শিরোনাম
◈ সকালে উঠেই এক লিটার পানি পান: কতটা উপকারী? বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন? ◈ তারেক-জুবাইদার দুর্নীতির মামলায় ‘ত্রুটিপূর্ণ বিচার’, পূর্ণাঙ্গ রায়ে খালাস হাইকোর্টে ◈ বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করা সেই তরুণীকে নিয়ে যা বললেন আহমাদুল্লাহ (ভিডিও) ◈ জুলাই স্মরণে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে ফের প্রকম্পিত ঢাবি (ভিডিও) ◈ পর্যাপ্ত অর্থ ও হোটেল বুকিং না থাকায় কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে ৯৬ বাংলাদেশি আটক ◈ বাড়ির নিচতলায় গ্যারেজে বসে চোখের পানি ফেলছেন, ছেলের বিরুদ্ধে মাকে বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ ◈ ইংল‌্যা‌ন্ডের লর্ডসে ডুবলো ভার‌তের রণতরী, সিরিজে এ‌গি‌য়ে গে‌লো ইং‌রেজরা ◈ কানাডার টরন্টো শহরে ইসকনের রথযাত্রায় ডিম নিক্ষেপ, ঘটনায় ভারতের গভীর উদ্বেগ (ভিডিও) ◈ একটি দল লম্বা লম্বা কথা বলা ছাড়া সুকৌশলে চাঁদা ও হাদিয়া নেওয়া ছাড়া কোনো কাজ করে না: মির্জা আব্বাস ◈ শাপলা প্রতীক নিয়ে রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক!

প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১১:৩০ দুপুর
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১১:৩০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মানুষের আস্থার প্রতীক তিনি

এম নজরুল ইসলাম

এম নজরুল ইসলাম: কল্যাণমন্ত্রে যাঁর দীক্ষা, রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘মানুষের ধর্ম’ যিনি ধারণ করেন হৃদয়ে, জনগণের সেবা যাঁর ব্রত, তিনিই তো অমৃতের সন্তান। সামরিকতন্ত্র ও ‘কারফিউ গণতন্ত্রে’র দেড় দশকের দুঃশাসন এবং গণতন্ত্রের নামে দুই দফায় এক দশকের অপশাসনের মূলোৎপাটন করে যিনি বাংলাদেশকে আজ নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। আজকের বাংলাদেশকে নিয়ে তাই উচ্ছ্বসিত সারা বিশ্ব। একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশকে নিয়ে সংশয় ছিল সারা বিশ্বের।

সেই অবস্থা থেকে আজকের উত্তরণে যিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি শেখ হাসিনা। তাঁর সাহসী নেতৃত্বে নেতিবাচক অবস্থান থেকে বিশ্বে ইতিবাচক দেশ হিসেবে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ।

মানবকল্যাণবোধ আর দেশপ্রেমে উজ্জীবিত শেখ হাসিনা নিজের সবটুকু সামর্থ্য ঢেলে দিয়ে শোষিত-নির্যাতিত জনতার কল্যাণে নিয়োজিত রয়েছেন চার দশকেরও অধিককাল। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হন। দেশে ফিরে আসার পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি যে প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে চলেছেন, এককথায় তা তুলনারহিত। অসাধারণ ধৈর্য ও পর্যবেক্ষণ শক্তি শেখ হাসিনাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। তাঁর দৃঢ়তার পরিচয় আমরা পেয়েছি ওয়ান-ইলেভেন নামের চেপে বসা শাসনামলেও। রাজনীতি থেকে তাঁকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। মিথ্যা মামলা, দীর্ঘদিনের কারাবাস তাঁকে তাঁর লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। তিনি সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন। তাঁর এই অনমনীয় মনোভাব দেশের মানুষকে সাহস জুগিয়েছে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভিলাষী ছিলেন না। তিনি এক জটিল ও বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখে গণতান্ত্রিক রাজনীতির হাল ধরে, দেশি-বিদেশি চক্রান্ত মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত ও পুনর্গঠিত করেছেন। আশির দশকজুড়ে সামরিক কর্তাব্যক্তির একচ্ছত্র স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের এবং পরবর্তীকালে নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে কারচুপিমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠান বন্ধের লড়াইয়ে তিনি সফল নেতৃত্ব দিয়েছেন। বছরের পর বছর অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করেছেন। তাঁর রাজনৈতিক চরিত্র হননের উদ্দেশ্যে নিত্যনৈমিত্তিক প্রচারণা উপেক্ষা করে ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে দলকে তিনি আবার ক্ষমতায় এনেছেন।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক ও সাম্প্রদায়িক স্বৈরতান্ত্রিক শাসকরা তাদের পাকিস্তানি প্রভুদের ইচ্ছায় মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন ধ্বংস করে চলছিল। সেই অবস্থায় শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হয়ে দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনেন।

সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরাজনৈতিকীকরণের জটিল পরিবেশে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এই নির্বাচনে বিপুলভাবে বিজয়ী হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট। সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা দুর্যোগময় সময়ে সাহস ও প্রজ্ঞার সঙ্গে দেশ ও জাতিকে পরিচালনা করেছেন। তিনি স্বৈরাচার ও মৌলবাদকবলিত, চরম দুর্নীতিগ্রস্ত, গণতন্ত্রবিবর্জিত দেশকে প্রগতি ও গণতন্ত্রে উত্তরণে সুদৃঢ় নেতৃত্ব দিয়েছেন। ইতিহাসে শেখ হাসিনার সরকারের সংগ্রাম ও সাধনা একটি উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে থাকবে।

বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের বিচার শেষে সাজা হয়েছে। চিরকালের দুর্ভিক্ষের দেশকে উদ্বৃত্ত কৃষির দেশে পরিণত করেছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে কোটি কোটি ছাত্রছাত্রীকে বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক দেওয়া এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। জঙ্গি সমস্যা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে সরকারের অনমনীয় দৃঢ়তা প্রশংসনীয়। তথ্য-প্রযুক্তির তৃণমূলভিত্তিক সম্প্রসারণ একটি বড় সাফল্য। বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে এই সরকার চমৎকার ভারসাম্যের নীতি অনুসরণ করেছে। যখন অর্থনৈতিক দুর্যোগে সারা পৃথিবী টালমাটাল, তখন বাংলাদেশ নিজেকে যে এখনো সঠিক পথে ধরে রাখতে পেরেছে, এটা সরকারের একটা বড় কৃতিত্ব। বিশ্বশান্তি, পরিবেশ রক্ষা এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার কাজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও সাফল্য বিশ্বময় স্বীকৃত। সংবিধানকে সামরিক শাসনের আবর্জনা থেকে মুক্ত করা, দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভিত্তি শক্ত করা, সর্বোপরি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া ইত্যাদি কাজ এই সরকারের এক বিরাট ইতিবাচক দিক।

আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের আজকের অবস্থান প্রমাণ করে শেখ হাসিনা অনেক বড় মাপের নেত্রী। টাইম ম্যাগাজিনের বিবেচনায় বিশ্বের প্রভাবশালী ১০ নারী নেত্রীর একজন মনোনীত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের স্বার্থে তিনি যে তাঁর বাবার মতোই আপসহীন, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা ও সমর্থনে বিশ্বব্যাংকের মতো প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করার মতো শক্তি ও সাহস অর্জন করেছেন তিনি। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি সব সময় ভাবেন।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। সাহস, প্রজ্ঞা, মমত্ববোধ, ধৈর্য, দূরদর্শিতা ও সব ধরনের প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে তিনি  শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বে অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। একজন জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা সব সময় নিজেকে প্রমাণ করেছেন। কিন্তু তার পরও এক শ্রেণির বিরুদ্ধবাদী অপপ্রচারে লিপ্ত। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তো বটেই, ছিদ্রান্বেষী ‘সোশ্যাল এলিট’ শ্রেণিও শুধু শেখ হাসিনার ত্রুটি তুলে ধরতে সচেষ্ট। তাদের অনেক অভিযোগ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। কিন্তু জনকল্যাণের মন্ত্রে দীক্ষা যাঁর, তিনি ওসব অভিযোগ গায়ে মাখেন না।

জনগণের প্রতিনিধি তিনি, জনগণই তাঁকে বসিয়েছে নেতৃত্বের আসনে। জনগণের মনের কথা তিনি বুঝতে পারেন সহজেই। শেখ হাসিনার দেশপ্রেমে কোনো ঘাটতি নেই। তাঁর চিন্তা ও চেতনায় শুধুই বাংলাদেশ ও দেশের মানুষ। তাঁর স্বপ্নের আঙিনায় যে সবুজ মানচিত্রটি আঁকা, সেটি বাংলাদেশের। সেখানে এ দেশের মানুষেরই বিচরণ।

ইতিহাস বলে, বিশ্বের অনেক সফল ও সেরা রাজনীতিকও এত দীর্ঘ সময় একটা দেশের জনপ্রিয় নেতার আসনে থাকতে পারেননি। আজ বিশ্বের খ্যাতিমান শীর্ষনেতাদের নামের তালিকায় যুক্ত হয়েছে তাঁর নাম। তিনি এখন শুধু একজন রাজনৈতিক নেত্রী নন, তিনি একজন সফল স্টেটসম্যান। মানুষের মনে শেখ হাসিনা বেঁচে থাকবেন তাঁর অতুলনীয় সাহস ও সাফল্যের ভেতর দিয়ে। আগামী দিনের ইতিহাস লিখে রাখবে তাঁর সাফল্যগাথা।

বাংলাদেশের আজকের রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় শেখ হাসিনার অবদান অনস্বীকার্য। এই অর্জন ধরে রাখতে ও উন্নত দেশ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে তাঁর গতিশীল নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের অগ্রনায়ক তিনি। তাঁকে ঘিরেই সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ।

এ দেশের মানুষের আস্থার প্রতীক তিনি। আজ তাঁর জন্মদিনে আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণতি। দীর্ঘজীবী হোন তিনি। মানুষের ভালোবাসার সম্পদে সমৃদ্ধ হোক তাঁর আগামী দিনগুলো।

লেখক : সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি, অস্ট্রিয়া প্রবাসী
nazrul@gmx.at
সূত্র: কালের কণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়