শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩, ০১:০৩ রাত
আপডেট : ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩, ০১:০৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিচ্ছিন্নতার বিভ্রম এবং সৃষ্টির মানবিন্দু

রাজিক হাসান

রাজিক হাসান: একটি ছোট ছেলে আপন মনে কাগজে কী যেন আঁকছিল। বাবা বললেন, কী আঁকছিস, বাবা? আমি ঈশ্বরের ছবি আঁকছি। বাবা বললেন, ঈশ্বরকে তো দেখা যায় না, ছবি আঁকবি কী করে? ছেলে কপট রাগ করে বললো, বাবা তুমি থামতো। আমি ছবিটা না আঁকলে তুমি দেখবে কেমন করে। পৃথিবীতে সহস্রাধিক ধর্ম রয়েছে এবং একেক ধর্মে ঈশ্বর সম্পর্কিত ধারণা একেক রকম হয়ে আছে। শুধু তাই নয়, একই ধর্মের অনুসারীদের মাঝেও দেখি ওদের ঈশ্বর সম্পর্কিত ধারণা ভিন্ন ভিন্ন হয়। যদি দশজন সাধারণ মানুষের কাছে ‘ঈশ্বর সম্পর্কে ধারণা জানতে চাওয়া হয়’ বলা বাহুল্য সেই দশজন মানুষের দশ রকম জবাব পাওয়া যায়। কারণ ঈশ্বর একটি বিমূর্ত ধারণা। তাই ঈশ্বর ধারণা একেক মানুষের কাছে একেক রকম হয়। সত্তর হাজার বছর আগেও মানুষ ছিল প্রাণিজগতের আর দশটা প্রাণীর মতো সাধারণ একটি প্রাণী। তাদের বিচরণও সীমাবদ্ধ ছিল। তখন মানুষের ঈশ্বর ধারণা ছিল না। ধীরে ধীরে সে আগুন জ্বালাতে শিখল। শিখল আগুনের ব্যবহার। এই আগুনের ব্যবহারটাই মানুষকে প্রাণিজগতের আর দশটা প্রাণী থেকে আলাদা করে দিল। এরপর নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানবসভ্যতা এগিয়ে গেলো। মানুষের মাঝে জন্ম হলো ঈশ্বর চিন্তা। ঠিক কতো আগে এই ঈশ্বর চিন্তা মানুষকে প্রথম আচ্ছন্ন করেছিল তার সঠিক কোনো ইতিহাস নেই। 

তবে ধারণা করা হয় মানুষের প্রথম ঈশ্বর চিন্তা আসে তাঁর অজানা আতঙ্ক বা ভীতি থেকে। মানুষের যেমন বিবর্তন আছে, ঈশ্বর চিন্তারও বিবর্তন আছে। সেই আদিধর্ম গ্রন্থে আমরা যে ঈশ্বরকে পাই সেই ঈশ্বর ভয়ঙ্কর এক ঈশ্বর। মানুষকে শাস্তির নামে নানা ভয় ভীতি দেখায়। মানুষের সঙ্গে তার পভু-দাসের সম্পর্ক বলা যায়। তারপর একদল মানুষ নিয়ে আসে ঈশ্বর সম্পর্কে নতুন এক ধারণা। ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক পিতা-পুত্রের। এরপর তাদেরই আর এক গোত্র বলে ওঠে ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক মাতা-পুত্রের। আরেক একদল ধারণা দিল ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক বন্ধুর। আরেক দল মানুষ ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে তুলনা করল যুবক যুবতীর প্রেমের সম্পর্কের সঙ্গে। দীর্ঘবছর ইউরোপ বাসের কারণে জেনেছি ওই সমস্ত দেশের নবীন প্রজন্মের একটা বড় অংশ ‘ঈশ্বর’ সম্পর্কে কোনোরূপ ধারণা ছাড়াই বেড়ে উঠছে এখন। ঈশ্বর সম্পর্কে কিছুমাত্র কৌতূহল নেই এদের। কেন কৌতূহল নেই? এটা অনুসন্ধান করতে গিয়ে তারা দেখেছে প্রায় সবাই ঈশ্বরকে এমন এক অস্তিত্ব হিসেবে জানে যিনি শাস্তি দেন। আতঙ্কের। তাদের মতে শিশুচিত্তকে আতঙ্ক গ্রস্থ করার, কলুষিত করার এমন ভয়ানক নজির আর হতে পারে না।

ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে মজার এক মন্তব্য পেয়েছিলাম এক জাপানি বন্ধুর কাছ থেকে। সে বলেছিল, আমি ঈশ্বরকে বিরক্ত করি না, সেও আমাকে বিরক্ত করে না। বন্ধুটির মতে, ভুল ধারণা থাকার চেয়ে, ধারণা না থাকা শ্রেয়। এসো বন্ধুরা এবার ঈশ্বর ধারণা সম্পর্কে আমরা ভাবি কিছুক্ষণ। কিছু  সময়ের জন্য ধরে নাও যে তুমিই  ঈশ্বর। তুমি মহাবিশ্বের সূচনার ও সূচনার বহু আগে থেকেই আপনি আছ। না আকার না আকৃতি, কিছুই তৈরি হয়নি তখনো। শুধুই শূন্যে ভাসমান তুমি। আকার নেই, আকৃতি নেইÑ একটি ভাসমান চেতনা মাত্র। যেন অস্তিত্ববিহীন এক অস্তিত্ব। কী করে জানলে তুমি, তোমার অস্তিত্বের আভাস? তোমার অস্তিত্বের কোনো মানবিন্দু নেই। তাই তোমার ক্ষমতা সম্পর্কেও তোমার কোনো ধারণা নেই। তোমার তখনও জানা নেই তোমার অসীম ক্ষমতার বৃত্তান্ত। তুমিই ঈশ্বর। তোমার বাইরে কিছুই বিরাজ করেনা। তুমি শুদ্ধ, আকারহীন ও অসীম। অসীম ব্যাখ্যাতীত। এবার, তোমার ইচ্ছা হলো নিজেকে জানতে। তুমি কে, তোমার ক্ষমতার পরিধি।

তাই তোমার  সৃষ্টির ইচ্ছে হলো। ‘সৃষ্টি’ কিন্তু, যেহেতু তুমি সর্বময় ও অসীম, তোমার বাহিরে কিছুরই অস্তিত্ব নেই। তাই যা কিছু সৃষ্টি তাঁর সবই তোমার হতে উৎসরিত। তোমার অসীমের সীমার বাইরে আর কিছুই নেই। তাই তুমি সীমানা আঁকতে শুরু করলে। উপরে-নিচে, ডানে-বায়ে। এভাবেই ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র সৃষ্টির সূচনা হলো তোমা থেকেই। এই সৃষ্টি তোমার থেকে আলাদা নয়। বরং প্রতিটি সৃষ্টিতেই ঈশ্বর বিদ্যমান। এভাবেই তুমি একটু করে নিজেকে জানতে শুরু করলে। নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে বুঝতে শুরু করলে। তোমার ভেতর থেকেই সৃষ্টি করলে ক্ষুদ্র বোধসম্পন্ন সত্তাসমূহ। তারাই আসমানের দিকে চেয়ে তোমাকে খোঁজে আর বলে, ‘হে ঈশ্বর! এই আমি। এই তো আমাদের ক্ষমতা’। এভাবেই এক ঈশ্বর বিরাজ করেন বহুর মধ্যে। এভাবেই এক ও বহুর বিতর্কের জন্ম। যদিও এক থেকে বহুর সৃষ্টি। তাই বহুর মধ্যেই একের বসবাস। বিচ্ছিন্নতার বিভ্রম থেকেই  এক একটি সৃষ্টির মানবিন্দুর অবতারণা হয়েছে মাত্র। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়