কূটনৈতিক প্রতিবেদক: এক যুগের বেশি সময় পর সর্বশেষ গত বছর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবার চলতি বছরের প্রথমার্ধে জেআরসির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, পানি সংকট সমাধানে চীন ও ভুটানের সঙ্গেও একযোগে কাজ করছে বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে জেআরসি ছাড়াও অন্যান্য বিষয় উল্লেখযোগ্য বৈঠক হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্ক’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান।
দেশের স্বার্থে কারোর সঙ্গেই কোনো বিষয়ে বাংলাদেশ আপস করবে না উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে ভালো প্রতিবেশী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিশ্বের সব দেশই ভালো প্রতিবেশীই প্রত্যাশা করে। ১৫ বছর আগে যখন ট্রানজিট ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশে সস্তা রাজনীতি হয়েছিল, তখন কিন্তুপ্রধানমন্ত্রী ঝুঁকি নিয়েই ট্রানজিট করেছিলেন। এখন সেই সুফল সবাই ভোগ করছে।
তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কানেক্টিভিটি ও ঘনিষ্ঠ দেশগুলোর সঙ্গে তাদের বাজারে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা প্রধানমন্ত্রীর জন্য সম্ভব হয়েছে। আমাদের জিডিপির গ্রোথ এখন উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশে হাইড্রো রিসোর্স না থাকায় ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে আমাদের এ সহযোগিতা নিতে হচ্ছে। বাংলাদেশ আসিয়ান জোট, বিমসটেক ও সার্কসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।
শাহরিয়ার আলম বলেন, করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়া পরিস্থিতি বিশ্বের প্রতিটি দেশকেই এককভাবে প্রভাবিত করেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে হাই প্রোফাইল ভিজিট হয়েছে। নেপাল, ভূটান, ভারত, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া ও চীনসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের ভিজিটে জোর দেওয়া হয়েছে। নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ডিউটি ফ্রি
ব্যবসা-বানিজ্যে উপভোগ করছে বাংলাদেশ।
পারস্পারিক অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার মাধ্যমে প্রতিবেশীদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার উপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রতিমন্ত্রী ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি, পানি ও বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা, আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধি, জনগণের মধ্যে যোগাযোগের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা এবং মানবিক সংকটে পারস্পারিক সহায়তার মাধ্যমে আঞ্চলিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করবার কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি এবং পারস্পরিক উন্নয়নের জন্য প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক সুসংহত করতে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে।
পররাষ্ট্রনীতির জন্য কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম বিদেশি বিনিয়োগ টানতে সক্ষম হচ্ছে এবং অর্থনৈতিক ভাবে দেশ দুটি এগিয়ে যেতে পারলে বাংলাদেশ কেন নয় বলে প্রশ্ন রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া) রকিবুল হক বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন অগ্রগতি ভাগাভাগি করে আমরা একযোগে কাজ করতে আগ্রহী। এ লক্ষ্যেই আমরা এগিয়ে চলেছি।
বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে বৈশ্বিক ভুরাজনীতিতে এশিয়ার গুরুত্ব কৌশলগত কারণে বৃদ্ধির ফলে এশিয়ার পুনরুখানের কথা তুলে ধরেন। তিনি প্রতিবেশী দেশ সমূহের সাথে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার এবং আঞ্চলিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ ও টেকসই সমাধান খুঁজতে বহুপাক্ষিকতার উপর গুরুত্বআরোপ করেন।
বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি রাষ্ট্রূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, পরিবর্তিত বৈশ্বিক ব্যবস্থায় বিশ্বের দেশসমূহ প্রতিবেশীদের সাথে তাদের বৈদেশিক নীতি প্রণয়নে কঠিন সময় পার করছে। সুতরাং, বাংলাদেশকে সতর্কতার সঙ্গে এ সময় অতিক্রম করতে হবে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনষ্টিটিউট (বিইআই) এর সভাপতি ও কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উর্ধবতন কর্মকর্তা, রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, সাবেক কূটনীতিক, উর্ধবতন সামরিক কর্মকর্তা, গবেষক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন থিষ্ক ট্যাংক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা অংশগ্রহন করেন এবং উন্মুক্ত আলোচনা অধিবেশন তাদের মতামত তুলে ধরেন।
টিআর/এসএ
আপনার মতামত লিখুন :