এম এম লিংকন: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাংগীর আলম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিনে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ছাড়া আর কেউ মনোনয়ন পত্র জমা দেননি। এক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী, সোমবার তার মনোনয়ন পত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর সব কিছু ঠিক থাকলে তাকেই রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হবে। তার জন্য প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত আর অপেক্ষা করা লাগবে না।
ছাত্রলীগের রাজনীতি, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, বিচার বিভাগে যোগদান এবং পরে দুদকের কমিশনার হয়ে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন সাহবুদ্দিন।
রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করায় মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, সবই সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইচ্ছা।
সচিব বলেন, মনোনয়নপত্র প্রস্তাব কারীর নাম হচ্ছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নোয়াখালী-৫ আসনের সংসদ সদস্য ওবায়দুল কাদের, এবং সমর্থনকারীর নাম হচ্ছে চট্টগ্রাম-৭ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হাছান মাহমুদ।
একক প্রার্থী হলে তার প্রক্রিয়া কি হবে জানতে চাইলে সচিব বলেন, সোমবার বাছাইয়ের পরে বৈধ মনোনয়ন যেটা হবে তার নাম ঘোষণা করা হবে।
একই ব্যক্তি তিনটি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন, যেখানে প্রস্তাবক ও সমর্থক ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। একই ব্যক্তির দুটি আবেদন জমা পড়েছে।
ফেব্রুয়ারির ১৯ তারিখ ভোটের দিন রেখে গত ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাবিংশতম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ১৩ ফেব্রুয়ারি যাচাই বাছাইয়ের পর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। আর একাধিক প্রার্থী না থাকায় সংসদ অধিবেশন কক্ষে ভোটের প্রয়োজন পড়ছে না।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পরিচালনা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, যিনি এ নির্বাচনের নির্বাচনী কর্তা।
রাষ্ট্রপতি পদে সাহাবুদ্দিনের মনোনয়নপত্র জমার সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকসহ প্রতিনিধি দলের সবাই উপস্থিত ছিলেন। সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে গণমাধ্যমের কাছে নতুন রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর পরিচিতি তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাহাবুদ্দিন বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন। এ মুহূর্তে আমার প্রতিক্রিয়া এটুকুই।
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হন। তিনি ১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি, দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন এবং মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অনুসন্ধানে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) বিভাগে যোগদান করেন সাহাবুদ্দিন এবং ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সাহাবুদ্দিন কারাবরণ করেন।
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এক পুত্র সন্তানের বাবা। তার স্ত্রী অধ্যাপক রেবেকা সুলতানা সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব।
এমএমএল/এনএইচ