শিরোনাম
◈ সিলেটে ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ২ ◈ থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ ◈ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় ◈ শিক্ষক নিয়োগ: ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি, ঢাবি শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার ৫ ◈ বিদ্যুৎ-গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না ◈ রোববার খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান  ◈ নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি ◈ উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হতে পারে: সিইসি ◈ ভারতের রপ্তানি করা খাদ্যদ্রব্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পেয়েছে ইইউ ◈ ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা বিলে জো বাইডেনের স্বাক্ষর

প্রকাশিত : ১০ জানুয়ারী, ২০২৩, ১১:১১ রাত
আপডেট : ১০ জানুয়ারী, ২০২৩, ১১:১১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভোর রাতের স্বপ্ন এবং সে

আনোয়ার হক

আনোয়ার হক: শৈশব-কৈশোরের চেনা মুখ, অনিন্দ সুন্দর প্রিয় মানুষটির সাথে দেখা হয়ে গেল গ্রামের একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে। অনুষ্ঠান শেষে দিনের বাকিটুকু কাটলো একসাথে ছোট বেলার স্মৃতি বিজড়িত নানান পছন্দের জায়গায় ঘুরে ফিরে গল্প কথায়। জানতামই না যে এতো কথা জমেছিল দু'জনেরই পেটে! 

একই স্কুলে লেখাপড়া করতাম আমরা, সে আমার দুই ক্লাস জুনিয়র। আমাদের স্কুলে তখনও কো-এডুকেশন চালু ছিল। স্কুলে যাতায়াতের রাস্তাটাও ছিল একই। 

দিন শেষে বিদায়কালে গাড়ির কাঁচ নামিয়ে তার নামের সাথে স্বামীর পদবী যুক্ত ফেসবুক আইডিটা বলে গেল। টেলিফোন বিনিময় হলো না তাড়াহুড়োয়! 

সাপ্তাহিক ছুটির অলস দিন। ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে নিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে সোফায় হেলান দিয়ে বসে ফেসবুক লগইন করলাম। কিন্তু ফেসবুকে মন বসছে না। অভ্যাসগত নোটিফিকেশন চেক করতে ইচ্ছে করছে না! ফিডে স্ক্রল করছি; লাইক, কমেন্টে স্বাচ্ছন্দ্য নেই! 

ভোর রাতে দেখা স্বপ্নটার অদ্ভূত এক আবেশ জড়িয়ে আছে সারা দেহ মনে। সেলুলয়েড রিল হয়ে ঘুরছে মনের রংগীন পর্দায়। স্বপ্নে পাওয়া আইডি সার্স দিতেই মোবাইল স্ক্রিনে ভাসে উঠলো ছোট বেলার সেই প্রিয় ঝকঝকে মুখখানার পরিপক্ক এক অবয়ব। কি অদ্ভুত! তাই না? মনের মাঝে বেজে উঠলো পৌরাণিক গল্পের সেই গানঃ "স্বপনে দেখি আমি মধু মালার দেশওরে......। স্বপন যদি মিথ্যারে হইতো মালা কেমনে বদল হইলো রে।"
ভাবছি ফেসবুকের ইনবক্সে গিয়ে তার ফোন নাম্বার দিতে বলবো কি না? অথবা আমার নাম্বার দিয়ে ফোন করতে বলবো? অবশ্য তার নাম্বার পাওয়া কঠিন কিছু নয় আমার জন্য। কারণ তার একাধিক কাজিন আমার ক্লাসমেট যাদের সাথে অনিয়মিত হলেও যোগাযোগ আছে। 

অনেক বছর যাবত দেখা সাক্ষাৎ নাই আমাদের। আগে অন্ততঃ ঈদের সময় গ্রামে গেলে দেখা হতো। কিন্তু কোন অজানা কারণে কিম্বা অতি  ব্যস্ততার অজুহাতে দেখা করা হয়ে ওঠে না। 

স্বপ্নের রিল আবার চলতে শুরু কললো।
আম গাছের ছায়ায় পুকুরের শান বাঁধানো ঘাটে বসে কথা হলো দীর্ঘ সময়। এক ফাঁকে চাচি চানাচুর, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ আর সরিষার তেল দিয়ে মুড়ি মাখা দিয়ে গেলেন। ভাগ্যিস স্বপ্নে সেগুলো খাইনি। খাইনি মানে কথার মাঝে ফাঁকই পাইনি খাওয়ার। স্বপ্নে খেলেতো ব্রেক ফেল করে বারবার ছোট ঘরে দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে হতো আজ। 

হঠাৎ বিনা মেঘে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হলো। 
: আনোয়ার ভাই, তোমার মনে আছে? বৃষ্টির দিনে চাচি তোমাকে ছাতা ছাড়া স্কুলে যেতে দিতেন না। আর আমি আমাদের বৈঠকখানার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতাম তোমার ছাতার নীচে করে স্কুলে যাবো বলে। 

: মনে নেই আবার! তোমাকে বৃষ্টির ঝাপটা থেকে বাঁচাতে আমার এক পাশ ভিজে একাকার হয়ে যেতো। অবস্থাটা এমন হয়ে গিয়েছিল যে বৃষ্টিতে কাক ভেজা হওয়া  থেকে বাঁচতে অন্য কেউ আমার ছাতার নীচে আসার চেষ্টাই করতো না। সবাই ধরে নিয়েছিল যে জায়গাটা সুরভি'র জন্যই সংরক্ষিত। 

: বৃষ্টিতে তো তোমার এলার্জি, ঘরে যাও। সর্দি লেগে যাবে। 

: তোমার কাছেতো আজ ছাতা নাই, অতএব, চলো ঘরে গিয়েই বসি। 

: আমি বরং বাড়ি চলে যাই। অনেকেই হয়তো আমাদের বাড়িতে অপেক্ষা করে আছেন আমি এসেছি শুনে। 

: হুম... তোমার যাওয়াই উচিত। আমি জানি বিপদ্গ্রস্ত বা অভাবী মানুষগুলো সাহায্যের আশায় আসে তোমার কাছে। আচ্ছা দাড়াও একটু, ঘর থেকে একটা ছাতা এনে দিচ্ছি। 

: চলে যাচ্ছি বলে কি মন খারাপ হলো? 

: নাহ্ এখন আর আমার যথন তখন খারাপ হয় না। মনতো আমার তখনই খারাপ হয়েছিল যখন তুমি তোমার কাঙ্খিত দেশসেরা কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়ে খুশিতে টগবগ করতে করতে ঢাকা চলে গেলে। তুমি সেদিন এতোটাই এক্সাইটেড ছিলে যে আমার সাথে দুই মিনিট কথা বলার সময়ও  ছিল না তোমার। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে পড়তেও চাওনি আমার মনে কি আছে, আমি কিছু বলতে চাই কিনা। অথচ তুমিই কেবল আমার মুখ দেখে মনের কথা পড়তে পারতে। 
এটা তুমিও জানতে আমিও জানতাম। অথচ সেদিন তোমার অপেক্ষায় বৈঠকখানায় দাঁড়িয়ে থাকা আমাকে ঠিকমতো দেখেছিলে কিনা আমার মনে যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক করেছিল। এখন যাও, পারলে সকালে একবার এসো। আমরা দশটার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবো। 

: আমাদের বাড়িতে যাবে না একবার? 

: চাচি নেই ভাবলে বুকের ভিতরটায় হাহাকার করে ওঠে (অশ্রু সজল)। কি আদরই না করতেন আমাকে। মনে আছে(?) যখন আমাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতেন তুমি তখন হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যেতে। আমাকে সব সময় মা বলে ডাকতেন বলে হিংসুটে তুমি বলতেঃ ও আম্মা... এটা তোমার কোন কালের মাগো? যে সারাক্ষণ মা মা করতে থাকো। থাক সেসব কথা। বৃষ্টি থামলে চাচাকে দেখতে সন্ধ্যার পর যাবো একবার। আমি যেতে যদি নাও পারি সকালে তুমি এসো কিন্তু। 

সন্ধ্যায় যখন টিভির রিমোট টিপে টিপে চ্যানেলের পর চ্যানেল পাল্টাচ্ছিলাম ভাল একটা টকশো দেখার জন্য তখনই মেয়ে তার মোবাইলে কথা বলতে বলতে কাছে এসে বললোঃ এই নাও বাবা, সুরভি ফুপির সাথে কথা বলো। আমি তো হতবাক! তাহলে সেও কি দেখেছে একই স্বপ্ন?!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়