শিরোনাম
◈ টাকা ফেরাতে আইন, প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সমন্বয়ে জোর দিচ্ছে সরকার ◈ দুর্বৃত্তের হামলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে ঢাবি শিক্ষার্থী নিহত ◈ যেসব এলাকায় বুধবার বিদ্যুৎ থাকবে না জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি ◈ ব্যাটারি চালিত রিকশা বন্ধে কড়া বার্তা: তিন রিকশা ভাঙচুর, চালকদের ক্ষতিপূরণ ও বিকল্প আয়ের আশ্বাস ◈ যে কারণে বাংলাদেশে বিমানবন্দরে আটকানো হয়েছিলো কলকাতার অভিনেতা শাশ্বতকে! (ভিডিও) ◈ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি পুরোপুরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার : প্রেস সচিব ◈ আ. লীগের নিবন্ধন বাতিলের পর সম্পদ বাজেয়াপ্তের দাবি উঠেছে, নেতারা এখন কি করবে?  ◈ প‌রি‌স্থি‌তি স্বাভা‌বিক, পাকিস্তান-বাংলাদেশ সিরিজের নতুন সূচি প্রকাশ ◈ ভারত আবার বাড়াবা‌ড়ি কর‌লে আমরা চুপ থাকবো না: শহীদ আফ্রিদি ◈ ভারত শাসিত কাশ্মীরে আবারও বন্দুকযুদ্ধ, নিহত ৩

প্রকাশিত : ১০ মার্চ, ২০২৫, ০৭:৪৬ বিকাল
আপডেট : ০৮ মে, ২০২৫, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী, তাই আমি তাকে বলি: আসুন, আমাদের সঙ্গে চুক্তি করুন, গার্ডিয়ানকে ড. ইউনূস

মনজুর এ আজিজ : হাসিনার শাসনামলে 'ভয়াবহ' বিপর্যস্ত বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিতে রাজি হন ড. ইউনূস।

গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে, শুরু হয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচার।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিক হান্না এলিস-পিটারসেনকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে ড. ইউনূস শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের সেসময়ের পরিস্থিতি প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'তিনি (হাসিনা) যে ক্ষতি করেছেন তা ছিল ভয়াবহ। এটি ছিল আরেকটি গাজার মতো, পুরোপুরি বিধ্বস্ত একটি দেশ। তবে এখানে ভবন নয়, বরং ধ্বংস হয়েছে সব প্রতিষ্ঠান, নৈতিকতা, জনগণ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক।'

দরিদ্রদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ ধারণার জন্য নোবেল পুরস্কার পাওয়া ৮৪ বছর বয়সী মুহাম্মদ ইউনূস দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করেছিলেন। শেখ হাসিনার শাসনামলে তিনি রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে বিবেচিত হন এবং বছরের পর বছর অপপ্রচার ও নিপীড়নের শিকার হন। বেশিরভাগ সময় তিনি বিদেশে কাটিয়েছেন। কিন্তু যখন ছাত্র প্রতিবাদীরা তাকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানায়, তিনি রাজি হন। 

ইউনূস দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘শেখ হাসিনা যে ক্ষতি করেছেন, তা বিশাল। এটি একটি সম্পূর্ণ ধ্বসংপ্রাপ্ত দেশ ছিল, যেন আরেকটি গাজা। তবে এখানে ভবন নয়, পুরো প্রতিষ্ঠান, নীতি, মানুষ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ধ্বংস করা হয়েছে।’ 

শেখ হাসিনার শাসনামল জুড়ে নির্যাতন, সহিংসতা ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। জুলাই ও আগস্ট মাসের রক্তাক্ত কয়েক সপ্তাহে তার দমনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়। জাতিসংঘের মতে পুলিশের এই সহিংস দমননীতি ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হতে পারে। তবে শেখ হাসিনা সব ধরনের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। 

হাসিনার শাসনামল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'কেউ সমস্যা করছে? তাদের গুম করে দেব। নির্বাচন করতে চান? আমরা আপনাকে সব আসনে জয়ের নিশ্চয়তা দেব। টাকা চান? ব্যাংক থেকে এক মিলিয়ন ডলার ঋণ নেন, কখনো ফেরত দিতে হবে না।'

'সরকারের সক্রিয় অংশগ্রহণে ব্যাংকগুলোকে জনগণের টাকা লুটের পূর্ণ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। কর্মকর্তাদের বন্দুক দিয়ে পাঠিয়ে সবকিছু সই করিয়ে নিত,' বলেন ড. ইউনূস।

ভারতে আশ্রয় নিয়ে শেখ হাসিনা নতুন বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন এবং এতে দেশ অস্থিতিশীল হচ্ছে বলে মনে করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, 'ভারত তাকে আশ্রয় দিচ্ছে, এটা মানা যায়। ভারতকে ব্যবহার করে আমরা যা যা করছি, তা নষ্ট করার প্রচারণা চালাতে দেওয়াটা বিপজ্জনক। এটি দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলে।'

