শিরোনাম
◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

প্রকাশিত : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৯:৩৩ সকাল
আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৯:৩৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রাকৃতিক খাদ্যে, লাইফস্টাইল পরিবর্তনে সুস্থ-সবল জীবনের হাতছানি

ডা. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবীর

ভূঁইয়া আশিক রহমান : ডা. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবীর-লাইফস্টাইল মোডিফায়ার। ১৯৯৩-৯৪ সেশনে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন। ২০০০ সালে এমবিবিএস কোর্স সম্পন্ন করেন। পরবর্তী ১ বছরে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করেন। ২০০২ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ফেনীর ন্যাশনাল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। 

২০০৯ সালে বিআইইউআর ঢাকা থেকে আল্ট্রাসনোগ্রাফির উপর সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করেন। ২০১০ সালে তিনি এফসিজিপিপরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। একই সালে বারডেম হাসপাতাল থেকে ডায়াবেটিসের উপর উচ্চতর ডিগ্রি সিসিডিতে উত্তীর্ণ হন। ২০১১ সালে এ্যাজমার উপর ডিপ্লোমা মডিউল ইন এ্যাজমা (ইংল্যান্ড) অর্জন করেন। 

২০১২ সালে ডায়াবেটিসের উপর ডিপ্লোমা মডিউল ইন ডায়াবেটিস (ইংল্যান্ড) অর্জন করেন। এছাড়াও ডিপ্লোমা মডিউল ইন সিওপিডি (ইংল্যান্ড) ও স্পাইরোমেট্টির উপর স্পাইরো ৩৬০ কোর্স (আমেরিকা) সম্পন্ন করেন। মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির এখন ডিপ্লোমা ইন্টারন্যাশনাল এ্যাজমা মডিউল কোর্সের ট্রেইনার ও মেনটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইফস্টাইল বিষয়ক পরামর্শ দিয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা পাওয়া এই চিকিৎসক আমাদের নতুন সময় ও আমাদেরসময় ডটকমকে দিয়েছেন বিশেষ সাক্ষাৎকার। খোলামেলা আলাপচারিতায় উঠে এসেছে, কীভাবে একজন মানুষ লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে, প্রাকৃতিক খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে সুস্থ-সবল জীবন যাপন করা সম্ভব। 

চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত নীতিমালা এসেছে যুগে যুগে নানান সভ্যতা ও জীবনাচার থেকে। সুস্থতার জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞান দিয়েছে নতুন নতুন নানান প্রযুক্তিগত উপাদান, তবুও প্রাকৃতিক নির্মলতাকে কখনোই ছোট করে দেখে না আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান। ফলে একবিংশ শতাব্দীতে আধুনিক বিশ্বে প্রাকৃতিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে পরিবর্তন আনতে হবে জীবনযাপন পদ্ধতিতে। সুস্থতার মূলমন্ত্রে রয়েছে পাঁচটি বিশেষ শর্ত। কী সেই শর্ত? লাইফস্টাইল মোডিফায়ার ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের মতে সে শর্তগুলো হচ্ছে- [১] স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস। [২] না খাওয়ার অভ্যাস (অটোফেজি)। [৩] ঘুমের অভ্যাস। [৪] দৈনন্দিন ব্যায়ামের অভ্যাস। [৫] মানসিক প্রশান্তির চর্চা।

তিনি বলেন, সুস্থতার মূলমন্ত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, খাদ্যাভ্যাস। স্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমে সুস্থতা অনেকটাই নির্ভর করে। তাই সর্বপ্রথমেই কোনটি স্বাস্থ্যকর আর কোনটি অস্বাস্থ্যকর খাবার তা জানা এবং চিহ্নিত করা উচিত। বর্তমানে আমাদের জন্য প্রচলিত খাবারগুলো কয়েকটা শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন- প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াজাত। আমরা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যতোটা খাবার প্রয়োজন তার সবটুকুই আমরা প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করতে পারি। এসব খাবার কিছুটা দীর্ঘ সময় সংরক্ষণের জন্য কিছু প্রাকৃতিক উপায় অনুসরণ করা হয়ে আসছে প্রাচীনকাল থেকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো রোদে শুকানো, বেকিং করা, ফ্রোজেন করা, ভিনেগারের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা, আচার বানিয়ে রাখা, ভ্যাকুয়াম পদ্ধতিতে টিনে সংরক্ষণ করা। এসব পদ্ধতিতে খাবার সংরক্ষণ করলে আমাদের জন্য তেমন কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই বরং কিছু কিছু খাবার স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভালো। বাণিজ্যিক প্রক্রিয়াজাত। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক। অর্গানিক। 

