শিরোনাম
◈ গাজীপুরে কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে চীনা নাগরিকের মৃত্যু ◈ প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব ও গাম্বিয়া সফর বাতিল ◈ এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.৭%: আইএমএফ ◈ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জের দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, ৪ পুলিশ সদস্যসহ আহত ২০ ◈ মার্চ মাসে সারাদেশে ৬২৪ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৫০, আহত ৬৮৪  ◈ ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ককে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে: হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ◈ অস্ত্রসহ কেএনএফের আরও ৯ সদস্য আটক ◈ পাকিস্তানের মুশতাক আহমেদ বাংলাদেশের নতুন স্পিন কোচ ◈ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কারিকুলাম যুগোপযোগী করার তাগিদ রাষ্ট্রপতির ◈ সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণেই সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০২:১১ রাত
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০২:১১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আর্থিক দীনতার রাখঢাকহীন প্রকাশ ভালো লাগে না

আর রাজী

আর রাজী: যখনই কেউ কোনো বড় সাফল্য অর্জন করে তখনই দেখা যায়, কেউ কেউ তার বা তাদের আর্থিক অসঙ্গতির কথা তাদের সাফল্যের চেয়েও বড় করে প্রচার করে। কিন্তু আনন্দের মুহূর্তে, উৎসবের সময় এই আর্থিক দারিদ্রের প্রদর্শনী ভালো লাগে না। কেন এমন খারাপ লাগে, অস্বস্তি হয় ঠিক ধরতে পারছি না। তবে আমি নিশ্চিত আমার নিজের ক্ষেত্রে আমার দারিদ্র বিক্রি করা সংবাদ-প্রচার আমি পছন্দ করতাম না। কেন করতাম না?

অনুমান করি, আমার মা আমার সাফল্যের মুহূর্তে চোখের জল মুছে ভাবতেন ‘আহা ছেলেটাকে দু-বেলা ভাল খেতে দিতে পারিনি, কতো সাধ তার পূরণ করতে পারেনি তার বাবা, অথচ আজ সেই ছেলে সারা দেশের মানুষের গর্বের ধন হয়েছে, কতো কষ্ট আর ত্যাগের বিনিময়ে এই বিপুল ভালবাসা সে অর্জন করেছে।’ 

মায়ের চোখের জল সত্য, নিত্যদিনের দারিদ্র সত্য, কিন্তু সবচে বড় সত্য যে ‘জয়’ তাকে কিছুই ছাপিয়ে যায় না। অথচ সংবাদ-প্রচারে দারিদ্রের কথাই বড় করে আসবে, জয়ের জন্য সংগ্রাম-সংকল্পের চেয়েও দারিদ্রের সাথে সংগ্রামের কথাই বেশি বার উচ্চারিত হবে। এমন হলে আমি সম্ভবত লজ্জিত হতাম। কারণ যারা অন্য সব মানুষের মুখে হাসি ফুটাবার জন্য কিছু করে, যারা দেশের মানুষকে গর্বিত করার জন্য কাজ করে যায় তারা টাকার জন্য তা করে না বলেই আমি বিশ্বাস করতে চাই।

আমি জানি, কোনো ব্যক্তির গরীব হওয়া সেই ব্যক্তির জন্য লজ্জার না। কিন্তু অসময়ে, অহেতুক দারিদ্রের প্রদর্শনী, দারিদ্রের প্রচার সবার জন্যই লজ্জার বলে আমার অনুমান। মানুষের মর্যাদার জন্য, আত্মসম্মানের জন্য অনেক সময় তা হানীকরও বটে। এই সমাজের মানুষ এই সেদিনও টাকার বড়াইকে বড় করে দেখতো না, আর্থিক দারিদ্রকে লুকিয়ে রাখাতেই ছিল তার আত্মগরিমা! টাকা বাদেও গর্ব করার, অহঙ্কার করার আরও যে কিছু থাকতে পারে তা জানা ছিল তাদের। কিন্তু আজ টাকা-পয়সার আলাপটাই যেন এই সমাজের মূখ্য চর্চা!

চরম বৈষম্যের এই সমাজে মানুষের চোখ সবার আগে আলোয় উদ্ভাসিত পুরুষের আর্থিক অসঙ্গতির দিকে যাবে- এটা হয়তো অস্বাভাবিক না। কিন্তু অস্বাভাবিক হচ্ছে, কোনো একটা বিপুল সাফল্যের কালে সফল-পুরুষের দারিদ্রে আলোকসম্পাত করা। কিন্তু কেন বারংবার এমন ঘটাই আমরা?

সম্ভবত মাথায় থাকে, নগদে কিছু অর্থ পাইয়ে দেওয়ার চিন্তা। যখন তারা দশের-দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে তখনই সেই উসিলায় যদি কিছু টাকা পাইয়ে দেওয়া যায় তাহলে একটা কাজের কাজ হয়েছে- এমন ভাবনা হয়তো কাজ করে দীনতা প্রচারকারীদের মনে। 

আর্থিক-দারিদ্র প্রচারের এই নেতিবাচক ধারাটিই এ দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। অথচ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ছিল এমন ব্যবস্থা যেন আর্থিক দৈন্যের দিকটি আড়ালে রেখেই যার যা প্রাপ্য তার প্রাপ্তি নিশ্চিৎ হয়ে যায়। টাকার কথা, আর্থিক দীনতার কথা কাউকেই যেন মুখ ফুটে বলতে না হয়। এমন একটা ব্যবস্থা নিশ্চিৎ করার দরকার ছিল, যেন যে কোনো সহনাগরিকের আর্থিক অসঙ্গতি সবার জন্য সমান লজ্জার হয়ে দাঁড়ায়। কোনো সাফল্যের ক্ষণে আর্থিক দৈন্যের আলাপটিই যেন বড় হয়ে না ওঠে। তাই কী? আমি নিশ্চিৎ না। কিন্তু এটা নিশ্চিৎ আর্থিক দীনতার রাখঢাকহীন প্রকাশ আমার ভাল লাগে না। আরও ভাল লাগে না, পূর্ণ সত্য তলিয়ে না জেনে সাদা চোখে যা ধরা পড়ে তার বিবেচনাহীন প্রচার। লেখক: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়