জাফর খান: বিবিসি-র অ্যারাবিক রিপোর্টার মোহাম্মদ ওসমান সাংবাদিক হিসেবে সারা জীবন সুদানেই কাটিয়েছেন। গত মাসে যখন দেশটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই সামরিক বাহিনীর সংঘর্ষের সময় ওসমান সংবাদ সংগ্রহ করতে থাকার সিদ্ধান্তও নিয়ে নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে মাতৃভূমি ছেড়ে মিশরে বিপজ্জনক যাত্রার কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। যে সময়ে ওসমান সুদান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তখন খার্তুমের আকাশে শুধুই ছিল কালো ধোঁয়া। যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ওমদুরমান ও খার্তুম বাহরির এলাকায় সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফের মধ্যে চলছিল তীব্র সংঘর্ষ। অন্যদিকে বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে ভীতি ছড়াতে লুটপাটের মহাযজ্ঞ চলছে অবাধে। বিবিসি
একজন সাংবাদিক হিসাবে সংঘাতের এ খবর বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেওয়া দায়িত্ব থাকলেও এক স্থান হতে অন্য স্থানে যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা, দুর্বল ইন্টারনেট ও যোগাযোগ পরিষেবাসহ একজন সাংবাদিকের পরিবার ও তার নিজের নিরাপত্তা ওসমানের প্রস্থানকে অনিবার্য করে তোলে।
তিনি বলেন, আমরা ২৮ এপ্রিল দুপুরে বাসা থেকে যাত্রা শুরু করি।
ওমদুরমান শহর থেকে মিশরের সীমান্তের দিকে ছেড়ে যাওয়া একটি বাসে ওসমান তাঁর পরিবারের সঙ্গে চড়ে বসেন। কিন্তু যাত্রার ১০ মিনিটের মধ্যে একটি যুদ্ধবিমান দেখা গেলে তা লক্ষ্য করে আরএসএফ কর্মীরা গুলি চালায়। সেসময় ওসমানদের গাড়ি থামিয়ে হঠাৎ সশস্ত্র যোদ্ধারা জানতে চান তাদের গতবিধির বিষয়ে। যোদ্ধারা বন্দুক তাক করায় উপস্থিত যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে তারা স্থান ত্যাগ করতে সক্ষম হন।
বর্ণনায় বলেন, ওমদুরমানের বাইরের জেলাগুলো পেরিয়ে যাওয়ার সময় তারা যতই পশ্চিম দিকে অগ্রসর হন ততই আরএসএফের উপস্থিতি কম দেখেন ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নজরে আসে। ক্যাফেসহ বেশ কিছু দোকানে এসময় ছিল ক্রেতাদের বেশ ভিড়। গণপরিবহনগুলো ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ধীর গতিতে। আর নিরাপত্তা বাহিনীর অভাবে চলছে ছিনতাই ও লুটপাট। তবে সাংবাদিক পরিচিতির জন্য এলাকাগুলো ছাড়তে বেগ পায়নি তারা।
তিনি বলেন, পৌঁছানোর সময় দেশটির সীমান্তবর্তী খার্তুম ও উত্তরের অংশে কোন চেক পয়েন্ট দেখিনি। উত্তরের কিছু শহর মিরোয়ি, ডংগোলা ও ওয়াদি হালফাতে দেখা মিলে ব্যাক্তিগত যানের।
বর্ণনায় ওসমান বলেন, গন্তব্যস্থান ওয়াদি হালফায় পৌঁছাতে সময় লাগে ২৪ ঘন্টা। খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপনের জন্য ডংগোলা শহরের এক ক্যাফের কাছে অবস্থান নেই। ওগঅএঊ
৫০ বছরের এক বৃদ্ধা তাকে জানান, চারদিন খাদ্য ও পানীয়ের অভাবে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তারা। তার ছেলে মিশরে যাওয়ার ভিসা আনবেন এ অপেক্ষায় আছি।
এসময় সীমান্তে ভারত, ইয়েমেন, সিরিয়া, সেনেগাল ও সোমালিয়ার বেশ কিছু শিক্ষার্থীর দেখা পান ওসমান। তবে সীমান্তে ছিল প্রচুর ভিড় ও বিশৃংখলা। আর এত লোকের জন্য বরাদ্দ মাত্র একটি টয়লেট। নীল নদ পাড়ি দিতে শেষ ফেরিতে মিশরের আবু সিম্বেলে পৌছার জন্য আবালবৃদ্ধ-বর্ণিতা সবাই নির্ঘুম রাত কাটায়। পরদিন ভোরে মিশরের উদ্দেশে যাত্রা করেন ওসমান ও তার পরিবার। ‘
তবে দুঃখ ও কষ্ট মিশ্রিত অনুভূতি নিয়ে ওসমান বলেন, পরিবারকে বাঁচাতে পারার আনন্দ অন্যদিকে আত্মীয়,পরিজন ও বন্ধুদের অনিরাপদ স্থানে ফেলে আসার নির্মম বেদনা আমার হৃদয়ে রয়ে গেছে।
জেকেএইচ/এসএ
আপনার মতামত লিখুন :