মাহবুব কবির মিলন: অনেক বছর আগের কাহিনি। ভাঙ্গা লোকাল বাসে আম্মা, ছোট ভাই, আব্বা এবং এক চাচা গুলিস্তান থেকে আরিচা ঘাটে গেলাম, তখন দুপুর গড়িয়ে গেছে। কোনো ফেরি নেই। লঞ্চে গাদাগাদি করে উঠলাম নগরবাড়ি যাব। নদীর মাঝখানে গিয়ে পড়লাম ঝড়ের কবলে। কালো মেঘ, প্রচণ্ড বৃষ্টি আর বাতাস। লঞ্চের ভিতরে পানি থৈ-থৈ করছে। পুরো পরিবার একসাথে মরার ভয়ে চিৎকার করে আল্লাহর কাছে কাঁদতে লাগলাম।
মহান রব মুখ ফিরে চাইলেন। ঝড় কমে আসল। নগরবাড়ি যখন পৌঁছালাম, তখন সন্ধ্যা নেমে গেছে। কোনো বাস নেই। আমরা শতাধিক যাত্রী। কিছু যাত্রী খুঁজে পেলেন এক ড্রাইভারকে। তিনি মুড়ির টিন বাস নিয়ে রংপুর থেকে বিকেলে এসে খাবার হোটেলে আড্ডা দিচ্ছিলেন। হাতে-পায়ে ধরে ডাবল ভাড়া দিয়ে রাজি করানো হলো তাকে।
বগুড়া পৌঁছালাম রাত আড়াইটার সময়। ড্রাইভার বেঁকে বসলেন। আর যাবেন না। তিনি বগুড়ার ভাড়া চাইলেন। সবাই নেমে গেলাম। এত রাতে আম্মাসহ কী করি, কোথায় যাই! রাস্তায় কেউ নেই। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে এক হোটেলের দরজা ধাক্কাতে লাগলাম। নাইট গার্ড টাইপের একজনের দেখা পেলাম। তিনি সব শুনে সিঁড়ির নিচে চিপা এক রুমে তার থাকার জায়গায় আমাদের থাকতে দিলেন। সবাই বসে ভোর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে আর এক মুড়ির টিন বাসে রংপুর রওনা দিলাম।
জাতে জাতে অমিল থাকতে পারে। গোত্রে-গোত্রে অমিল থাকতে পারে। শ্রেণি পেশায় মতের অমিল থাকতে পারে। রাজনীতিতে অমিল থাকতে পারে। রাজায়-রাজায় যুদ্ধ হতে পারে। কিন্তু এপারের মানুষ কখোনই উপলব্ধি করতে পারবে না, নদী পার হতে ওপারের মানুষের মরণ যন্ত্রণা কী জিনিস ছিল। কী ছিল সেই দুঃসহ বেদনা আর কষ্টের উপাখ্যান। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :