শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩, ০১:১১ রাত
আপডেট : ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩, ০১:১১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কোথাও কি বলা হয়েছে, বানর থেকে মানুষ এসেছে বা মানুষের পূর্ব পুরুষ বানর ছিলো?

শঙ্কর মৈত্র

শঙ্কর মৈত্র: ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বে কোথাও কি বলা হয়েছে, বানর থেকে মানুষ এসেছে বা মানুষের পূর্ব পুরুষ বানর ছিলো? পাঠ্যপুস্তকেও তো এমন কিছু লেখা হয়নি। তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে একটা চিহ্নিত গোষ্ঠী এসব গুজব ছড়াচ্ছে কেন? মেজর জেনারেল ( অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীমের মতো লোকও একটি ইউটিউব চ্যানেলে গুজব ছড়িয়ে কোন যুক্তিতে বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন করে কোমলমতি শিশুদের ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। ইব্রাহীম সাহেব, জেনে-বুঝে কেন গুজব ছড়াচ্ছেন? তিনি কি দেখাতে পারবেন পাঠ্যপুস্তকে বানর থেকে মানুষ এসেছে এমন কথা লেখা হয়েছে? এই মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে আগুন নিয়ে খেলছেন কেন? গুজব আর ধর্মীয় উন্মাদনা কতো ভয়ংকর তারা বুঝেন না? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব কেন? মুক্তচিন্তার মানুষগুলোই বা নীরব কেন? ড. জাফর ইকবালকে টার্গেট করে যা বলা হচ্ছে তাতে সেই অন্ধকার, প্রগতিবিরোধী লোকগুলো পরিকল্পিতভাবেই করছে। যারা এর সঙ্গে জড়িত তারা অপরিচিত কেউ না। কিন্তু এদের গুজবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন সরকার? 

আমি নিশ্চিত ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্ব কিংবা ‘অন দ্যা অরজিন অব স্পেশিস’ বইটি না পড়ে না জেনে শোনা কথায় বানর তত্ত্ব নিয়ে মাঠে নেমেছে ধর্মান্ধরা। ১৮৫৯ সালে প্রকাশিত ডারউইনের এই তত্ত্বের মোদ্দা কথা হলো, কোনো প্রাণি ক্রমাগত অভিযোজনের ফলে আপন পরিবেশের জন্য বিশেষায়িত হতে হতে একসময় নতুন একটি প্রাণিতে রূপান্তরিত হয়। যাকে ন্যাচারেল সিলেকশন বা প্রাকৃতিক নির্বাচন বলা হয়েছে। ডারউইনের এই গবেষণা একজন বিশ্বাস করতে পারেন নাও পারেন। বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মের কোনো বিরোধ নেই। বিজ্ঞান যুক্তি প্রমাণে বিশ্বাস করে আর ধর্ম শুধুই বিশ্বাস। এখানে কোনো যুক্তি বা প্রশ্ন খাটবে না। 

আমি দ্বান্দ্বিকবাদী। বিজ্ঞানের যুক্তিকেও সম্মান জানাই, ধর্মের বিশ্বাসিকেও শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু এ নিয়ে কেউ উগ্রতা দেখালে, যুক্তি না মানলে তাকে আমি ঘৃণা করি। না পড়ে না জেনে হুজুগে আর গুজবে যারা চলে তারাইতো মূর্খ। ধর্মের কয়েকটি গ্রন্থ পড়েই তো আর ধর্মিক হওয়া যায় না। আর শুধু ডারউইনের তত্ত্ব পড়েই বিবর্তন বা মানবজাতির সৃষ্টির ইতিহাস জানা যায় না। চার্লস ডারউইনের জন্মের হাজার বছর আগে একজন মুসলিম দার্শনিকও তো বিবর্তন বা ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’ নিয়ে তত্ত্ব দিয়ে গেছেন।

৭৭৬ সালে ইরাকে জন্ম নেওয়া এই দার্শনিকের নাম আল জাহিজ। পুরো নাম আবু উসমান আমর বাহার আলকানানি আল বাসরি। তিনি ছিলেন মহা পণ্ডিত, দার্শনিক। অন্তত দুশো বই লিখেছিলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বই, কিতাব আল হায়ওয়ান বা দ্যা বুক অব অ্যানিমেলস। এই বইয়ে তিনি সাড়ে তিনশো প্রাণির পরিচয় তুলে ধরেছেন। মুসলিম এই দার্শনিকের মতে, ‘টিকে থাকার জন্যে প্রাণিদের লড়াই করতে হয়। লড়াই করতে হয় তাদের খাদ্যের জন্য, অপরের খাদ্য না হওয়ার জন্য এমনকি প্রজননের জন্যও প্রাণিদের সংগ্রাম করতে হয়। নিজেদের বেঁচে থাকা নিশ্চিত করার জন্য পরিবেশের নানা কারণে প্রাণিরা নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এবং নতুন নতুন প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়। তিনি বলেছেন, যেসব প্রাণি প্রজনন ঘটাতে টিকে থাকতে পারে তারা তাদের সফল বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে পারে। আল জাহিজের মতে, প্রাণিকুলকে টিকে থাকার জন্য অনবরত সংগ্রাম করতে হয় এবং একটি প্রজাতির চেয়ে আরেকটি প্রজাতি শক্তিশালী হয়’।

তাহলে দেখা যাচ্ছে ডারউইনের তত্ত্বের চেয়ে আরও এগিয়ে আল জাহিজের তত্ত্ব। তিনি ডারউইনের হাজার বছর আগে জন্ম নেন। কিন্তু মূর্খগুলো কোথা থেকে বানরের কথা শুনেছে আর এ নিয়ে লাফালাফি করছে? মহাবিশ্বের প্রাণি জগতে মানুষ একটি প্রাণি মাত্র। ৩৪ লক্ষ প্রাণ আছে এর মধ্যে মানুষও একটি। অন্য প্রাণির চেয়ে তফাৎ শুধু মানুষের বুদ্ধি। সবচেয়ে বেশি বুদ্ধি। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব আমি স্বীকার করি, কিন্তু সেটাও তো মানুষই বানিয়েছে। এটা শুনে অন্যপ্রাণি যদি হাসাহাসি করে কিংবা হাসছে না যে তা কী করে বলবো? আমি ব্যক্তিগতভাবে বিবর্তনকে স্বীকার করি। আমি ক্ষেত খামারে ব্যাঙাচির রূপান্তর দেখেছি। প্রজাপতিকে ফরিঙ-এ রূপান্তর হতে চোখের সামনে দেখেছি। একটা শুক্রানু লক্ষ লক্ষ শুক্রানুর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা আর শেষ পর্যন্ত মাতৃজঠরে মানবশিশু হওয়া আমরা প্রত্যেকেই বাস্তব উদাহরণ। অন্ধবিশ্বাসী হয়ে নয়, যুক্তির আলোতে পৃথিবী দেখুন। সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যান। হুজুগে আর গুজবে কান না দিয়ে নিজে পড়ে জেনে কথা বলুন। লেখক: সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়