শিরোনাম
◈ এবার মাহাথির মোহাম্মদ পুলিশ রিপোর্ট করলেন অনোয়ার ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে! ◈ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের আন্দোলন স্থগিত, বুধবার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা ◈ নতুন নকশার ৫০০ টাকার নোট আসছে বৃহস্পতিবার বাজারে ◈ আফ্রিকা হতে পারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির হাব ◈ খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন তিন বাহিনী প্রধান ◈ শেষ সম‌য়ে গোল খে‌য়ে আজারবাইজানের কা‌ছে হারলো বাংলাদেশ ◈ বি‌পিএ‌লে রংপুর রাইডার্সকে চ‌্যা‌ম্পিয়ন করার স্বপ্ন লিটন দা‌সের ◈ রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ফেসবুক আইডি হ্যাকড ◈ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ১০৬ মামলায় চার্জশিট দিল পুলিশ ◈ ফিফা আরব কাপ, স্বাগ‌তিক কাতারকে একমাত্র গোলে হারালো ফিলিস্তিন

প্রকাশিত : ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৭:১৪ বিকাল
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ইতালির শ্রমবাজারে বড় সুযোগ: ফ্রিল্যান্সার ও স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের জন্যও কোটা থাকছে

ইতালি সরকার কর্তৃক ২০২৬ থেকে ২০২৮ সালের জন্য অনুমোদিত নতুন 'ফ্লো ডিক্রি' বা ডেক্রেতো ফ্লুসি অনুযায়ী, আগামী তিন বছরে পরিবহন, কৃষি, নির্মাণ এবং উৎপাদনসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলো থেকে অন্তত পাঁচ লাখ কর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে। এই তিন বছরের কোটায় ফ্রিল্যান্সার, স্টার্ট-আপ বা উদ্যোক্তাদের জন্যও সীমিত সংখ্যক সুযোগ রাখা হয়েছে।

যদিও ইতালি সরকারের এই ফ্লো ডিক্রি বিদেশি কর্মীদের জন্য নিয়মিত অভিবাসনের সুযোগ তৈরি করেছে, দেশটিতে অভিবাসন সংক্রান্ত প্রতারণা ও শোষণের ঘটনাও কম নয়। এ কারণে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নতুন ব্যবস্থা এখনও তুলনামূলকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। ইনফোমাইগ্রেন্টস ইতালি সরকারের এই ফ্লো ডিক্রিটি বিশ্লেষণ করে অভিবাসী কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরেছে।

ফ্লো ডিক্রি কী এবং এর উদ্দেশ্য

ফ্লো ডিক্রি (ডেক্রেতো ফ্লুসি) হলো ইতালীয় সরকারের একটি পরিকল্পনা যা নির্ধারণ করে যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলো থেকে কত সংখ্যক কর্মী ইতালিতে কাজের জন্য আসার সুযোগ পাবেন এবং কী কী শর্ত আরোপ করা হবে। এই ডিক্রির উদ্দেশ্য হলো নিরাপদ অভিবাসনের সুযোগ তৈরি করা এবং অভিবাসীদের উৎস দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করে ইতালিতে আরও দক্ষ কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে শ্রমবাজারের ঘাটতি পূরণ করা।

২০২৬-২০২৮ সালের জন্য ডিক্রিটি চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত হয়েছে। এতে মৌসুমি ও অ-মৌসুমি (নন-সিজনাল) কর্মীসহ স্বনির্ভর কর্মীদের জন্য নতুন নিয়ম যুক্ত করা হয়েছে। নির্ধারিত কোটার বাইরেও শরণার্থী, পরিচর্যাকারী এবং রাষ্ট্রহীন মানুষের জন্য কিছু সুযোগ রাখা হয়েছে।