যে সকল খাবার সবসময়ের জন্য নিষিদ্ধ : প্রচলিত খাবারের মধ্য থেকে কিছু খাবার আমাদের সকলের খাদ্য তালিকা থেকে সারা জীবনের জন্য বাদ দিতে হবে। কারণ এই খাবারগুলো কোনো প্রাকৃতিক খাবার নয়। সয়াবিন, সূর্যমুখী, ভূট্টা, রাইস ব্রান ও অন্যান্য সকল ভেজিটেবল তেল আজীবনের জন্য নিষেধ। চিনি, গুড়, সকল ধরনের কোমল পানীয়, ডায়েট ড্রিংকস, জুস ও অন্যান্য বেভারেজ। সব ধরনের ফাস্ট ফুড, যেমন ফ্রাইড চিকেন, বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পিৎজ্জা ইত্যাদি। স্ট্রিট ফুড বা খোলা রাস্তায় যেসব খাবার বিক্রি হয়- যেমন সিঙ্গারা, সমুচা, ফুচকা, চটপটি, বেলপুরী, ঝালমুড়ি ইত্যাদি। সব রকম প্রসেসড ফুড অর্থাৎ কারখানায় তৈরি ও প্যাকেটজাত খাবার যেমন বিস্কুট, চানাচুর, নুডুলস, চিপস, পাস্তা, ওটস, কর্ন ফ্লেকস, পাউরুটি, কেক ইত্যাদি। বাজারে বিক্রি হওয়া সকল ধরনের মিষ্টান্ন। রেস্টুরেন্ট বা হোটেলের খাবার।   

যে সকল খাবার সাময়িক সময়ের জন্য নিষিদ্ধ : সকল ধরনের শস্য জাতীয় খাবার যেমন চাল,গম, ভূট্টা, যব থেকে তৈরি সকল খাবার যেমন ভাত, চিড়া, মুড়ি, খই, রুটি, পরোটা ইত্যাদি। এসব সাময়িকভাবে খাবার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে পরিপূর্ণভাবে মেনে চললে আপনি যখন জেকে লাইফস্টাইলের মেনটেইনিং পর্বে যাবেন তখন পরিমিত মাত্রায় খেতে পারবেন। সব ধরনের ফল আপাতত নিষেধ। সরাসরি দুধ,মিষ্টি দই,টক দই, পুডিং। সবজির মধ্যে আলু, স্কোয়াশ, বেবী কর্ন, কচুর মুখী আপাতত নিষেধ। সব ধরনের ডাল যেমন মসুর, মুগ, ছোলা, মাসকালাই, শিমের বিচি, মটরশুটি আপাতত নিষেধ। 

যে সকল খাবার খেতে পারবেন : তেল (ফ্যাট)। অর্গানিক এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েল। অর্গানিক এক্সট্রা ভার্জিন কোল্ড প্রসেসড কোকোনাট ওয়েল। খাটি ঘি। খাটি মাখন। ঘানিতে ভাঙ্গানো খাটি সরিষার তেল। [৮] প্রোটিন। কুসুমসহ ডিম। মাছ (চর্বিযুক্ত মাছ, সামুদ্রিক মাছ)। তাজা মাশরুম। দেশি গরুর চর্বিযুক্ত মাংস পরিমিত মাত্রায়। খাসির চর্বিযুক্ত মাংস পরিমিত মাত্রায়। দেশি মুরগি। [৯] শর্করা। সকল শাক যেমন পালং, পুই, লাউ, ডাটা, কচু, মেথি, মুলা, হেলেঞ্চা, কলমি, সরিষা ইত্যাদি শাক খাবেন। প্রায় সব ধরনের সবজি যেমন ফুলকপি, বাধাকপি, ব্রকলি, টমেটো, ঢেঁড়স, লাউ, বরবটি, শিম, চিচিংগা, মুলা, অল্প গাজর, সবুজ মিষ্টিকুমড়া, সকল রকম ক্যাপসিকাম ইত্যাদি (শাক-সবজি অবশ্যই অর্গানিক এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েল দিয়ে রান্না করবেন)। শসা, টমেটো, গাজর, লেটুস পাতা, কাঁচা পেঁপে  সালাদ হিসেবে খাবেন। সকল রকম বাদাম খেতেপারবেন। কাঠবাদাম ১২-২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে কাঁচা খাবেন। কাজু ও চীনা বাদাম ঘি অথবা এক্সট্রা ভার্জিন কোল্ড প্রেসড কোকোনাট ওয়েল দিয়ে মাঝারি আঁচে অল্প সময় ভেঁজে খাবেন। 

