শিরোনাম
◈ মধ্যরাতে উত্তাল ঢাবি: শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ (ভিডিও) ◈ গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যা: কেটু মিজান ও স্ত্রীসহ গ্রেফতার ৫ ◈ মালয়েশিয়া যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা, হতে পারে যেসব চুক্তি ◈ যশোরে স্কুল ছাত্রী অপহরনের পর গুমের  অভিযোগ ◈ ট্রাম্পের শুল্কের জবাবে মার্কিন অস্ত্র কেনা স্থগিত করেছে ভারত: রয়টার্স ◈ যশোরে ডিবি হেফাজতে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের দুই সিবিএ নেতা ◈ আমি মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করি, হিন্দু -মুসলিমের ব্যবধান বুঝি না : বাবু গয়েশ্বর ◈ ঢাবির ১৮ হলে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর ফেসবুকে যা বললেন উমামা ফাতেমা ◈ গণমাধ্যমের স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার প্রতি সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব ◈ ঢাকায় পাকিস্তানের নতুন হাইকমিশনার ইমরান হায়দার

প্রকাশিত : ০৮ আগস্ট, ২০২৫, ১১:৩৭ রাত
আপডেট : ০৯ আগস্ট, ২০২৫, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : মনিরুল ইসলাম

গণমাধ্যমের স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার প্রতি সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব

মনিরুল ইসলাম  :প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেছেন, গণমাধ্যমের স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার প্রতি সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ সংবাদপত্র মালিক সমিতি (নোয়াব) গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যপ্রাপ্তি পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতির জবাবে এ কথা বলেন। 

আজ  শুক্রবার রাতে ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেন। যা প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানে হয়েছে।

আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, সম্প্রতি নোয়াব গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যপ্রাপ্তি পরিস্থিতি নিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, আমরা তা স্বীকার করছি। তবে গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধিকার ক্ষুণ্ণ করেছে-এমন ইঙ্গিত আমরা দৃঢ়ভাবে ও স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।

গণমাধ্যমের কার্যক্রমে সরকারের হস্তক্ষেপ নেই

দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো গণমাধ্যমের সম্পাদকীয়, পরিচালনা বা ব্যবসায়িক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেনি। বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারের মুখেও আমরা অসাধারণ সংযম দেখিয়েছি। টেলিভিশন টকশো ও কলামে এই সরকারের বিরুদ্ধে প্রায়ই মিথ্যা ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার হয়েছে। তবুও আমরা না সেন্সর করেছি, না প্রতিশোধ নিয়েছি; এমনকি প্ররোচিত হলেও আমরা অভিযোগ করিনি, লাইসেন্স স্থগিত করিনি। বরং আগের সরকারের সময় জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া কিছু গণমাধ্যমকে পুনরায় প্রকাশনা বা সম্প্রচারের সুযোগ করে দিয়েছি। এটি আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতি অঙ্গীকারের স্পষ্ট প্রমাণ।

সরকারে প্রবেশাধিকার সব সময় উন্মুক্ত ছিল

সীমিত প্রবেশাধিকারের অভিযোগের বিপরীতে সাংবাদিকরা আমাদের উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীদের সঙ্গে সরাসরি ও উন্মুক্তভাবে যোগাযোগের সুযোগ পেয়েছেন। কোনো সাংবাদিককে তার গণমাধ্যমের পরিচয় বা সম্পাদকীয় অবস্থানের কারণে সাক্ষাৎকার বা ব্রিফিং থেকে বঞ্চিত করা হয়নি। আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি এবং আমাদের আচরণ সেটিরই প্রতিফলন।

সচিবালয়ের অ্যাক্রেডিটেশন প্রক্রিয়ার সংস্কার

অ্যাক্রেডিটেশন ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে নোয়াবের সমালোচনা ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর। আগের পদ্ধতিটি ছিল মারাত্মকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত; প্রবেশপত্র এমন ব্যক্তিদের হাতে পৌঁছেছিল, যাদের কোনো বৈধ সাংবাদিকতার ভূমিকা ছিল না, যাদের মধ্যে কিছু ছিল রাজনীতিবিদ, লবিস্ট ও সুযোগসন্ধানী, যারা এই বিশেষ সুবিধা ব্যবহার করে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অন্যায্য প্রভাব বিস্তার করত।

আমরা সেই কাঠামো ভেঙে দিয়ে একটি অস্থায়ী পাস ব্যবস্থা চালু করেছি যা নিশ্চিত করছে যে, প্রকৃত সাংবাদিকরা সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার পাচ্ছেন। এটি প্রবেশাধিকার সীমিত করার জন্য নয়; বরং একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার জন্য।

আগের অ্যাক্রেডিটেশন নীতিমালায় সাংবাদিকদের সরকারপন্থি অবস্থান নিতে বাধ্য করার শর্ত ছিল। এমনকি এতে কিছু অপমানজনক ধারা ছিল, যা সাংবাদিকদের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী। অন্তর্বর্তী সরকার সেটি সংশোধন করেছে। দীর্ঘমেয়াদি নবায়ন সুবিধাসহ নতুন অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

চাকরির নিরাপত্তা

স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন, যেসব সাংবাদিক তাদের চাকরি হারিয়েছেন, তা সরকারের নির্দেশে নয়; বরং গণমাধ্যম মালিকদের সম্পাদকীয় বা করপোরেট কৌশলগত পুনর্বিন্যাসের কারণে হয়েছে। এগুলো সম্পূর্ণরূপে মালিকপক্ষের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের ফল, সরকারের কোনো চাপ বা নির্দেশ নয়।

সাংবাদিকদের নিরাপত্তা : যৌথ দায়িত্ব

আমরা সব নাগরিকের মতো সাংবাদিকদের শারীরিক নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের অগ্রাধিকার। তবে এ দায়িত্ব গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও যৌথভাবে ভাগ করে নিতে হবে।

এই বছরের শুরুর দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীন গঠিত মিডিয়া সংস্কার কমিশন একটি নতুন ‘সাংবাদিক সুরক্ষা আইন’ প্রণয়নের প্রস্তাব করেছে, যাতে আইনি সুরক্ষা বৃদ্ধি পায় এবং সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভয়ের কারণে স্ব-সেন্সরশিপ কমে। সরকার প্রস্তাবিত আইনটি প্রণয়নের বিষয়টি বিবেচনা করছে।

শিল্পের ভেতরেও আত্মসমালোচনার প্রয়োজন

আমরা গঠনমূলক সমালোচনার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও নোয়াবকে পরামর্শ দিচ্ছি প্রথমে নিজেদের ভেতরে নজর দিতে। নিজেদের সদস্যদের কার্যকলাপ পরীক্ষা করা উচিত, বিশেষ করে সাংবাদিকদের বেতন বঞ্চনা, শ্রম অধিকার হরণ, সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়া শত্রুভাবাপন্ন পরিবেশে কাজ করানো এবং অসহনীয় কর্মপরিবেশ সৃষ্টির অভিযোগে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

একটি সূক্ষ্ম রূপান্তরের সময়কাল পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন হিসেবে আমরা ইচ্ছাকৃতভাবেই ‘হ্যান্ডস-অফ’ পদ্ধতি বজায় রেখেছি, যাতে গণমাধ্যম ভয় বা হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ করতে পারে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের কাছে কেবল একটি স্লোগান নয়; এটি এমন একটি নীতি, যা আমরা পালন করি।

তথ্যের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্টভাবে দায়ী পক্ষকে লক্ষ্য করে উপস্থাপিত হলে নোয়াবের উদ্বেগ অধিক গুরুত্ব পেত। ঘটনাবলির ভুল ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে করা সাধারণীকৃত অভিযোগ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অগ্রসর করে না; বরং বাংলাদেশের গণমাধ্যম খাতের প্রকৃত সমস্যাগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়।

আমরা স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এই মৌলিক মূল্যবোধ রক্ষা ও উন্নত করতে আমরা সব অংশীজনকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়