এই তিন বছরে মোট চার লাখ ৯৭ হাজার ৫৫০টি কাজের অনুমতি দেওয়া হবে, অর্থাৎ প্রতি বছর এক লাখ ৬৪ হাজার ৮৫০ জন করে বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেবে ইতালি। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) নিয়মিত অভিবাসনের সুযোগ তৈরি হওয়ায় ইতালি সরকারের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে। আইওএম-এর মহাপরিচালক অ্যামি পোপ এই তিন বছরের নতুন ফ্লো ডিক্রিকে 'শুধু উন্নয়ন নয়, এটি জীবনরক্ষাকারী ব্যবস্থা' বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, নিয়মিত অভিবাসনের পথ প্রসারিত হলে তা শুধু শ্রম ঘাটতির সমাধানই করে না, বরং মানুষকে শোষণ ও অনিয়মিত পথের ফাঁদে পড়া থেকে রক্ষা করে।

অ-মৌসুমি (নন-সিজনাল) কর্মী নিয়োগের খাত ও অগ্রাধিকার

অ-মৌসুমি কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হবে মূলত পরিবহন ও সরবরাহ, ধাতব ও যান্ত্রিক কাজ, পর্যটন, কৃষি ও কৃষিজ পণ্য, নির্মাণ এবং উৎপাদন খাতে। আত্মকর্মসংস্থানকারী ব্যক্তিদের জন্যও অতিরিক্ত পারমিট রয়েছে, যার মধ্যে উদ্যোক্তা, ফ্রিল্যান্সার, শিল্পী এবং স্টার্ট-আপ অন্তর্ভুক্ত। কিছু কোটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে, যারা অগ্রাধিকার পাবেন। এর মধ্যে রয়েছে: নিরাপদ অভিবাসনে ইতালির সঙ্গে সহযোগিতাকারী দেশগুলোর কর্মীরা; ভেনেজুয়েলা বা অন্যান্য তালিকাভুক্ত দেশে ইতালীয় বংশোদ্ভূত কর্মীরা; রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি এবং শরণার্থী; এবং পারিবারিক যত্ন ও সামাজিক-স্বাস্থ্য সহায়তায় নিযুক্ত কর্মীরা।

অভিবাসী কর্মীদের জন্য নতুন বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে: নিয়োগে নতুন নতুন ক্ষেত্র অন্তর্ভুক্ত করা, উৎস দেশগুলোতে আরো বেশি প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি, নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসনের সুযোগ তৈরিতে বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে শক্তিশালী সহযোগিতা বৃদ্ধি, উচ্চ দক্ষ কর্মী আনার জন্য প্রণোদনা, কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ পারমিটকে ওয়ার্ক পারমিটে রূপান্তরের সুযোগ দেওয়া এবং ডিজিটাল ব্যবস্থায় আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুততর করা।

কোনো ইতালীয় নিয়োগকর্তা যদি এই প্রকল্পের অধীনে একজন অভিবাসীকে যোগ্য কর্মী হিসেবে নিয়োগ করতে চান, তবে সেই নিয়োগকর্তাকেই কর্মীর পক্ষে আবেদন জমা দিতে হবে। আলজেরিয়া, ভারত, মরক্কো, সেনেগাল, শ্রীলঙ্কা, পেরু, টিউনিশিয়া এবং ইউক্রেনের মতো যেসব দেশের সঙ্গে ইতালির চুক্তি রয়েছে, সেইসব দেশের নাগরিকরা অগ্রাধিকার পাবেন।

মৌসুমী কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য

মৌসুমী কর্মী হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি ইতালিতে অস্থায়ী কাজের জন্য আসেন, যা নির্দিষ্ট কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেমন—কৃষি (ফসল কাটা, রোপণ, খামারের কাজ) এবং পর্যটন (হোটেল, রেস্তোরাঁ, গ্রীষ্মকালীন রিসোর্ট)। যেসব দেশের সঙ্গে ইতালির অভিবাসন চুক্তি রয়েছে, সেসব দেশের কর্মীরা সংরক্ষিত কোটায় অগ্রাধিকার পাবেন। মূলত গত পাঁচ বছরে ইতালিতে কাজ করেছেন এমন মৌসুমী কর্মী এবং কৃষি বা পর্যটন শিল্পের প্রধান নিয়োগকারী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে আবেদনকারীরা অগ্রাধিকার লাভ করবেন। যদি কেউ ইতোমধ্যে ইতালিতে মৌসুমী কাজ করে থাকেন, তার নিয়োগের সুযোগ বেশি থাকবে এবং তিনি কয়েক বছর মেয়াদি মৌসুমী কাজের অনুমতিও পেতে পারেন। নতুন কর্মীদের জন্য একজন নিয়োগকর্তাকেই আবেদন করতে হবে, তবে এক্ষেত্রে নাগরিকত্বের দেশ অগ্রাধিকার পাবে।

