শিরোনাম
◈ উখিয়া–টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে আবারও ২৪ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ, বাড়ছে স্থানীয়দের উদ্বেগ ◈ বাংলাদেশি ব‌লে গালি দিয়ে বাংলাভাষী ভারতীয় মুসলিম তাড়ানোয় হতাশা ওড়িশায় ◈ শতভাগ ফিট না হলে নেইমার-ভিনিসুসদের বিশ্বকাপ খেলা হবে না  ◈ দেশবাসীর সম্মিলিত সমর্থনই আমাদের পরিবারের সবচেয়ে বড় শক্তি: তারেক রহমান ◈ আগামী ৮ জুলাই শুরু হ‌বে লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ ◈ জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ–আহতদের জন্য ২,১০৬ কোটি টাকার আবাসন প্রকল্প অনুমোদন, বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা ◈ সি‌লে‌টে নয়, ঢাকা পর্ব দি‌য়ে শুরু হচ্ছে বিপিএল ◈ মধ্যরাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে বাড়ানো হলো নিরাপত্তা ◈ মোদির শুভেচ্ছায় কৃতজ্ঞতা জানালো বিএনপি ◈ রাঙ্গামাটিতে কয়েক সেকেন্ডের মাঝারি ভূকম্পন অনুভূত

প্রকাশিত : ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৯:৫৮ সকাল
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কোরআনের দৃষ্টিতে বনায়ন ও বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব

বৃক্ষরাজি আল্লাহর সৃষ্টির শৈল্পিক নৈপুণ্য প্রকাশ করে থাকে। মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ। এসব আমাদের কল্যাণে তিনি সৃজন করেছেন। একই মাটি ও একই পানিতে আমরা বিভিন্ন উদ্ভিদ জন্মাতে দেখি, যাতে বিভিন্ন ফুল ও ফল হয়।

যেগুলো প্রাণিকুলের জীবনোপকরণের জন্য আল্লাহর বিশাল অনুগ্রহ। আল্লাহ বলেন, ‘অতএব মানুষ একবার লক্ষ করুক তার খাদ্যের দিকে। আমি (কিভাবে তাদের জন্য) বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকি। অতঃপর ভূমিকে ভালোভাবে বিদীর্ণ করি।

অতঃপর তাতে উৎপন্ন করি খাদ্য-শস্য, আঙুর ও শাক-সবজি, জয়তুন ও খর্জূর, ঘন পল্লবিত উদ্যানরাজি এবং ফলমূল ও ঘাস-পাতা। তোমাদের ও তোমাদের গবাদিপশুর ভোগ্যবস্তু হিসেবে।’ (সুরা : আবাসা, আয়াত : ২৪-৩২)

বৃক্ষরাজি ও প্রাণিজগৎ পরস্পর নির্ভরশীল

পৃথিবীতে বৃক্ষের পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকলে অক্সিজেনের অভাবে একসময় মানুষের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হবে। এমনকি মানবজীবনের জন্য এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর ও মারাত্মক বিপর্যয়কর হয়ে উঠতে পারে।

বৃক্ষরাজি ও প্রাণিজগতের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক। তাদের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা। বিশেষ করে মানুষ ও উদ্ভিদের পরস্পরের জীবনোপকরণের জন্য একে অন্যের ওপর পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। আল্লাহ মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদায় আসীন করেছেন। আর জগতের সব কিছুই তিনি মানুষের কল্যাণে সৃষ্টি করেছেন।

আল্লাহ বলেন, ‘যিনি (আল্লাহ) সৃষ্টি করেন অতঃপর বিন্যস্ত করেন। যিনি পরিমিত বিকাশ সাধন করেন ও পথনির্দেশ করেন। যিনি তৃণাদি উৎপন্ন করেন। অতঃপর তাকে শুষ্ক-কালো বর্জ্যে পরিণত করেন।’ (সুরা : আলা, আয়াত : ২-৫)
আল্লাহ এখানে বৃক্ষরাজি ও প্রাণিজগতের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং পরিবেশের ভারসাম্যের কথা উল্লেখ করেছেন, যা পৃথিবীর জন্য অত্যাবশ্যক।