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত সরকারই ড. ইউনূসের একমাত্র সমস্যা নয়। গার্ডিয়ান বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসাও ড. ইউনূসের জন্য সুসংবাদ নয়। 

তবে, ড. ইউনূসের মনে করেন, বাংলাদেশে ট্রাম্প 'বিনিয়োগের ভালো সুযোগ' এবং 'বাণিজ্যিক অংশীদার' হিসেবে দেখতে পারেন। তিনি বলেন, 'ট্রাম্প একজন ডিলমেকার। তাই আমি তাকে বলছি, আমাদের সঙ্গে ডিলে আসুন। তিনি যদি তা না করেন, তাহলে বাংলাদেশ কিছুটা কষ্ট পাবে। কিন্তু, এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থামবে না।'

ইউনূস দেশের সমস্যাগুলোকে শেখ হাসিনার শাসনের ফলাফল হিসেবে দেখাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার শাসন কোনও সরকার ছিল না, এটি ছিল একদল ডাকাতের পরিবার। ওপর মহলের আদেশ পেলেই কাজ হতো। কেউ সমস্যা সৃষ্টি করছে? আমরা তাকে গায়েব করে দেব। নির্বাচন করতে চান? আমরা নিশ্চিত করব যে আপনি সব আসনে জিতবেন। টাকা চান? ব্যাংক থেকে দশ লাখ ডলার ঋণ নিন, যা ফেরত দিতে হবে না।’

শেখ হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতির মাত্রা ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে এবং অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। তার আত্মীয়দের মধ্যে যারা আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিলেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন তার ভাইঝি টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সংসদ সদস্য। বাংলাদেশে দুর্নীতির তদন্তে তার নাম উঠে আসার পর তিনি ট্রেজারি থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি সব ধরনের অসদাচরণ অস্বীকার করেছেন। 

যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডের আর্থিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চলমান অভিযানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার মিত্রদের কাছ থেকে বাংলাদেশের ব্যাংক থেকে নেওয়া আনুমানিক ১৭ বিলিয়ন ডলার উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে শিগগিরই এই অর্থ ফেরত পাওয়ার আশা কমে যাচ্ছে। 

ইউনূস বলেন, ‘সরকারের সক্রিয় অংশগ্রহণে ব্যাংকগুলোকে লুটপাটের পূর্ণ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। তারা তাদের কর্মকর্তাদের বন্দুক নিয়ে পাঠাতো সবকিছু অনুমোদন করাতে।’

ডিসেম্বরে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারতের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক প্রত্যর্পণ অনুরোধ করা হয়েছিল, তবে ইউনূস নিশ্চিত করেছেন যে, ভারত সরকারের কাছ থেকে ‘কোনও সাড়া’ আসেনি। তিনি বলেছেন, হাসিনা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি হবেন, এমনকি যদি তা অনুপস্থিতিতেও হয়।

শেখ হাসিনা ইউনূসের সমালোচনায় আরও সোচ্চার হয়ে উঠছেন: তিনি সম্প্রতি তাকে ‘গুন্ডা’ বলে অভিহিত করেছেন। তার দাবি, ইউনূস দেশে ‘সন্ত্রাসবাদীদের’ ছেড়ে দিচ্ছেন। 

ইউনূস বলেছেন, ভারত তাকে আশ্রয় দিলে তা সহ্য করা হবে, কিন্তু ‘তিনি আমাদের করা সবকিছু বাতিল করার চেষ্টা করতে ভারতকে তার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া, বিপজ্জনক। এটি দেশটিকে অস্থিতিশীল করে তোলে’। 

ইউনূস সম্প্রতি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ধনকুবের ইলন মাস্ককে বাংলাদেশে তার স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক নিয়ে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ইউনূসের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, মাস্কের এপ্রিলে বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। 

ইউনূস আশা প্রকাশ করেছেন যে, ট্রাম্প বাংলাদেশকে একটি ‘ভালো বিনিয়োগের সুযোগ’ এবং বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে দেখতে পারেন এবং তিনি মাস্কের সফরের সময় তাকে এই প্রস্তাব দিতে চান। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী, তাই আমি তাকে বলি: আসুন, আমাদের সঙ্গে চুক্তি করুন।’

ইউনূস বলেছেন, ‘যদি তিনি তা না করেন, বাংলাদেশ কিছুটা মনোক্ষুণ্ন হবে। তবে এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেমে থাকবে না।’ অুনবাদ: বাংলা ট্রিবিউন, ডেইলি স্টার থেকে নেয়া

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়