শীতকালে বিয়ে, পিকনিক, বারবিকিউ পার্টিরসহ আমেজ একপ্রকার লেগে থাকে। এর সঙ্গে যোগ হয় অলসতা। আর এসব অনিয়মে ওজন বাড়ার প্রবণতা বাড়ে।
সাধারণত, ওজন কমানোর জন্য যে সব খাবারের কথা উল্লেখ থাকে, শীতকাল জুড়ে অক্ষরে অক্ষরে সে সব মেনে চলা কঠিন হয়ে পড়ে। এসব অনিয়মের হাত ধরেই বাড়ে মেদ।
শীতে বাড়তি ওজন ঝরাতে অনেকেই জিমের সময় বাড়িয়ে দেন, কেউ বা কঠিন ডায়েটে মেনে চলেন। কিন্তু জমে থাকা মেদ গলতে অনেক সময় নেয়। তাই শীত কেটে যাওয়ার পরেও বয়ে বেড়াতে হয় এই অনিয়মের বোঝা।
তবে পুষ্টিবিদরা বলছেন, এই অনিয়মের দিনেও শরীরকে মেদমুক্ত রাখার উপায় আছে। শীতের অনিয়ম ঢেকে দিতে পারে কমলালেবুর কোয়া। এমনিতেই মেদ কমাতে ফলের ভূমিকা অনেকখানি। যে কোনো ডায়েটেই ফল বা ফলের রস রাখা হয়। প্রতি দিন অন্তত ২০০ গ্রাম ফল শরীরকে সুস্থ রাখে। শীতের মৌসুমি ফল কমলালেবুর ভূমিকাও অনেক, কিন্তু অনেকেই জানেন না, অনিয়মের মেদ ঝরিয়ে ফেলতে চাইলেও পাতে রাখতে হবে এই ফল।
কিন্তু কেন?
পুষ্টিবিদরা বলছেন, লো ক্যালোরি ও ভিটামিন সি-এ ভরপুর এই ফলের রয়েছে ফ্যাট পোড়ানোর ক্ষমতা। একটি মাঝারি মাপের কমলালেবু থেকে মেলে ৫০ ক্যালোরি, ০.৯ গ্রাম প্রোটিন, ১৬.২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৩.৪ গ্রাম ফাইবার, ২৩৮ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, প্রায় ১৭ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৬১ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম ও ৬৩.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি।
এই ফলে পানির ভাগ খুব বেশি। গোটা ফলের প্রায় ৮৭ শতাংশই পানি। তাই শীতেও শরীরের ভেতরকে শুকাতে দেয় না এই ফল। তাছাড়া শীতে কম পানি পান করার প্রবণতা সবার মধ্যেই দেখা যায়। কমলালেবু সেই পানির অভাব পূরণ করে। এমনিতেই শরীর তার প্রয়োজনীয় কাজ সারার জন্য পর্যাপ্ত পানি না পেলে শরীরের ভিতরেই লবণের সঙ্গে পানিকে মিশিয়ে দিয়ে জমিয়ে রাখে সেই নুন-পানি। সেই জমা পানি দিয়েই যাবতীয় শারীরবৃত্তীয় কাজ সারতে হয়। ফলে শরীর ফুলে যায়। কমলালেবু ওই পানি জমার কাজেই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পানির অভাব তৈরি হতে দেয় না বলে শরীরও অকারণে পানি জমিয়ে রাখে না। তাই ফুলে যাওয়ার হাত থেকে মুক্তি মেলে।
এছাড়া ফাইবার বেশি থাকায় পেট ভর্তি রাখতে সাহায্য করে এই ফল। এ কারণে খিদের চোটে ভুল খাবার খেয়ে ফেলার প্রবণতাও অনেকটা কমানো যায়। কমলালেবুতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে। এর উপস্থিতির জন্য ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা হয়। পাশাপাশি, এটি ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুগুলিকে মেরামত করে শরীরকে টোনড রাখতে সাহায্য করে।
মেদ ঝরানোয় কমলালেবুর ভূমিকা নিয়ে ‘আমেরিকান কলেজ অব নিউট্রেশন’-এর গবেষকরা ফলটির মধ্যে পানির দ্রবণীয় এক ভিটামিনের সন্ধান পান। যা কি না স্থূলত্ব কমাতে বিশেষ কাজে আসে। ফ্যাট পোড়ানোর সময় এই ভিটামিন শরীরের গ্লাইসেমিক কন্ট্রোলকে বাড়িয়ে তোলে। ফলে ফ্যাট ঝরতে বেশি সময়ও লাগে না। তাই মেদ ঝরাতে শীতে পাতে রাখুন এই টক-মিষ্টি ফলটি।
সূত্র: যুগান্তর