়ে। বহুগামিতার প্রশ্ন নারীপুরুষ উভয়ের বেলা প্রযোজ্য হলেও এর খড়গ আগেই বলেছি সবটাই পড়ে নারীর ওপর। পুরুষের সতীত্ব বা কুমারত্ব বলে কিছু শোনা যায় না, নারীর বেলায় শোনা যায়। নারীর উপর কেন? কারণ নারীর উপর পুরুষ তার আধিপত্য কায়েম করতে সমর্থ হয়েছে। এটা যদিও কোনো পুরুষের বা সব পুরুষের যোগসাজশে হয়েছে তা নয়, এটা সামাজিক বিকাশের ফলেই ঘটেছে। সমাজ কর্তৃক কেন এটা গ্রহীত হয়েছে তার উত্তরে বলা যায় এর মাধ্যমে সমাজের টিকে থাকা এবং বিকশিত হওয়া অধিকতর ফলপ্রদ বলে হয়তো আপাত প্রমাণ মিলেছে। এটা সামাজিক বিবর্তনের স্বতঃস্ফূর্ত ফল হিসেবে একটা পর্যায় পর্যন্ত ধরে নিলেও এরা স্বতঃসিদ্ধ নয়, কারণ প্রাকৃতিক বিবর্তন এবং সামাজিক বিবর্তন এক নয়। সামাজিক বিবর্তনে মানুষের সচেতন প্রয়োগ আছে যা প্রকৃতির বেলায় সত্য নয়। তাই দেখা যাচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক এই আধিপত্যের বিরুদ্ধে নারী-পুরুষ উভয়ের সংগ্রােেমর ফলে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে এবং নারী তাঁর শরীর তথা যৌনতার স্বাধীনতা উপভোগ করছে। তবে সামাজিক বিবর্তনে সচেতন প্রয়োগ ছাড়াও এর বিকাশের নিয়মেও সমাজ রূপান্তরিত হওয়ার পথে সদা চলমান। 

এই চলমানতাই বিদ্যমান সমাজের চাইতে উন্নততর সমাজ নির্মাণে মানুষ সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছে এবং এর ফলে পরিবর্তন সাধিত হয়ে চলেছে। সামন্তবাদী সমাজে মানুষকে বিশেষত নারীকে যেভাবে দেখা হতো, পুঁজিবাদী সমাজে তা বদলে গেছে। পুঁজিবাদ মানুষকে তার দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে আর একটি দাসত্বে বন্দী করেছে, কিন্তু তা আগের অবস্থার চেয়ে উন্নত। এই ব্যবস্থায় মানুষ তার শ্রম এবং পণ্য বিক্রি করার স্বাধীনতা অর্জন করেছে যা তাঁর আগের সমাজ অর্থাৎ সামন্ততন্ত্রে সম্ভব ছিলো না। ঠিক তেমনিভাবে এই পুঁজিবাদী সমাজের যে দ্বন্দ্বের অমীমাংসার ফলে বৈষম্য এবং আধিপত্য বিরাজ করে, তাঁর নিরসন হবে এর রূপান্তর তথা সমাজতান্ত্রিক সমাজ কায়েমের মধ্য দিয়ে। মানুষের আপাত গন্তব্য এই শোষণহীন সমাজের দিকে যাত্রায়। একদিকে বিকাশের গতিমুখ সেদিকে এবং মানুষের সচেতনতাও সেই গতিমুখের সপক্ষে নিবেদিত। কিন্তু পুরাতন প্রতিষ্ঠান সহজে তাঁর স্থান ছেড়ে দেয় না বলে সময় এবং সংগ্রাম উভয় এর প্রয়োজনের সঙ্গে যুক্ত। লেখক: ঔপন্যাসিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়