শিরোনাম
◈ ইরানের ইস্পাহানে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত ◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান

প্রকাশিত : ১৯ মে, ২০২২, ১০:২১ দুপুর
আপডেট : ১৯ মে, ২০২২, ০৩:৫৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবির

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখনো ভেরি হাই, ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ নেই

ড. আহমদ আল কবির

ভূঁইয়া আশিক রহমান: [২] রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবির বলেছেন, উন্নয়নশীল বিশ্ব ও উন্নয়নগামী বিশ্ব সকলেই করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরিস্থিতির শিকার। করোনার সময় বেশিরভাগ দেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক দেশের প্রবৃদ্ধি কমেছে। ভারত ও চীনের মতো শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশ, ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশই করোনায় দারুণভাবে প্রভাবিত হয়েছে। বাস্তব বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের অর্থনৈতিক পলিসি নির্ধারণ করতে হবে। বিশ্বের প্রতিটি দেশই তা করছে।

[৩] বিশ্বব্যাপী উৎপাদন কমে গেছে। মানুষের মোবিলিটি নষ্ট হয়ে গেছে। এই মোবিলিটির মাধ্যমেই ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হয়। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বিশ্ব পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া খাদ্য ও তেলসমৃদ্ধ দেশ। খাদ্য উৎপাদনেও তারা শীর্ষ দেশ। বিশ্বকে দারুণভাবে খাদ্য সরবরাহ করে আসছিলো। তেলের বাণিজ্যে তারা একটা মুখ্য ভূমিকা পালন করছিলো। করোনা সংকটের সঙ্গে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ যোগ হয়ে বিশ^ পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে ফেলেছে। 

[৪] সার্বিকভাবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা হলেও স্বস্তির মধ্যে আছে। কারণ করোনার সময়টা কঠিন গেলেও আমাদের অর্থনীতি ভালো ছিলো। আমাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি অনেক মজবুত। প্রবৃদ্ধিও পজেটিভ রাখতে সক্ষম হয়েছিলাম আমরা। এশিয়া ও ইউরোপের অনেক দেশ তখন নেগেটিভ প্রবৃদ্ধিতে  চলে গিয়েছিলো। করোনার মধ্যেও বাংলাদেশের আমদানি কমেনি। রেমিটেন্স প্রবাহও কমেনি। সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক কার্যক্রমও মোটামুটিভাবে সফলভাবে ব্যবস্থাপনা করে কঠিন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ পেয়েছি। 

[৫] ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বিশ্ব টালমাটাল। কে কোন দিকে যাবে, কাকে সমর্থন দেবে, এ নিয়ে চলছে নানান রাজনীতি। এই কঠিন পরিস্থিতিতেও আমরা অনেকটা স্বস্তির মধ্যে আছি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ^ব্যাপী তেলের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। এতে হয়তো এখন আমরা বড় রকমের ক্ষতির শিকার হবো না। তবে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির আশঙ্কা আছে। খাদ্যে আমরা অনেকটা স্বয়ংসম্পন্ন হলেও আমদানিও করি অনেক পণ্য। আমাদের আমদানি পণ্যের মধ্যে গম ও তেল অন্যতম। এই খাদ্যপণ্য আসতো বেশির ভাগই ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে। ভারত থেকেও আমরা গম আমদানি করি। কিন্তু আমদানি ব্যবস্থাপনায় বিঘ্ন ঘটায় দেশে খাদ্য সরবরাহে সমস্যা দিয়েছে। এর ফলে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম। 

[৬] আগামী বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে খাদ্য ব্যবস্থাপনা। খাদ্যপণ্য ব্যবস্থাপনায় যেন আমরা সামাল দিতে পারি। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। বিদেশের বাজারে খাদ্যপণ্য সহজতর হবে না, পাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসছে দিন দিন। বিশ্বের প্রতিটি দেশকেই খাদ্যপণ্য ব্যবস্থাপনায় প্রস্তুতি নিতে হবে। খাদ্যমজুত ভান্ডার গড়ে তুলতে হবে। একদিকে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে, অপর দিকে খাদ্যমজুত ভান্ডারকে অনেক শক্তিশালী করতে হবে।

[৭] তেলের মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতি বাড়াবে। জিনিসপত্রের দাম বাড়াবে। ফলে মুদ্রাস্ফীতি যেন সহনশীল পরিস্থিতিতে রাখা যায়, এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে বাজেট প্রণয়নের সময়। এখনো পর্যন্ত আমরা মোটামুটি সামালভাবে দিয়ে আসছি। ভালো আছি না বলে সরকারকে বলতে হবে, বিশ্ব কঠিন পরিস্থিতি আমরাও সামাল দিয়ে চলছি। বিশ্ব পরিস্থিতি খারাপ হলে তা সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি এখনই গ্রহণ করতে হবে। কিছু কিছু কৃচ্ছ্রতা সাধনও করতে হবে। 

[৮] বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখনো প্রায় ৪২ বিলিয়ন ডলার। এখনো ভেরি হাই রিজার্ভ আছে আমাদের। বর্তমান মজুতকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিয়ে ৫-৬ মাস চলতে পারবে বাংলাদেশ। তিন মাসের চলার ব্যবস্থা থাকলে সেটাকেই অনেক ভালো রিজার্ভ হিসেবে গণ্য করা হয়। হয়তো পেমেন্ট হয়েছে বেশি, সেজন্য রিজার্ভ কিছুটা কমেছে। রিজার্ভ ধরে রাখার জন্য সরকার সাম্প্রতিকভাবে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা খুব সময়োপযোগী। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর বন্ধ করা হয়েছে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানিও অনুসাহিত করা হয়েছে। প্রসাধনীয় সামগ্রীসহ খুব গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানি নিষিদ্ধের ব্যাপারে অনুৎসাহিত করতে হবে। বিশ্ব পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে। রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। রিজার্ভ নিয়ে কোনো সংকট আছে বলেও মনে করি না আমি। এখনো আমাদের রেমিটেন্স আসছে উল্লেখ করার মতো। এপ্রিল মাসেও রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স এসেছে দেশে। রপ্তানিতে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ এসেছে। তবে মুদ্রাস্ফীতি ধরে রাখা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। মুদ্রাস্ফীতির ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে সরকারকে। 

[৯] বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার তুলনা সঠিক নয়। কারণ শ্রীলঙ্কার দ্ইু কোটি মানুষের দেশ, আমাদের ১৮ কোটি মানুষ। কোটিরও বেশি মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকেন। তারা প্রতিনিয়তই দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠান। আমাদের মূল শক্তি ব্যবসা-বাণিজ্য গার্মেন্টস। আমাদের রপ্তানি বাড়ছে। আমাদের রেমিটেন্স বাড়ছে। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন। আমাদের কৃষি শক্তিশালী। আমাদের লোন পোর্টফোলিও অনেক অনেক নিচে। আমরা একমাত্র চীনের সঙ্গেই ব্যবসা করছি না। বিশ্বের বহু দেশের সঙ্গে আমরা বাণিজ্য করছি। জাপান আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গেও আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছি। শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশের হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই, বাস্তব কোনো এভিডেন্সও নেই। সরকারকে অহেতুক সমালোচনা করার জন্যই সমালোচকরা তা বলছেন বলে আমি মনে করি। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়