পানীয় : অর্গানিক কোকোনাট ভিনেগার উইথ দ্য মাদার অথবা অর্গানিক আপেল সিডার ভিনেগার উইথ দ্য মাদার (১ চা চামচ ১ গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খালি পেটে খাবেন, চাইলে সাথে লেবু বা আদার রস, এক্সট্রা ভার্জিন কোল্ড প্রসেসড কোকোনাট ওয়েল ১ চামচ মিশিয়ে নিতে পারেন)। পর্যাপ্ত পানি পান করবেন। পাঁচদিন পর থেকে পানিতে সামান্য হিমালয়া পিংক সল্ট মিশিয়ে পান করবেন। এক লিটার পানিতে আধা চা চামচ পিংক সল্ট মিশিয়ে কিছুক্ষণ পর পর খাবেন। প্রতিদিন ১টি কচি ডাবের পানি পান করুন। ২/৩ টেবিল চামচ চিয়া সীড ১ কাপ পানিতে অন্তত ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে খাবার খাওয়ার আগে অথবা পরে খেতে হবে। একটি গ্লাসে ২/৩ ভাগ পানিতে ১ চামচ রেডিজেল-এন পাউডার গুলিয়ে খাবেন। এছাড়া তোকমা ভিজিয়ে খেতে পারবেন। প্রতিদিন খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে এক গ্লাস (৩০০ মিলি) হলুদের চা খেতে পারবেন। হলুদের চা বানাতে কাঁচা হলুদ বাটা ১ টেবিল চামচ, ১ টেবিল চামচ এক্সট্রা ভার্জিন কোল্ড প্রেসড কোকোনাট ওয়েল, ১ টেবিল চামচ অর্গানিক মধু ও ১/৪ চা চামচ কালো গোল মরিচের গুড়া এক গ্লাস ঈষদুষ্ণ (হালকা কুসুম গরম) পানিতে মিশিয়ে খাবেন। যারা জেকে লাইফস্টাইল নতুন শুরু করবেন তারা মধু ছাড়া খাবেন।

কখন কী খাবেন? প্রথমেই বলে নিচ্ছি, আমরা গতানুগতিক নিয়মে ৩-৬ বেলা খেতে পরামর্শ কোনোভাবেই দিই না। আমাদের শরীরটা একটা গাড়ির ইঞ্জিনের মতো, এর মধ্যে একটা জ্বালানির ট্যাংক রয়েছে, শুধু যখন জ্বালানির প্রয়োজন। অর্থাৎ ক্ষুধা লাগবে তখনি খাবেন। বিগত দিনের অভ্যাসের কারণে হয়তো শুরুর দিকে আপনার ৩, ৪ বা ৫ বার ক্ষুধা লাগবে, সেই ক্ষুধা জয়ের জন্য কী কী করণীয় তা কিছুক্ষণ পর বলছি। তার পূর্বে বলে নিই, আপনার প্রতিদিনের খাবারের প্লেটে কী কী থাকবে? ভিনেগারের পানীয়, শাক-সবজি+ডিম/মাছ/মাংস+সালাদ+বাদাম>চিয়া সীডের পানীয়>ডাবের পানি। খাবার খাওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তেই ভিনেগারের পানীয় পান করবেন। এর পরপরই খাবার খাওয়া শুরু করবেন। প্রতিদিনের খাবারেই পর্যাপ্ত পরিমাণ সবুজ রঙিন শাক-সবজি অবশ্যই এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েল দিয়ে রান্না করবেন। সবজি রান্নার ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, কোনোভাবেই যেন বেশি রান্না করা না হয়। যেমন, যেসব শাক-সবজি সহজেই সিদ্ধ হয়ে যায়, সেগুলো সরাসরি এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েলে দিয়ে ৫-৭ মিনিট মাঝারি আছে রান্না করবেন আর যেসব সবজি সিদ্ধ হতে সময় লাগে, সেগুলো ফুটন্ত গরম পানিতে ৪-৫ মিনিট সিদ্ধ করে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েলে ৫ মিনিট রান্না করে নিবেন। শাক-সবজি রান্নায় আপনার পছন্দ অনুযায়ী পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ ও অন্য যেকোনো মশলা অল্প পরিমাণে দিতে পারবেন। আপনি যদি সবজি অতিরিক্ত সিদ্ধ করে রান্না করেন তাহলে এর প্রায় সব পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়, অন্যদিকে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েল দিয়ে রান্না করলে এর পুষ্টিগুণ ঠিক থাকে এবং শরীরে তা শোষণ ক্ষমতা বাড়ে। 
প্রোটিন হিসেবে যদি শুধু ডিম খান, তবে অবশ্যই কুসুমসহ দুইটা/তিনটা ডিম খাটি ঘি দিয়ে অল্প আঁচে অল্প সময়ে নরম করে ভেঁজে খাবেন। একইভাবে শুধু মাছ খেলে দুই/তিন টুকরো চর্বিযুক্ত মাছ খাঁটি সরিষার তেল নিয়ে রান্না করে খাবেন। খেয়াল রাখবেন, ডিম ও মাছ যেন বেশি ভাজা ভাজা না হয়, বেশি ভাজলে ডিমের কুসুমের ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও সি নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে মাছের ওমেগা ৩ ও ৬ সহ মাছের চামড়ার ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়। যদি আপনি মাছ ডিম দুটোই খেতে চান, তাহলে দুইটা ডিম ও একটা মাছ অথবা একটা ডিম ও দুইটা মাছ খেতে পারেন। এসবের সঙ্গে সালাদ ও কিছু বাদাম খাবেন। খাবার ভালো করে চিবিয়ে চিবিয়ে সময় নিয়ে খাবেন। খাওয়া শেষ হলে এক ঘণ্টা পর পানি/চিয়া সীডের পানীয় খাবেন।

