ইমতিয়াজ মাহমুদ: আপনি কি আমাদের যুদ্ধের সময়ের কোনো ডকুমেন্টারি দেখেছেন? মুক্তির গান তো নিশ্চয়ই দেখেছেন আরকি। কিছু আছে একদম নিউজরিল ধরনের। সুযোগ পেলে দেখবেন। স্থির চিত্রও দেখবেন। কেন দেখবেন? ইতিহাসের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে হয়, নিজেদের গৌরবের কথা জানতে হয়Ñ এসব কারণ তো আছেই। আরেকটা কারণ আছে। আপনি যদি সেইসব ডকুমেন্টারি বা স্থিরচিত্র দেখেন তাহলেই কেবল অনুধাবন করতে পারবেন বাঙালি নারী কতোটা রূপসী, কতোটা মহিমাময়ী দেখতে হয়। মুক্তির গান দেখেছেন না? আরেকবার দেখেন। শাহিন সামাদ, শারমিন মুরশিদ, লুবনা মরিয়ম আরো কয়েকজন ছিলেন, ওরা তখন নিতান্ত তরুণ। কী অপরূপ যে লাগে ওদের সেখানে। সাধারণ সুতি শাড়িতে ওদের একেকজন যেন বাঙালি নারীর অনন্য রূপের প্রতিমা একেকজন। যারা সম্মুখ সমরে অংশ নিয়েছেন ওদের ছবি খুব বেশি দেখা যায় না, যে দুই একটা চোখে পড়ে, দেখবেন। আহা! বাঙালি নারীর এই রূপ কি আর কখনো দেখতে পাবো?
জননী বলেন তো জননী, ভগিনী বলেন তো ভগিনী, কন্যা বলেন তো কন্যা- এইসব সব কিছুর উপরে শুদ্ধ নারীরূপে ওদের চেয়ে সুন্দর কেউ কখনো ছিল। না। আর কখনো হবে? জানি না। আনন্দমঠ উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র ‘মা যেমন ছিলেন’ বলে সুবর্ণ অলঙ্কারে উজ্জ্বল রূপবতী এক মাতৃমূর্তির বর্ণনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ বাংলা মাতৃরূপ লিখেছেন ‘ওগো মা তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে’ গানে। এইসব কিসসু না, কিসসু না। একাত্তরে আমাদের নারীদের যে রূপ আমারা দেখেছি তার পাশে এসব বর্ণনা, গান, কবিতা কিসসু না। তরুণ বন্ধুদের বলি, দেখবেন, খুঁজে খুঁজে দেখবেন। বাঙাাল পুরুষের ক্ষেত্রেও এই কথাটা প্রযোজ্য বটে। নিতান্ত সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ তরুণই হোক বা অবসরে যাওয়া পক্বকেশ শ্মশ্রুমণ্ডিত বুড়ো- বাঙালী পুরুষরা যেন সকলেই সেসময় ছিল কুলেস্ট অব দ্য কুল ডুড একেকজন। ডকুমেন্টারিতে মুক্তিযোদ্ধাদের দেখবেন- ওদের কথা পড়বেন। চেহারা দেখলে দেখতে পাবেন আহ, সে চাহনি। শীর্ণ লিকলিকে রোদে জ্বলে জলে ভিজে রুক্ষ ত্বক। শোভন একটা পোশাক নাই- খাকি একটা ইউনিফর্ম জুটেছে তো সাথে নেই জুতো টুপি। বেশিরভাগের আবার ইউনিফর্ম বলতে কিছু নেই, লুঙ্গি গামছা পরে আছে। ওর মধ্যেই সে কি শৌর্য। আমি অনেক যুদ্ধের ছবি দেখেছি। রাশিয়ার ছবি, পশ্চিমের ছবি, ভারতীয় ছবি। একদম যুদ্ধের ফুটেজ নিয়ে বানানো ডকুমেন্টারি বা বাঘা বাঘা জেনারেলদের তত্ত্বাবধানে চিত্রায়িত সিনেমা। কতো বিচিত্র সাহসিকতা আর কত যে অ্যাকশন। কিন্তু একটা কথা বলে রাখি আপনাকে, আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা যা করেছেনÑ অ্যাকশন হোক বা সাহসিকতা বা আত্মত্যাগ- এরকম কেউ ওরা সিনেমাতেও দেখাতে সাহস পাবে না। না, উল্টো চিত্রও কিছু ছিল, অস্বীকার করবো না। ছিল, ওরা এখনো আছে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :