শিরোনাম
◈ ষষ্ঠবারের মতো বাড়লো হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় ◈ স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান কোন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল  ◈ মহাখালী ও কাপ্তানবাজারে ৩ শতাধিক ঘর পুড়ে ছাই, দগ্ধ ৭  ◈ বৃষ্টি আইনে আয়ারল্যান্ডকে ২২ রানে হারালো বাংলাদেশ ◈ ৩০ মার্চ থেকে সরকারি হাসপাতালেই বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা শুরু: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ সমকামীদের অ্যাপের ফাঁদে পড়ে খুন হন স্থপতি ইমতিয়াজ, গ্রেপ্তার ৩ ◈ মাছ মাংস ছাড়াই খাবার ব্যয় বেড়েছে ১৪৪৩টাকা ◈ রমজানে আন্দোলনের ডাক দেয়ায় বিএনপির সমালোচনা প্রধানমন্ত্রীর ◈ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বরখাস্তে ইসরাইলে প্রতিবাদের ঝড় ◈ ধর্মঘটে অচল জার্মানীর পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক 

প্রকাশিত : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০২:৪৫ দুপুর
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০২:৪৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক রণেশ মৈত্র মারা গেছেন

রণেশ মৈত্র

মাজহারুল ইসলাম: ভাষা সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, দেশবরেণ্য একুশে পদক প্রাপ্ত প্রবীণ সাংবাদিক ও কলামিস্ট, পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক রণেশ মৈত্র সোমবার ভোর ৩ টা ৪৭ মিনিটে রাজধানীর পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইহলোক ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

দেশবরেণ্য প্রবীণ সাংবাদিক ও কলামিস্ট রণেশ মৈত্র’র পরলোকগমনের খবর পাবনায় ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া। 

পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ বলেন, তার সন্তান অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। তিনি পৌঁছানোর পর পারিবারিক সিদ্ধান্তে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে। 

১৯৩৩ সালের ৪ অক্টোবর রাজশাহী জেলার ন’হাটা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক বাসস্থান পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার ভুলবাড়িয়া গ্রামে। বাবা রমেশ চন্দ্র ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। সপ্তম শ্রেণিতে ওঠার পর থেকেই রণেশ মৈত্র টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন। নিজ জীবন সংগ্রাম থেকে শিক্ষা নিয়েই রণেশ মৈত্র দেশের অসহায়, শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের জন্য আন্দোলন ও সংগ্রাম করেন। ১৯৫০ সালে পাবনা জিসিআই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৫ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৫৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৫১ সালে সিলেট থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নওবেলাল পত্রিকায় যোগদানের মাধ্যমেই তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু। এরপর কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সত্যযুগে তিন বছর সাংবাদিকতার পর ১৯৫৫ সালে তিনি যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। ১৯৬১ সালে ডেইলি মর্নিং নিউজ এবং ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত দৈনিক অবজারভারে পাবনা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯২ সালে দি নিউ নেশনের মফস্বল সম্পাদক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর ১৯৯৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দি ডেইলি স্টারের পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। পরে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়ে একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে দেশের শীর্ষ পত্রপত্রিকায় কলাম লিখে সারাদেশে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছেন। 

সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই প্রখ্যাত সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনীতিক রণেশ মৈত্র মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন জনস্বার্থের আন্দোলনে সব সময় সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন।

১৯৪৮ সালে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ভাষা আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় রণেশ মৈত্রের রাজনৈতিক জীবন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে জেল খেটেছেন। সফল আইনজীবী হিসেবেও দীর্ঘদিন তিনি দায়িত্ব পালন করে পরে সেখান থেকেও স্বেচ্ছায় অবসর নেন।

তার স্ত্রী পূরবী মৈত্র বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পাবনা জেলা শাখার সভাপতি। ৪ ছেলেমেয়ে সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তার প্রকাশিত গ্রন্থ ‘রুদ্র চৈতন্যে বিপন্ন বাংলাদেশ’ পাঠক মহলে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে।

এ ছাড়া তার প্রকাশিত স্মারক গ্রন্থ ‘নিঃসঙ্গ পথিক’ তার জীবনের উপর বিভিন্নজনের এক বর্ণিল চিত্রগাঁথা।  তার উল্লেখযোগ্য লেখা  বাংলাদেশ কোন পথে? আত্মজীবনী , আলোচিত গ্রন্থ ‘রুদ্র চৈতন্যে বিপন্ন বাংলাদেশ’। আঁধার ঘোচানো বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু রচিত জেলখানার ডায়েরী বাঙলা একাডেমী প্রকাশিত ‘কারাগারের রোঁজনামচায় তিনি রণেশ মৈত্রের নাম ছয়বার উল্লেখ করেছেন (দ্রষ্টব্য উক্ত গ্রন্থের ৮৫, ৯০, ১১৮, ১৩৮, ১৫৭ এবং ১৬১ পৃষ্ঠা) ।

গুণী এই ব্যক্তির পরলোকগমনে তাৎক্ষণিক ভাবে পাবনার সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিকসহ নানা পেশাজীবী সংগঠন ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শোক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা এবং তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেছেন। সম্পাদনা: খালিদ আহমেদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়