অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার (সৃজনশীল) অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার একটি প্রশ্ন দেখলাম। প্রশ্নটি হলো, ‘বিত্তশালী বাবার একমাত্র মেয়ে সেজুতি এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হয়ে প্যান্ট-শার্ট পড়ে আধুনিকভাবে ঘুরে বেড়ায়। পাড়ার যুবকরা প্রায়ই তাকে অশালীন কথাবার্তা বলে উত্যক্ত করে। এ ব্যাপারে সেজুতি বাবার কাছে অভিযোগ করলে বাবা বললো, তুমি শালীনভাবে চলাফেরা করো, কেউ তোমাকে কিছু বলার সাহস পাবে না। ‘অশালীন পোশাকের কারণে অধিকাংশ ইভটিজিং হয়’Ñ উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
সৃজনশীলতার কী শ্রী! যেন বাইয়া বাইয়া, চুইয়া চুইয়া পড়তেছে। একটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার প্রশ্ন কোন যুক্তিতে, কোন আলোকে এরকম অসভ্য প্রশ্ন করতে পারে? এইবার বুঝুন কেমন মানের স্কুল আর কেমন মানের শিক্ষক আমরা নিয়োগ দিই। সেজুতির বাবাও মাশা আল্লাহ কম যান না। এর মাধ্যমে প্রচ্ছন্নভাবে এটাই এস্টাব্লিশ করা হলো যে প্যান্ট-শার্ট একটা অশালীন ড্রেস, যদি কোনো মেয়ে পরে। আরও এস্টাব্লিশ করা হলো যে প্যান্ট-শার্ট পরা কোনো মেয়েকে উত্যক্ত করা যায়। এভাবেই মেয়েদের ধর্মের নামে ছোট করে দেখা হয়। সকল ধর্মের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। খ্রিস্টান ধর্মে ছেলেরা চার্চের প্রধান অর্থাৎ ফাদার হতে পারবে, পোপ হতে পারবে মেয়েরা পারবে না। মেয়েরা কেবল নান বা সেবিকা হতে পারবে। হিন্দু ধর্মে মেয়েরা পুরোহিত হতে পারবে না। ইসলাম ধর্মে মেয়েরা মসজিদের ঈমাম হতে পারবে না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে মসজিদে নামাজও পড়তে পারবে না।
এই দেশে যারা ওয়াজ পড়েন তাদের পুরো ওয়াজজুড়ে থাকে নারী, অন্য ধর্ম নিয়ে গীবত। কখনো বলতে শুনি না যে এই ছেলেরা তোমরা চোখে পর্দা কর। রাস্তাঘাটে খালি গায়ে চলাফেরা করবা না। মেয়েদের দেখলে সম্মানের সাথে তাকাবা। মূর্খ সমাজ এইসব চাষাবাদের ঊর্বর ভূমি। এতে প্রমাণিত হয় এই সমাজ কোন দিকে যাচ্ছে। স্বল্প বাজেট বরাদ্দ, মানহীন শিক্ষক নিয়োগ এই অবস্থাকে ত্বরান্বিত করছে। লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়
আপনার মতামত লিখুন :