শিরোনাম
◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০২:১৬ রাত
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০২:১৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাশিয়ার যে ভূবন ভোলানো বিশ্ব মাতানো সামরিক শক্তির গল্প শুনলাম, সেটা কই?

গোলাম সারোয়ার

গোলাম সারোয়ার: অসুস্থ এবং বয়স্কদেরও যুদ্ধে যোগদানের জন্য চিঠি ধরিয়ে দিয়েছে রাশিয়া। অবশ্য গণপ্রতিবাদের মুখে কিছু কিছু ভুল স্বীকারও করছে দেশটি। রাশিয়ার কী হলো? ইউক্রেনের মতো একটি দুর্বল দেশের সাথে লড়তে গিয়ে এতো কাহিল যে, সেনাবাহিনীকে সাহায্য করার জন্য এখন রাশিয়ার জনগণকে যেতে হবে? এই শক্তি দিয়ে পৃথিবী শাসন করবে? এখন তো এমন অবস্থা যে, মিয়ানমারের সাইজের একটি দেশও যদি ইউক্রেনের সাথে যোগ দেয়, তবে রাশিয়ার নাকের পানি চোখের পানি এক হয়ে যাবে। রাশিয়ার মতো একটি সম্মানিত পরাশক্তির এই অবনমন বিশ্বের জন্যে ভালো নয়। দেশটিকে এই অবস্থায় যিনি নামিয়ে আনলেন রাশিয়ানরা ইতিহাসে তাকে ঘৃণা করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।

সত্যি হলো, রাশিয়া কোনো দুর্বল দেশ নয়। দুর্বল হলো তাদের নেতৃত্ব। দুর্বল হলো নেতার বিচক্ষণতা। তিনি একটি অন্যায় যুদ্ধে গেলেন। আমাদের ধারণা এই অন্যায় যুদ্ধে রাশিয়ার সেনাবাহিনীরও সায় নেই। তারা আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে ইউক্রেন আগ্রাসনে যেতে বাধ্য হলেন। একটি দেশকে বিনা কারণ বোমা মেরে মাটির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছেন। এটি কোনো বিবেকবান মানুষ মানতে পারে না। বিনা কারণে অগণতি নারী, শিশু ও বৃদ্ধ হত্যা কেউ সাপোর্ট করবে না। রাশিয়া সেই ২০১৪ সালে প্রথম ইউক্রেন আক্রমণ করলেন। সে সময় দেশটির কিছু এলাকা দখল করলেন। এবার আবারো সেই একই অন্যায় করলেন, সাথে যোগ করলেন কিছু কাল্পনিক হাইপোথিসিস অভিযোগ।

২০১৪ সালের রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে শিক্ষা নিয়ে ইউক্রেন ভিতরে ভিতরে প্রস্তুতি নিলেন এই দানব থেকে বাঁচার জন্যে। সেজন্যে ইউক্রেনের সব জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলেন। তারা রুখে দিলেন এবারের অন্যায় আগ্রাসন। এর ভিতরে রাশিয়ার সেনাবাহিনী যেহেতু জানে, বিনা কারণে একটি দেশে ঢুকে পড়া অন্যায়, তাদের ঈমানী শক্তি সেভাবে কাজ করেনি। পরিণামে তারা হারছে। পৃথিবীর কোনো অন্যায় যুদ্ধে হানাদার বর্গীরা অনন্তকাল ভালো করে না। এটি প্রকৃতির অমোঘ রায়। এবার তারা হারার গান ধরেছে। এই হার এখানে থেমে থাকবে না। রাশিয়া যদি অন্যের ভূমির প্রতি লিপ্সা ত্যাগ না করে তবে তাদের আরো বিপদ আছে। কারণ পৃথিবীতে তারা একাই নেই। পৃথিবীতে আরো বহু শক্তি আছে, যারা তাদের অস্তিত্বের স্বার্থে রাশিয়ার যেকোনো হটকারী সিদ্ধান্তের প্রতিকারে রেসপন্স করবে।

