মনিরুল ইসলাম: [২] দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত ঢাকা-৭ আসনের সরকারি দলীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিম বর্তমানে কারাগারে। রোববার আদালতে আত্মসমর্পণের পর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
[৩] সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের দন্ড আদালত বহাল রাখার পর ও বর্তমানে আত্নসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়ায় পর আবার আলোচনায় এসে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল বা শূণ্য হবে কি না। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
[৪] দুদকের আইনজীবীরা ও শেখ সেলিমের আইনজীবীর বক্তব্যও দ্বিমুখী।
[৫] দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান জানান, সংবিধানের ৬৬(২-এর ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, যদি কেউ নৈতিক স্খলনের দায়ে ২ বছর বা তার বেশি সাজাপ্রাপ্ত হন, তবে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে অযোগ্য হবেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তিনি যেহেতু দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, তাই এটা তার নৈতিক স্খলন। সে কারণে সাংবিধানিকভাবে তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তার সংসদ সদস্য পদ বাদ হয়ে যাবে।
[৬] অন্যদিকে, হাজী সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, তারা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করবেন। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কাউকে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। সুতরাং, তার সংসদ সদস্য পদে বহাল থাকতে কোনও বাধা নেই। আদালতের নিয়ম মেনেই আইনী লড়াই চলবে।
[৭] এদিকে, জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নুর-ই আলম চৌধুরী বলেন, আইনী বিষয় হুট করে কিছু বলা যাবে না৷ আমরা এখনো আনুষ্ঠানিক ভাবে রায়ের কোন কাগজপত্র পাইনি। পেলে সংসদ সচিবালয় আইনী বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।
[৮] সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার রাত পর্যন্ত হাজী সেলিমের রায়ের বিষয়ে সংসদকে আনুষ্ঠানিক কোন কিছু দুদক কর্তৃপক্ষ কিছুই জানায়নি।
[৯] সূত্র আরও জানায়, সামনে বাজেট অধিবেশন। আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু না জানায় হাজী সেলিমের বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলার সময় এখনও আসেনি। তিনি আপিল করতে পারেন। উচ্চ আদালতে জামিন চাইতে পারেন। সেগুলোর নিষ্পত্তি হওয়ার আগে সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবার বিষয়টি নিয়ে কোন কথা বলার আনুষ্ঠানিক সময় আসেনি।
[১০] দুদক সূত্রে জানা গেছে, হাইকোর্টের রায়ের কপি পাওয়ার পর দুদকের মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া হবে। সংসদ সচিবালয়কে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হবে।
[১১] উল্লেখ্য, দুদকের করা অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের যে মামলায় হাজী সেলিমের সাজা হয়েছে, সেটি দায়ের করা হয়েছিল ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে। পরের বছর ২৭ এপ্রিল বিশেষ আদালত তাকে দুই ধারায় মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন।
[১২] হাজী সেলিম ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি উচ্চ আদালত তার সাজা বাতিল করে রায় দেন। দুদক তখন সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করলে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে হাজী সেলিমের আপিল পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। শুনানি শেষে হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি ধারায় হাজী সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল রাখেন এবং অন্য ধারায় ৩ বছরের সাজা থেকে তাকে অব্যাহতি দেন।
[১৩] বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী এবং একেএম জহিরুল হকের ওই বেঞ্চের এই রায় দেন। ৩০ দিনের আত্নসমর্পণের আদেশ দেন।
আপনার মতামত লিখুন :