শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ২১ মার্চ, ২০২৩, ১২:৪১ রাত
আপডেট : ২১ মার্চ, ২০২৩, ১২:৪১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সরকারি সহযোগিতা পেলে ৬০০ টাকা কেজি গরুর মাংস বিক্রি সম্ভব: রবিউল আলম

ভূঁইয়া আশিক রহমান : [২] বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেছেন, গরুর মাংসের দাম কমানোর তাৎক্ষণিক কোনো যাদুমন্ত্র মাংস ব্যবসায়ীদের হাতে নেই। তবে সরকার চাইলেই দেশীয় গরুর মাংসের দাম ৬০০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য করতে পারে ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের। ভারতে ১৮০ থেকে ২২০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। তাহলে আমাদের এখানে এতো বেশি দামে মাংস বিক্রি করা হবে কেন? এজন্য কারা দায়ী? যদি মাংসের দাম কমাতে চায় সরকার, তাহলে মাংস আমদানিকারকদের জবাবদিহিতায় আনতে হবে। কতো টাকায় মাংস কিনেন এবং কতো টাকায় বিক্রি করবেনÑএর একটা সীমারেখা টানতে হবে। এটা কেবল সরকারই করতে পারে। বাংলাদেশে মাংস বিক্রি করতে হলে সরকারের এই নির্দেশনা মানতেই হবে। বাধ্য করতে হবে। তাহলে ভারতীয় মাংস ৪০০ টাকার ওপর বিক্রি করতে পারবে না। আমদানিকৃত মাংস ৪০০ টাকায় পাওয়া গেলে তখন আর দেশীয় মাংস ৬০০ টাকার ওপরে বিক্রি করতে পারবে না কেউ। সরকারের এই একটি সিদ্ধান্ত ও নজরদারিই পারে রমজানে মাংসের দামে লাগাম টানতে। 

[৩] তিনি বলেন, দেশে গরুর মাংসের দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট কৃত্রিম উপায়ে মাংসের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। সিন্ডিকেটের সঙ্গে প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনাও যুক্ত। যারা পশুপালন ও আমদানি-রপ্তানির দায়িত্ব পালন করছেন, তারা পুরোপুরি অজ্ঞতার মধ্যে আছেন! যেমন প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কেউ কেউ অতি উৎসাহী হয়ে বলেন, পশুপালনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পন্ন। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা যদি পশুপালনে স্বয়ংসম্পন্নই হয়ে থাকি, তাহলে পশু আমদানি করতে হয় কেন? দেবেন কি এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের সেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা? জানি, দেবেন না! মাংসের এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির দায় প্রাণসম্পদ মন্ত্রণালয় এড়াতে পারে না।

[৪] রবিউল আলম বলেন, মাংস আমদানি করা হয়। দেশের সব কোল্ড স্টোরেজে মাংস সংরক্ষিত থাকে। বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে আমদানিকারকেরা মাংসগুলো সরবরাহ করে। এই মাংস মানুষের খাওয়ার উপযুক্ত কিনা তার কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা নেই। সরকার মাংস আমদানির অনুমতিপত্র বাতিল করার পরও সীমান্ত দিয়ে অবাধে মাংস অবৈধভাবে পাচার হয়ে আসছে। নতুন করে যুক্ত হয়েছে মিয়ানমারের নাম। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির জন্য কাকে দায়ী করবো!

[৫] দেশের ক্ষুদ্র মাংস ব্যবসায়ীরা সংকট সৃষ্টি করবেন কীভাবে? চাইলেও কি তারা এটি করার সামর্থ্য রাখেন? রাখেন না। কারণ তাদের হাতে মাংস ফ্রিজিং করার ব্যবস্থা নেই। ফ্রিজিং মাংস তাদের কাছ থেকে ক্রেতারা কিনেনও না। একজন মাংস ব্যবসায়ীর স্বল্প পুঁজি থাকে। মাংস নিয়ে সিন্ডিকেট করার সম্ভব নয় তাদের পক্ষে। সেই সুযোগও নেই তাদের!

[৬] মাংসের দাম কমানো-বাড়ানো, তদারকির কোনো এখতিয়ার মাংসব্যবসায়ী সমিতিকে দেওয়া হয়নি বা সেই সুযোগ নেইও তাদের। চাইলেও আমরা নিজ উদ্যোগে মাংসের দাম কমানোর সুযোগ নেই। কারণ সমিতির কার্যক্রমকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তাদের অফিস অবৈধভাবে দখল করে নেওয়ার কারণে। বাণিজ্য, প্রাণিসম্পদ, স্থানীয়, স্বররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, ঢাকা সিটি করপোরেশ ও ভোক্তা অধিকার আমাদের সঙ্গে আলোচনার কোনো প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করে না। যে কারণে আইন অমান্যের ভয়ে আমরা এই মুহূর্তে নিজ উদ্যোগে কোনো কিছু করি না। 

[৭] পশুর হাটের ইজারাদাররা আমাদের পকেট কেটে টাকা আদায় করে, আমরা ক্রেতার গলা কেটে টাকায় উসুল করি। বিকল্প কোনো পথ আমাদের সামনে নেই। সমিতির কার্যক্রম স্থগিত করে রাখা হয়েছে। সমিতির কার্যক্রম চালাতে না পারলে আমরা কীভাবে সদস্যদর বলবো, আপনারা মাংসের দাম কমিয়ে বিক্রি করুন। সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে লুটেরা শ্রেণি, আর ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চলে মাংসের দোকানে। অথচ লাইসেন্সদারী চাঁদাবাজ, গরুর হাটের ইজারাদারদের কোনো জবাবদিহিতা করতে হয় না। একই দেশে দুই আইন চলতে পারে না। সরকার বাংলাদেশ মাংসব্যবসায়ী সমিতিকে সহযোগিতা করলে ৬০০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করা সম্ভব। তবে অবশ্যই মাংস আমদানিকারকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতেই হবে।  

[৮] গরুর মাংসের ক্রেতা কমে গেছে। মাংসের দাম কমানোর জন্য ইতোমধ্যে মাংস ব্যবসায়ীরা ১০ দিনের ধর্মঘট পালন করেছেন। সরকারের কোনো মন্ত্রণালয়ই তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার তাগিদ অনুভব করেননি। ৪৫ বছর ধরে মাংসের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিলো সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে, ২০১৬ সাল পর্যন্ত মাংসের মূল্য ছিলো ৩২০ টাকা, মাংসের বাজার উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর থেকে আজ ৭০০-৮০০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি হয়। এজন্য কি মাংস ব্যবসায়ীদের দায়ী করা চলে!

[৯] মাংসের দাম অতিরিক্ত হওয়ায় ইতোমধ্যেই প্রতিটি বাজারে মাংসের দোকানগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা সিটি করপোশেনে (উত্তর-দক্ষিণ) ৬ হাজারের মতো দোকান ছিলো, এখন সেই জায়গায় মাত্র ৫০০ দোকান নিয়মিত খোলে। এতেই বোঝা যায় বাজারে মাংসের চাহিদা কমে গেছে। মানুষ মাংস কেনার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে। উপরন্তু ফুটপাত থেকে ফাইভ স্টার হোটেল পর্যন্ত ভারতীয় পাচার হয়ে আসা মাংস দখল করে আছে। মাংসের চাহিদা কম থাকলেও মাংসের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে সিন্ডিকেট করে। 

[১০] দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আমির হোসেন যে দাবি করেছেন, গরু আমদানির অনুমতি দিলে অর্ধেক দামে মাংস খাওয়ানো যাবে। এটা কতোটা বাস্তবসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ এ ধরনের কথা তিনি বলতে পারেন না। এসব দেশদ্রোহী কথাবার্তা।  বাংলাদেশ মিষ্টি পানি ও সুন্দর আবহাওয়ার দেশ। দেশের কৃষক বিশে^র সর্বশেষ্ঠ, পশুপালনে। আমরা ইতোমধ্যে গরু ও মাংস আমদানির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। এখানে ৫০ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি ইচ্ছে করি, তাহলে আমাদের চরাঞ্চলগুলো পশুপালনের আওতায় এনে এই ৬০ হাজার কোটি টাকা আটকাতে পারবো এবং বিশে^ মাংস রপ্তানি করে লাখো কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবো। 

[১০] আমরা বিশ^াস করি, যাদের দেশপ্রেম আছে তারা পশু ও মাংস আমদানির পক্ষে কথা বলতে পারেন না। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে পশুপালনের অভয়ারণ্য তৈরি করা যায়, যদি প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় একটি চরকে পশুর প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে। বিনে পয়সা দুটি করে গরুর বাচ্চা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘একটি বাড়ি একটি খামার’কে পশুপালনের আওতায় আনা যায়। 

[১১] অবৈধ্য মাংস ও পশু পাচারের সঙ্গে জড়িত ভারতের তৃণমূল, বিজেপি ও দেশটির অনেক রাজনৈতিক নেতা। ২০ হাজার টাকার গরু পাচারে ৪৫ হাজার টাকা অবৈধ আদায় করা হয়। কাজেই মাংসের কেজি ওরাই নির্ধারণ করে দেয়, কতো টাকা বিক্রি করে তাদের টাকা দিতে হবে। ভারত থেকে পশু আমদানি করে কোনো দিনই মাংসের দাম কমানো সম্ভব নয়। মাংসের দাম কমানোর একমাত্র উপায় পাচার বন্ধ করা। আমাদের দেশীয় পশুপালনের মাধ্যমে আমরা মাংসের দাম নির্ধারণ করবো। ভিনদেশের কোনো হস্তক্ষেপে তা সম্ভব নয়। পশু আমদানিকে উৎসাহিত করা দেশদ্রোহীতার সামিল বলেই আমরা মনে করি। 

[১২] দেশে প্রতি বছর মাংসের চাহিদা মেটাতে ১ কোটি ২০ লাখ গরু-মহিষ প্রয়োজন। ছাগল- ভেড়া ৮০ থেকে ৯০ লাখ। এই হিসাবটি কোরবানিসহ প্রযোজ্য। চাহিদার ৮০ শতাংশ দেশীয়ভাবে মেটানো হয়, আর ২০ শতাংশ অবৈধভাবে পাচার করে নিয়ে আসা হয়। অবৈধ মাংস পাচার করার কারণে সরকার ও দেশের জন্য বড় ক্ষতি হয়। কারণ এতে মাংসের বাজার স্থিতিশীল করা যায় না। সরকারও ভ্যাট-ট্যাক্স থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। ফলে মাংসের বাজার স্থিতিশীল করার স্বার্থে সরকারকে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

এমএইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়