শিরোনাম
◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে: অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩, ০১:২৩ দুপুর
আপডেট : ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩, ০১:২৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জাতীয় নির্বাচনে ‘ইভিএম’ ব্যবহারে বিএনপি বেশি লাভবান হতো

সুভাষ দাশগুপ্ত

সুভাষ দাশগুপ্ত: আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিভাবে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের অগ্রগতি দ্রুত থেকে দ্রুততর করা যায়। এই রাজনৈতিক দলটি যখনই ক্ষমতায় আসে, প্রথম যে পরিকল্পনা হাতে নেয় তাহল সবক্ষেত্রে অতি উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা। অর্থাৎ, যেখানে উন্নয়ন-সেখানে উন্নত প্রযুক্তি। এই পথ ধরে না চললে মাত্র ১৪ বছরে দেশে এত উন্নতি করা কিছুতেই সম্ভব হত না। ডিজিটাল দেশ গড়ার একমাত্র হাতিয়ার হল সমাজ নির্মাণের প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্রুততার সাথে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার। এর সাহায্যে সমাজের প্রচলিত অনিয়ম ও দুর্নীতির পথ রূদ্ধ করা যায় অতি সহজে। 

বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশে একটি স্বচ্ছ নির্বাচন ব্যবস্হা ও তার  ‘লিগেল ফ্রেমওয়ার্ক’ তৈরী করা হয়েছে, যা অনেক অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে আজও গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এই ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মহলেরও দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। এটি একটি শক্তিশালী এবং স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান যা অতি অল্প সময়ের মধ্যে জাতীয় থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচন অত্যন্ত সফলতার সহিত সম্পন্ন করতে পারে। নতুন আইনি কাঠামোয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। 

এখন কথা হচ্ছে এত স্বচ্ছ নির্বাচন ব্যবস্থা থাকার পরেও দেশে বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হবার আগে থেকেই কেন বলা হয়ে থাকে নির্বাচন সুষ্ঠ হয়নি। আমরা সব সময় বলি ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পুর্ণ স্বাধীন এবং সে দেশে যেকোনোনির্বাচন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করা হয়, আমাদের দেশে কেন হয় না? এক্ষেত্রে বলা প্রয়োজন, বিভিন্ন সময়ে ভারতের নির্বাচন কমিশনাররা প্রকাশ্যে বলে থাকেন যে, মাঠ পর্যায়ে নির্বাচন মনিটর ও সংগঠিত অনিয়মের সময়মত প্রশাসনিক ব্যাবস্থা নেয়াতাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাদের কার্যক্রম অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন করা যায় সাব-জেলা পর্যন্ত, তার নিচের স্তরে বিশেষ করে পঞ্চায়েত পর্যায়ে তাদের নিয়ন্ত্রনের সাংবিধানিক ক্ষমতা থাকলেও প্রায়শ প্রয়োগ করা যায় না। সুতরাং, এ ধরনের সমস্যা সব দেশে আছে এবং বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। 

তবে প্রশ্ন হচ্ছে ভোট কেন্দ্রে কেন রাজনৈতিক সহিংসতা হয় এবং এর থেকে পরিত্রাণের কোন উপায় আছে কি? 

ভোট কেন্দ্রে যে গন্ডগোল হয়, তার অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রতিদ্বন্ধী রাজনৈতিক দলগুলি মধ্যে ভোটের সময় রাজনৈতিক সদ্ভাব ও পরষ্পরের মধ্যে সহযোগীতার অভাব। এর জন্য নির্বাচন কমিশনকে সবসময় দোষারোপ করার কোন কারণ আছে বলে আমার মনে হয় না। ভোট কেন্দ্রে সহিংসতার ঘটনা ভারতে ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার অন্যতম কারণ রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেধৈর্য ও সহনশীলতা আগের চেয়ে ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। 

আমাদের দেশে এর অন্যতম কারণ হলো শক্তিশালী বিরোধী দল এখনও গড়ে না উঠার জন্য। স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামীলীগকে কাউন্টার দিতে পারে এমন কোন রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি এখনও হয়নি। যে বাঙালী জাতি, হাজার বছরের রাজনীতিরইতিহাসে সমৃদ্ধ সে দেশে সামরিক বাহিনী থেকে সৃষ্ট রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্ধী হওয়া আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। এক কথায় বলা চলে, প্রতিদ্বন্ধী রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে রাজনৈতিক দর্শন ও তা বাস্তবায়নে পাহাড়প্রতিমফারাকের কারণে ভোট কেন্দ্রে বিভিন্ন রকমের আইন বহির্ভূত অনাভিপ্রেত অবস্হার সৃষ্টি হয়। ভারতের রাজনৈতিক দলগুলিরমধ্যে আদর্শগত দ্বন্ধ বাংলাদেশ থেকে অনেক অনেক কম, তাই নির্বাচনী সংহিসতা ও কম। 
সামরিক ছাউনিতে জম্ম নেয়া এবংদেশের বাস্তবতায় অপ্রাসংগিক রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে আওয়ামী লীগকে জাতীয় নির্বাচনেপরাজিত করার সম্ভাবনা নেই বললে বাডিয়ে বলা হবে না। এজন্য, আওয়ামী লীগকে ভোটে জয়ের জন্য ইভিএম এর প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। অন্যদিকে, ৮০০০ কোটি টাকা ব্যয় করে ত্রুটিপুর্ন ইভিএম ক্রয় করা হবে, একথা ভাবতেও অবাক লাগে। সমস্যাটা ছিল এর ব্যবহার করা নিয়ে। কারণ অনেক ভোটার এই যন্ত্র ব্যবহার খুব সহজে আয়ত্ব করতে পারেনা। 

এখন, ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির জেতার কারণগুলি খুব সংক্ষেপে খতিয়ে দেখি। ১৯৯১ সালে জেতার দুটি কারণ ছিল। প্রথম বহুল প্রচারিত ‘আপোষহীন নেত্রী’ স্লোগান, যা সাধারন জনগনকে আকৃষ্ট করে এবং দ্বিতীয় হল বিএনপির পক্ষে জামাতে ইসলামির গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যাপক নির্বাচনী প্রচারণা। ২০০১ সালে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সংবিধান বর্হিভূতকার্য পরিচালনার কারণে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় বসার সাথে সাথে ২১ জন সচিবকে তৎক্ষণাৎ বদলি করে। যদি কোনপূর্ব পরিকল্পনা না থাকত তবে এত অল্প সময়ে এ কাজ করা কিছুতেই সম্ভব ছিল না। এটা বাংলাদেশে ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। এর ফলে সমস্ত নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পুর্ণভাব ভেঙে যায়। 

শেষ করতে চাই এই বলে যে, বিএনপি যদি ইভিএম ব্যবহারের দাবী মেনে নিত তবে তাদের জন্য ভাল হতো, কারণ তাদের জনপ্রিয়তা যাচাই করা সহজ হতো এবং দেশও উপকৃত হতো। আবারও বলছি, যেকোনো ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতি হ্রাস করার একমাত্র না হলেও অন্যতম উপায় হল উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তি বিমুখ রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যত খুব সুখকর হবেনা।

লেখক: প্রাক্তন সিনিয়র টেকনিকাল অফিসার, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়