জান্নাতুল মাওয়া আইনান: হলে ছিলাম প্রায় একবছর। ইডেনের ব্যবস্থা কী জানি না। তবে আমাদের হলে প্রায় সব মেয়েরাই সিরিয়ালের ভিত্তিতে প্রশাসনিকভাবে হলে উঠতো। ছাত্রলীগের মেয়েদের কয়েকটা রুম ছিলো। ওই কয়েকটা রুমে ওরা হয়তো তাদের ক্ষমতার অপচর্চার অংশ হিসেবে কিছু মেয়েকে সিরিয়াল ছাড়াই তুলতো। এই রুমগুলো এবং লীগের মেয়েদের সাধারণ ছাত্রীরা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতো। ছেলেদের হলের মতো মেয়েদের হলে ভাই কালচার নাই। ভাই দেখলে দাঁড়িয়ে পিছে হাত দিয়ে ত্যালত্যালায়া হাসতে হাসতে সালাম আমরা সাধারণ মেয়েরা দিই না, দিতামও না। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কাঠামোতে কেমনে কী হয় তা তো সাধারণের জানার কথা না। তবে ভাইদের দেখলে বিগলিত হয়ে যাওয়া, ভাইয়ের সাথে সেলফি তোলা, ভাইয়ের পায়ের কাছে নতজানু হয়ে বসে থাকা, ভাইয়ের বদমাইশিতে তাল দেওয়া, এইগুলা বেশ্যাবৃত্তি না হইলে বেশ্যাবৃত্তি কী? হলের প্রচুর ছেলে এইসব নির্দ্বিধায় করতো।
ক্ষমতাবানদের পায়ের কাছে বসে থেকে ক্ষমতার একটু আধটু বাতাস খাওয়ার চর্চা তো বাংলাদেশের ব্যাডারা চিরকাল করে আসতেছে। তো এইসব ব্যাডাদের কেউ বেশ্যা-খানকি বলে না কেন? কথা হচ্ছে ছাত্রলীগের এই মেয়েরা তাদের সংগঠনের মধ্যে থাকা এই নোংরা ব্যাডাতান্ত্রিক ক্ষমতার কাঠামোকে বদলাইতে চায় কি না? ছাত্রী হলের নিয়ম ছিলো রাত নয়টায় হলে ঢুকে যেতে হবে। সাধারণ মেয়েরা জরুরি প্রয়োজনে এই নিয়মের পরিবর্তন চাইতো। সাধারণ মেয়েদের এই চাওয়ায় লীগের মেয়েদের কোনোদিন দেখি নাই পাশে দাঁড়াইতে। কারণ ওদের জন্য হলের গেট সারারাত খোলা। ওরা লীগ করে এই যে ক্ষমতাটা পাইতো সেই ক্ষমতা যদি সব সাধারণ মেয়েদের এমনেই দিয়ে দেওয়া হয় তাইলে আর আলাদা করে ওদের রাজনীতি করার দরকার কী? এজন্যই হয়তো তারা কখনো হল প্রশাসনের কাছে তেমন কোনো দাবি করতো না।
একদিন আমি কী যেন একটা কাজে হল অফিসে গিয়েছি। পুরোটা সময় হলের ম্যাডাম আপা আমার সাথে ক্যাটক্যাট করে কথা বললেন। ভাবলাম, উনার বোধহয় কোনো কারণে মন-মেজাজ খারাপ। সাথে সাথেই দেখি লীগের এক মেয়ে ড্যাং ড্যাং করে তার অফিসে ঢুকে গেলো। ম্যাডাম আপা রাগ করলেন না। অবাক হয়ে দেখলাম, ম্যাডাম আপা হাসতেও পারেন। সে কী ত্যালত্যালে খোশগল্প। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষককে শ্রদ্ধা করতে পারি না এইসব নানান কারণে। ইডেনের ঘটনাটা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নোংরামির আরেকটা অন্যতম দিক উন্মোচিত করেছে। এই সুযোগে ‘সেক্সস্লেভারি’ টাইপের বড় বড় শব্দ এনে সাধারণ ছাত্রীদের জীবনটা আরো কঠিন করে দিবেন না। এমনিতেই আমাদের মেয়েরা পড়াশোনা করতে যে বাসা থেকে বের হয়, ওদের অনেক ফাইট করতে হয় এইজন্য। শুধু রাজনৈতিক সংগঠন না, আমাদের দেশে আমার মনে হয় না কোনো প্রতিষ্ঠানেই অধীনস্থের সাথে নানাবিধ সম্পর্ক নির্ণয়ে কোনো লিখিত নিয়ম কানুন আছে। আর আমাদের অঞ্চলের পুরুষরা তো অধীনস্থদের সাথে যৌনতাকে নরমাল বলে মনে করে। এটাকে তো তারা অপরাধ বলে গণ্যই করছে না। প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালার দাবীতো নারীবাদীরা অনেক আগে থেকেই করে আসছে। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তনের দাবি ছাত্রলীগের ছেলে মেয়েদেরই করতে হবে। ইডেনের মেয়েদের উচিত হবেÑএইসব বদমায়েশির জন্য ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে বয়কট করা। আর আপনারা, সাধারণ মেয়েদের শান্তিতে পড়ালেখা করতে দেন। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :