ওয়ালিউল্লাহ সিরাজ: বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। এক সপ্তাহ আগে ৫০ শতাংশ জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। সরকার অবশ্য তেলের এই দাম বৃদ্ধির জন্য ইউক্রেনের যুদ্ধকে দায়ী করেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য একটি দেশ শ্রীলঙ্কায় আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে।বিবিসি
দিনাজপুরে বসবাসকারী ৩৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। তিনি ৯ মাস ধরে একটি পরিবহন কোম্পানিতে কাজ করেন। তিনি মূলত দিনাজপুর থেকে ঢাকাতে সব্জী পরিবহন করেন। তার দুটি ছোট সন্তান ও বাবা-মা রয়েছে। কোম্পানির মালিকরা তাদেরকে পুরো বেতন দিতে পারেন না। এর মধ্যে বেড়েছে জ্বালানি তেলে দাম। তিনি বলেন, আমি বাজারে গিয়ে পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত খাবার কিনতে পারি না। জ্বালানির দাম যদি এভাবে বাড়তে থাকে, আমি আমার বাবা-মায়ের দেখাশোনা করতে পারব না। আমার সন্তানদের স্কুলেও পাঠাতে পারব না। আর যদি আমার চাকরিটা চলে যায় তাহলে রাস্তায় ভিক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশে জনসংখ্যা ১৬৮ মিলিয়নেরও বেশি। নুরুল ইসলামের মত অনেকেই এমন দুর্দশার মুখোমুখি হচ্ছে।
বাংলাদেশে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ৮০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ এই দাম বৃদ্ধির হার প্রায় ৪২ শতাংশ। লিটার প্রতি পেট্রলের দাম ৮৬ টাকা থেকে ১৩০ টাকা করা হয়েছে। অকটেনের দাম বেড়েছে ৮৯ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা। অর্থাৎ পেট্রল ও অকটেনের ক্ষেত্রে মূল্য বৃদ্ধির হার ৫০ শতাংশেরও বেশি।
বাংলাদেশের জ্বালানিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। আমরা জানি দেশে তেলে দাম অনেক বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বিদেশে জ্বালানি তেলে দাম বাড়লে আমরা কী করতে পারি?
সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ অস্বীকার করে হামিদ বলেন, প্রশাসন অতীতে বৃদ্ধি এড়াতে ভর্তুকি দিয়েছিল। কিন্তু এখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো অনিবার্য হয়ে পড়েছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে নেমে আসে আমরা কিছু সমন্বয় করার চেষ্টা করব।
গত সপ্তাহে তেলের দাম বাড়ার খবর ঘোষণা করার পর শ্রীলঙ্কার মতো দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষ পেট্রোল স্টেশনে বিক্ষোভ করেছে। কিন্তু দেশে বিক্ষোভ অল্প হলেও মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে। নসরুল হামিদ বিশ্বাস করেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমলেও বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার পরিণতি হবে না।
বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল হিসাবে প্রশংসিত হয়েছিলো। কিন্তু শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় দেশ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।
মোসাম্মাদ জাকিয়া একজন বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় শুধু বাসের ভাড়া বেড়েছে তাই নয়। বাজারে সব কিছুর দামই বেড়েছে। যার ফলে সংসারের খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। আর শুধু বাসের ভাড়া নয়। রিকশা ও অন্যান্য পরিবহনের ভাড়াও বেড়েছে। তাই বাড়ি থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
দিনাজপুরের আরো প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের গল্প একই। ফুলবাড়ীর শিউলি হাজদা ধানক্ষেতে কাজ করেন। তিনি বলেন, হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় চাষের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। সবকিছু এত ব্যয়বহুল হওয়ায় সন্তানের জন্য ঠিক মত খাবার কিনতে পারছি না। সরকার দ্রুত জ্বালানির দাম না কমালে আমরা অনাহারে মরব। সম্পাদনা : রাশিদ
আপনার মতামত লিখুন :