শিরোনাম
◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

প্রকাশিত : ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ০১:৪০ রাত
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ০২:২৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যে কারণে ‘পাঠান’ সিনেমা মুক্তিতে বাধা দেওয়া উচিত নয়

ইমতিয়াজ মাহমুদ: [২] পাঠান সিনেমাটা বাংলাদেশে যদি কেউ আমদানি করতে পারেন, তাইলে খুবই ভালো হয়। যতটুক জানি, এমনিতে আইনগতভাবে ভারতীয় সিনেমা আমদানি নিষিদ্ধ নয়, কেবল সরকারের কোনো বিভাগ বা মন্ত্রণালয় থেকে একটা পুর্বানুমতি বা অনাপত্তি বা ওই রকম কিছু একটা নিতে হয়। এইরকম অনেক পণ্য আছে, যেগুলো আমদানির জন্য বা বাংলাদেশে বাজারজাত করার জন্য সরকারের অনুমতি নিতে হয়। সরকারের উচিত হবে না পাঠান সিনেমাটি বা অন্য যেকোনো ভারতীয় সিনেমা বাংলাদেশে আমদানির ক্ষেত্রে কোনো বাধা দেওয়া। মানুষ যদি দেখতে চায় দেখবে, সে তো আমরা এমনিতেই দেখতে পারবো আজ না হলে কাল বা পরশু। হয়তো সিনেমা হলে নয়, কিন্তু টেলিভিশনের পর্দায় তো দেখতেই পাবো আরকি। 

পাঠান দুনিয়ার সর্বত্র যেরকম জনপ্রিয় হয়েছে, আমার ধারণা বাংলাদেশে সিনেমাটি তরতাজা থাকা অবস্থায় মুক্তি দিতে পারলে হল মালিকরা ভালো ব্যবসা করতে পারবেন। কেন জানে, হয়তো বেশকিছু সিনেমা হল আবার নতুন করে খুলতেও পারে। এমনিতেই দেশে অসংখ্য সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। এই যে গত কিছুদিনে বেশ কয়েকটা দেশি সিনেমা এতো জনপ্রিয় হয়েছে, লোকে দেখেছে টিকিট কেটে। দেশের অনেক জায়গাতেই মানুষ সেইসব সিনেমা দেখতে পায়নি কোনো সিনেমা হল নেই বলে। ঢাকাতেই দেখেন কতোগুলো সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। গুলিস্তান শাবিস্তানও বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ এই হলগুলো তো একরকম আমাদের হেরিটেজের অনিবার্য অংশ ছিল। ঢাকা শহর আর গুলিস্তান সিনেমা হল যেন অভিন্ন ছিলো। একটা ছাড়া আরেকটার পরিচয় অসম্পূর্ণ। 

[৩] শুনেছি আমাদের দেশের সিনেমার লোকেরা নাকি কেউ কেউ নানারকম পাঠান সিনেমাটি আমদানির বিপক্ষে নানা কথা বলেছে। কেউ বলেছে ওদেরকে টাকা দিতে হবে, কেউ বলেছে আমার সিনেমা ভারতে মুক্তি দিতে হবে ইত্যাদি। এইসব হাস্যকর বালখিল্য কথা যে ওরা বলবে সেটাতে অবাক হওয়ার কিছু নাই। ওরা নিজেরা বাংলাদেশে ছয় সাতশ সিনেমা টিকিয়ে রাখার মতো কোন সিনেমা তৈরি করতে পারেন না। একটা সিনেমা হল সারাবছর সিনেমা চালিয়ে কিছু ব্যবসা করবে সেরকম সিনেমা আমদের দেশে তৈরি হয় না। সিনেমাকে যদি একটা শিল্প বলেন, তাইলে সেখানে তো লোকপ্রিয় বাণিজ্যিক ছবি, মূলধারার বাইরে ছবি, এক্সপেরিমেন্টাল ছবি, বিকল্প ধারার ছবি সবরকম সিনেমা তৈরি হবে। যার যেটা ইচ্ছা দেখবেন। আপনারা কি তৈরি করেন? 

আপনারা যদি একটা ভাল সিনেমা তৈরি করতে পারেন তাইলে কেবল ভারত কেন, বিলেতে, ইতালিতে, ফ্রান্সে সবখানে লোকে সেই সিনেমা দেখবে। ভাষা তো কোন বাধা নয়। নানা দেশে বাঙালীরা বাস করে। আর সাবটাইটেল বা ডাবিং করা সেগুলো তো আছেই। বাংলা সিনেমা বিদেশে দেখিয়ে নাম করেছে, টাকা কামিয়েছে নাম কামিয়েছে সেরকম কম হয়েছে, কিন্তু একদম যে হয়নি সেটা তো নয়। সত্যিজত রায়ের সিনেমা কি দুনিয়া কাপায়নি? বাণিজিয়িক ছবিও যদি ভালো হয়, তাইলে ভারতে মুক্তি পাবে নিশ্চয়ই। ওরা তো ভিনদেশি সিনেমা আমদানি করে। আপনারটা কেন করবে না। কিন্তু আপনার মাল্টা তো সেরকম হতে হবে। নাকি? আপনি বানবেন পচা জিনিস আর আশা করবেন যে বিদেশে লোকে আপনার এই পচা জিনিস পয়সা দিয়ে দেখবে সেটা তো হবে না ভাই সাহেব। ওরা তো আমাদের বই কেনে, আমাদের দেশ থেকে জামাকাপড়ও কিনছে আজকাল। সিনেমা কেন নয়? 

[৪] আর পাঠান সিনেমা এখানে দেখালে ওরা আমাদের শিল্পী সমিতিকে টাকা কেন দিবে? আপনারা সেই সিনেমাতে অভিনয় করেছেন? কোন কাজ করেছেন? বিনা কাজে বিনা পরিশ্রমে টাকা চাইবেন, শরম লাগবে না? পরিবেশকরা বা প্রদর্শকরা হয়তো আপনাদেরকে ফ্রি টিকেট দিবে, বা আপনাদের জন্যে বিশেষ শো করবে, সেগুলো তো আলাদা কথা। কিন্তু আপনাদেরকে কেন টাকা দিবে? মশকরা পেয়েছে?। বছরে দশটা ভাল ছবি বা লোকপ্রিয় ছবি করতে পারেন না। যাও দুই চারটা হয় সেগুলি আবার করে এফডিসির বাইরের লোকেরা। আপানদের তো শরম পাওয়ার কথা। নাকি? কাজের কাজটা করবেন না, সারা বছর ইলেকশনে লোক হাসানো ছাড়া আপনাদের কোন সংবাদও হয় না। এসেছেন টাকা চাইতে- ঐ ব্যাটারা সিনেমা বানিয়েছে, আমরা টাকা দিয়ে দেখব, আপনাকে কেন টাকা দিব? 

মেহেরবানী করে সকলে মিলে সরকারকে চাপ দিন। বিদেশি সিনেমা বেশি বেশি করে আমদানি করুন। ভারতীয় সিনেমাও। পাঠান আমদানি করুন। ফারাজ আমদানি করুন। যার যেটা ইচ্ছা দেখবে। হলগুলি আবার প্রানচঞ্চল হবে। মানুষের মধ্যে সিনেমা দেখার অভ্যাস ফিরে আসবে। এর মধ্যে দিশী যারা ভাল সিনেমা বানাবে সেগুলিও লোকে দেখবে। পঞ্চাশ বছর ধরে তো আমরা আমাদের এসডিসিওয়ালাদের প্রোটেকশন দিয়ে দেখেছি। একটা প্রাণবন্ত ইডাস্ট্রি ছিল সেটাকে মাটিতে নামিয়ে এনেছে ওরা। ভাবখানা যেন ওরা যা ট্র্যাশ তৈরি করবে সেটাই আমাদেরকে গিলতে হবে! আর কত? দিশী সব শিল্পকে ছেড়ে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক শিল্পের সাথে টক্কর দিতে। সিনেমাকে কেন নয়? 

[৫] নিজদের সারা দুনিয়ে থেকে আড়াল করে রাখবেন? দেশের দর্শকদেরকে বঞ্চিত করবেন? কেন? সারা দুনিয়ার সব দর্শক যদি পাঠান দেখতে পারে, ফারাজ দেখতে পারে আমাদের দর্শক কেন দেখবে না? আমি যদি ভারতের তৈরি বা মালয়েশিয়ার তৈরি কর্নফ্লেক্স খেতে পারি, আমেরিকায় প্রকাশিত ভারতে মুদ্রিত বই পড়তে পারি, থাইল্যান্ডের তৈরি ক্যামেরা কিনতে পারি, চীনের তৈরি রাইফেল আর কামান কিনতে পারি তাইলে ভারতের তৈরি সিনেমা কেন নয়? আমাকে একটা ভাল যুক্তি দেখানÑ কেবল ওই জায়েদ খান ওমর সানিকে মনোপলি দিতে হবে সেইটা তো কোন যুক্তি হতে পারে না। লেখক: আইনজীবী। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়