ফসল ও ফলমূল আল্লাহর অপার দান

ফলমূল মহান আল্লাহর বিশেষ দান। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তোমরা যে শস্যবীজ বপন করো, সে বিষয়ে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা কি ওটা উৎপন্ন করো, না আমি উৎপন্ন করি? আমি যদি ইচ্ছা করি, তবে অবশ্যই ওটাকে খড়কুটায় পরিণত করতে পারি। তখন তোমরা হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে। (তখন তোমরা বলবে) আমরা তো নিশ্চিতভাবে ধ্বংস হয়ে গেলাম। বরং আমরা তো বঞ্চিত হয়ে গেলাম।’ (সুরা : ওয়াকিআ, আয়াত : ৬৩-৬৭)।

বৃক্ষরাজি আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করে : বৃক্ষরাজি আল্লাহর গুণগান করে। আল্লাহকে সিজদা করে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি দেখো না যে আল্লাহকে সিজদা করে, যা কিছু আছে নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে এবং সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্ররাজি, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু ও বহু মানুষ? আর বহু মানুষ আছে তাদের ওপর শাস্তি অবধারিত হয়েছে। আসলে আল্লাহ যাকে লাঞ্ছিত করেন তাকে সম্মানদাতা কেউ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ যা চান তাই-ই করেন।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ১৮)

জান্নাতের আপ্যায়ন হবে ফলমূল দিয়ে : নানা রকম ফলফলাদি দিয়ে আল্লাহ জান্নাতবাসীকে আপ্যায়ন করা হবে। কোরআনে এসেছে, ‘আর ডান পাশের দল। কতই না ভাগ্যবান ডান পাশের দল! (তারা থাকবে) কাঁটাবিহীন কুলগাছের বাগানে। (সেখানে আরো থাকবে) কাঁদিভরা কলাগাছ। তারা থাকবে প্রলম্বিত ছায়াতলে। সদা প্রবহমান পানির মধ্যে। থাকবে প্রচুর ফলমূলের মধ্যে। যা শেষ হবে না, নিষেধও করা হবে না।’ (সুরা : ওয়াকিআ, আয়াত : ২৭-৩৩)

বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ শস্য-ফল উৎপন্ন করেন : কোরআনে এসেছে, ‘আমরা পানিপূর্ণ মেঘমালা থেকে প্রচুর বারিপাত করি, যাতে তা দ্বারা উৎপন্ন করি শস্য ও উদ্ভিদ এবং ঘন পল্লবিত উদ্যান।’ (সুরা : নাবা, আয়াত : ১৪-১৬)

গাছ রিজিকের উৎসমূল : গাছ থেকে উৎপাদিত ফল-ফসল খেয়ে প্রাণিকুল জীবন ধারণ করে। আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করি পরিমাণমত। অতঃপর তা জমিনে সংরক্ষণ করি। আর আমি ওটাকে সরিয়ে নিতেও সক্ষম। অতঃপর আমরা তা দিয়ে তোমাদের খেজুর ও আঙুরের বাগান সৃষ্টি করি। তোমাদের জন্য সেখানে থাকে প্রচুর ফলফলাদি এবং তোমরা তা থেকে ভক্ষণ করে থাকো। আর আমি সৃষ্টি করেছি (জয়তুন) বৃক্ষ, যা সিনাই পর্বতে জন্মায়। যা থেকে উৎপন্ন হয় তৈল ও ভক্ষণকারীদের জন্য রুচিকর খাদ্য।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ১৮-২০)