[৩] ভ্লাদিমির পুতিন সাহেব একেক সময় একেক কথা বলে যাচ্ছেন। প্রথমে গেলেন ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দিকে। উদ্দেশ্য কিয়েভ দখল করে পুতুল সরকার বসাবেন। তখন তাঁর গোয়েন্দারা নাকি তাঁকে বলেছেন, ইউক্রেনীয়রা রুশ সেনাদের স্বাগত জানানোর জন্য বসে আছেন। তারপর যখন ইউক্রেনের দেশপ্রেমিক জনগণ আলাতুল মার দেওয়া শুরু করলেন, তখন রাজধানী ছেড়ে পূর্ব দিকে ফিরে গেলেন তাঁর সেনারা। দেশটির মারিউপোলসহ পূর্বদিকের নগরগুলোতে নির্বিচার বোমা মারতে লাগলেন। মারতে লাগলেন নিরীহ মানুষ, নারী, শিশু এমনকি হাসপাতালে রোগী। কিছু শহরকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিলেন। চরম নিষ্ঠুরভাবে বোমা মেরেও যখন পারলেন না তখন বললেন, ইউক্রেনের কোনো মাটি দখল করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিলো না। বললেন, তাঁর খায়েস দেশটিকে নিরস্ত্রীকরণ করবেন, যেন দেশটি ন্যাটোতে যোগ না দিতে পারে। যদিও তাঁর একাধিক প্রতিবেশী আগে থেকেই ন্যাটোর সদস্য আছে।

তারপর বহু হাজার হাজার বোমা মেরেও যখন দেখলেন, ইউক্রেনের দেশপ্রেমিক জনগণ অদম্য। তাঁরা পূর্বদিকের দখলকৃত ভূমি থেকেও মার দিয়ে রুশদের তাড়াতে শুরু করলেন। তখন তিনি ডাক দিলেন রাশিয়ার সাধারণ নাগরিকদের যুদ্ধ করতে। তিনি এদের নাম ছিলো রিজার্ভ ফোর্স। মানে স্কাউটদের মতো যাদের একটু আধটু সেনা প্রশিক্ষণ আছে এবং কিছু অবসর নেওয়া বুড়ো সেনা। একটি অনৈতিক যুদ্ধে রুশরা ভালো করতে পারবে না, এটি সবাই জানে। কারণ যেকোনো যুদ্ধে একপক্ষ থাকে হানাদার। তারা হলো দখলদার, তাদের ঈমান থাকে দুর্বল। অন্যপক্ষ দেশপ্রেমিক যাঁরা লড়ে শহীদ হওয়ার জন্যে এবং নিজেদের মাতৃভূমি রক্ষা করার জন্যে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আমরা তা দেখেছি। খালি গায়ে তখন আমাদের তরুণরা পাকিস্তানের সেনাদের চরম মার দিলেন। 

এখন পুতিন সাহেব ইউক্রেন থেকে দখল করা ভূমিগুলোতে স্বৈর সামরিক শাসক মার্কা একটি হাস্যকর ভোটের আয়োজন করছেন যেন তিনি ইউক্রেনের দখল করা ভূমিকে রাশিয়ার ভূমি হিসেবে ঘোষণা দিতে পারেন। সবাই জানে এটি সম্ভব নয়। তাই তিনি একটি সিভিল ওয়ারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রাশিয়ার বেসামরিক লোকদের যুদ্ধে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। তবুও কি শেষ রক্ষা হবে? উদাহরণ দিই। যতই শক্তিশালী হোক, ইন্ডিয়া যদি আমাদের কোনো অংশ দখল করে পুতিন সাহেব মার্কা একটি হাস্যকর গণভোট দিয়ে বলে, এই অংশের জনগণ ইন্ডিয়ার সাথে যুক্ত হতে চায়। এটি কি সম্ভব? ষোল কোটি মানুষ ফুঁসে উঠবে না? একটি দীর্ঘ যুদ্ধের শুরু হবে না?

তিনি যে ভূমি লিপ্সু হয়েও বললেন, ভূমি দখল তাঁর উদ্দেশ্য ছিলো না, সেটা আজ কোথায় গেলো? ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান দখল করতে যায়। দশ বছর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরিণামে সোভিয়েত ভেঙে পনের টুকরো হয়। পুতিন সাহেব ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করে রাশিয়াকে কয় টুকরো করবেন? এটা হলো প্রথম প্রশ্ন। দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, পৃথিবীর দ্বিতীয় শক্তিধর রাষ্ট্রপ্রধানের ব্যক্তিত্ব কোন লেভেলে গিয়ে ঠেকলো? রাশিয়ার মতো রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের কথা কয়বার কয় রকমের হয়? এটি কি তাঁর ব্যক্তিত্বের সাথে যায়? তৃতীয় প্রশ্ন হলো, রাশিয়ার যে ভূবন ভোলানো বিশ্ব মাতানো সামরিক শক্তির গল্প শুনলাম, সেটা কই? ইউক্রেনে রাশিয়া সৈন্য দিয়ে কেন পারছে না? কেন জনগণ লাগছে? উত্তর আমরা জানি। আপনারা জানেন কি? লেখক ও সাংবাদিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়