২০২৬-২০২৮ সালের ডিক্রিতে ইতালিতে থাকা অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্যও বিশেষ সুযোগ রাখা হয়েছে। অগ্রাধিকারের মধ্যে থাকবেন: রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি এবং শরণার্থীরা, যারা প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন; যারা ইতালিতে পড়াশোনা বা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং তাদের পারমিট পরিবর্তন করতে চান; পারিবারিক যত্ন, সামাজিক স্বাস্থ্যসেবা, অথবা বয়স্ক/প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তাকারী কর্মী; এবং ইতালির সঙ্গে প্রত্যাবাসন বা অভিবাসন সহযোগিতা চুক্তি আছে এমন দেশ থেকে আসা মানুষেরা। যদি কারো কোনো কাগজপত্র না থাকে, কিন্তু ওই ব্যক্তি গৃহস্থালির যত্ন, বয়স্কদের সহায়তা, অথবা সামাজিক-স্বাস্থ্য সহায়তায় কাজ করেন, তাহলে একজন নিয়োগকর্তা তার পক্ষে আবেদন করলে তাকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। শরণার্থী এবং রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিরাও বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে সুযোগ পেতে পারেন।

নিয়োগকর্তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়সীমা ও সতর্কতা
নিয়োগকর্তাদের কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং আবেদন জমা দেওয়ার বিশেষ দিনগুলো সম্পর্কে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। প্রতি বছর ২৩ অক্টোবর থেকে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদনগুলো প্রস্তুত করতে হবে এবং নির্ধারিত দিনগুলোতে (ক্লিক-ডে) আবেদনপত্র জমা দিতে হবে:

  • ১২ জানুয়ারি: কৃষিখাতে মৌসুমী কর্মীদের আবেদন
  • ৯ ফেব্রুয়ারি: পর্যটনখাতে মৌসুমী কর্মীদের আবেদন
  • ১৬ ফেব্রুয়ারি: অ-মৌসুমী কর্মী, যাদের দেশের সঙ্গে ইতালির সহযোগিতা চুক্তি আছে তাদের আবেদন
  • ১৮ ফেব্রুয়ারি: অন্যান্য অ-মৌসুমী কর্মীদের আবেদন

আবেদনের সঙ্গে মজুরি, বাসস্থান এবং বিদেশী কর্মীদের প্রয়োজনীয়তার প্রমাণ জমা দিতে হবে এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ ও শ্রম চুক্তি মেনে চলতে হবে। যদি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কোটার আবেদন সম্পন্ন না হয়, ছয় মাসের মধ্যে ভিসা ইস্যু করা না হয়, প্রয়োজনীয় তথ্য সংযুক্ত না করা হয়, কিংবা প্রতারণা ও জালিয়াতি হয়, তবে আবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।

একটি পাচারবিরোধী হটলাইন তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে ২০২৪ সালকে 'প্রতারণার বছর' হিসেবে উল্লেখ করেছে। তারা জানিয়েছে, এসব প্রতারণার অনেক ক্ষেত্রে ফ্লো ডিক্রির সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। এতে বলা হয়, ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে মধ্যস্থতাকারীরা নিজেদের এজেন্ট বা নিয়োগকর্তা পরিচয় দিয়ে চাকরির আবেদন, কাজের চুক্তি বা ভিসা ইস্যু সংক্রান্ত নানা কারণ দেখিয়ে অভিবাসীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। একবার টাকা পাঠানোর পরেই তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায় না। তিউনিশিয়া, মরক্কো, ভারত এবং মিসর থেকে আসা অন্তত ১৩৯ জন অভিবাসী কর্মী এই ধরণের জালিয়াতির শিকার হয়েছেন। এসব জালিয়াতির কারণে শ্রম শোষণও বেড়েছে।

সূত্র: জনকণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়