বৃক্ষে আছে বান্দার জন্য বিশেষ উপদেশ : গাছপালার মধ্যে মানুষের জন্য শিক্ষণীয় বহু উপাদান আছে। আল্লাহ বলেন, ‘আর পৃথিবীকে আমি প্রসারিত করেছি এবং তাতে পাহাড় স্থাপন করেছি। আর তাতে উৎপন্ন করেছি সব ধরনের নয়নাভিরাম উদ্ভিদরাজি। প্রত্যেক বিনীত ব্যক্তির জন্য, যা চাক্ষুষ জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ। আর আমরা আকাশ থেকে বরকতময় বৃষ্টি বর্ষণ করি। অতঃপর তার মাধ্যমে বাগান ও শস্যবীজ উদ্গত করি এবং দীর্ঘ খর্জূর বৃক্ষসমূহ, যাতে থাকে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুরের মোচা। বান্দাদের জীবিকা হিসেবে। আর আমরা এর দ্বারা জীবিত করি মৃত জনপদকে। এভাবেই হবে পুনরুত্থান।’ (সুরা : কাফ, আয়াত : ৭-১১)

বৃক্ষ নিধন আল্লাহর ক্রোধের কারণ : যারা নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করবে, তারা আল্লাহর ক্রোধের শিকার হবে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন সে ফিরে যায় (অথবা নেতৃত্বে আসীন হয়), তখন সে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টির এবং শস্য ও প্রাণী বিনাশের চেষ্টা করে। অথচ আল্লাহ অশান্তি পছন্দ করেন না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২০৫)।

ইকোসিস্টেমের পরিমিতিতে বৃক্ষ : আল্লাহর বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে পরিমিতভাবে সৃষ্টি হয়েছে বৃক্ষ। প্রত্যেক সৃষ্ট বা বিষয়ের মধ্যেও আল্লাহ অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর পৃথিবীকে আমরা বিস্তৃত করেছি এবং তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি। আর সেখানে আমরা প্রত্যেক বস্তু উৎপন্ন করেছি পরিমিতভাবে।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ১৯)

আল্লাহর সৃষ্টিসমূহের মধ্যে বৃক্ষ এক অনন্য সৃষ্টি। এর রয়েছে বহুমুখী গুরুত্ব ও তাৎপর্য। বৃক্ষরাজিসহ সম্পূর্ণ ইকোসিস্টেমকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা আবশ্যক।

বৃক্ষপূজা নিষিদ্ধ : বৃক্ষরাজি নিজেই আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদাবনত থাকে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আর তৃণলতা ও বৃক্ষরাজি উভয়ে থাকে সিজদাবনত।’ (সুরা : আর-রহমান, আয়াত : ৬)

সুতরাং যে নিজেই অন্যের সামনে সিজদাবনত, তাকে সিজদা করার কোনো মানে হয় না।

অষ্টম হিজরিতে হোনায়েন যুদ্ধে যাওয়ার পথে সাহাবায়ে কেরাম ‘জাতু আনওয়াত্ব’ নামক একটি বড় বৃক্ষ দেখতে পান। মুশরিকরা গাছটিকে ‘মঙ্গলবৃক্ষ’ বলে ধারণা করে তার ডালে সমরাস্ত্রসমূহ ঝুলিয়ে রাখত। তা দেখে সাহাবিদের কেউ বলল, হে আল্লাহর রাসুল! তাদের ‘জাতু আনওয়াত্ব’র মতো আমাদের জন্য একটা ‘জাতু আনওয়াত্ব’র ব্যবস্থা করুন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলে উঠলেন, ‘সুবহানাল্লাহ! এটি তো সেরূপ মারাত্মক কথা যেরূপ কথা মুসা (আ.)-এর সম্প্রদায় বলেছিল, ‘তাদের যেমন অনেক উপাস্য রয়েছে, তদ্রূপ আমাদের জন্যও একজন উপাস্যের ব্যবস্থা করে দিন।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত ১৩৮)

অতঃপর রাসুল (সা.) বলেন, ‘সেই সত্তার কসম করে বলছি, যাঁর হাতে আমার জীবন, অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতি অবলম্বন করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৮০)

অতএব নানাবিধ বৃক্ষপূজার কুসংস্কার থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়