আপনার খাবারের অভ্যাস কেমন হবে? আমরা যেসব খাদ্যাভ্যাসের কথা বলি তার কয়েকটি শিরোনাম রয়েছে এগুলো হলো- (ক) ফ্যাট এডাপ্ট্যাশন, (খ) ফুল/ড্রাই ফাস্টিং, (গ) ওয়াটার ফাস্টিং, (ঘ) ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং, (ঙ) ওয়ান মিল এ ডে এবং ফ্যাট এডাপ্ট্যাশন। খাবারের নানান বিধিনিষেধ জেনে বুঝে যারা প্রকৃতই জেকে লাইফস্টাইল মেনে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদের সর্বপ্রথম ধাপ হলো ফ্যাট এডাপ্ট্যাশন পর্ব। আগেও বলেছি, গতানুগতিক অভ্যাসে আমরা ৩-৪ বেলা খেয়ে অভ্যস্ত, তাই সেভাবেই আমাদের ক্ষুধা লাগবে সেটাই স্বাভাবিক। সেই ক্ষুধাকে জয় করতে এবং আমাদের শরীরের মেটাবলিজমকে পরিবর্তন করতে ফ্যাট এডাপ্ট্যাশন পর্বটি অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাবারের অভ্যাসের পাশাপাশি আমাদের শরীর শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট বা সুগার মেটাবলিজমে শক্তি তৈরি করে অভ্যস্ত। কিন্তু চর্বি বা ফ্যাট থেকেও আমরা শক্তি তৈরি করে চলতে পারি। সুতরাং শরীরে জমে থাকা চর্বি এক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত এই বোঝা থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি। শরীরে কার্বস বা সুগার খুবই কম পরিমাণে দিয়ে (যতোটুকু কার্বস নিব তা শুধু শাক-সবজি থেকে নিব) স্বাস্থ্যকর চর্বির পারিমাণ বাড়িয়ে শরীরের ভিতরে শুধু চর্বি থেকে শক্তি উৎপাদনের নির্দেশনা তৈরি করারই হলো ফ্যাট এডাপ্ট্যাশন করা। এই প্রক্রিয়াটি চালু হতে পাঁচ থেকে সাত দিন সময় লাগে। তাই প্রথম সাতদিনকে আমরা ফ্যাট এডাপ্ট্যাশন পর্ব বলছি। এই সময় আপনার যখনি পুরোপুরি ক্ষুধা লাগবে আপনি তখনি আমাদের উল্লেখিত খাবারগুলো খাবেন, ঠিক যতোটুকু খেলে পুরোপুরি পেট ভরবে ততোটুকুই খাবেন। অর্থাৎ ২/৩/৪ যতোবার পুরোপুরি ক্ষুধা লাগবে ততোবারই খাবেন। 
তবে মনে রাখবেন, বিকেলে হালকা নাস্তার মতো করে অল্প অল্প খাবেন না। দুপুরে বা রাতের খাবারের মতো করে সম্পূর্ণ খাবার খাবেন। প্রথম তিন দিনের পর থেকে আস্তে আস্তে ক্ষুধা কমতে থাকবে, চেষ্টা করলেও যখন ৩-৪ বেলা খেতে পারবেন না বুঝবেন আপনার ফ্যাট এডাপ্ট্যাশনের প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে চালু হয়েছে। আর যদি কারো ক্ষুধা না কমে থাকে, তাহলে সে আরও এক সপ্তাহ এই পর্বটি ধৈর্য্যসহকারে চালিয়ে যাবেন। তবে কোনো অবস্থাতেই তালিকার বাইরে কোনো খাবার খাবেন না। এই সময় সকালের খাবার ধীরে ধীরে দেরি করে খাবেন, আর রাতের খাবার তাড়াতাড়ি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। 

ফুল/ড্রাই ফাস্টিং : ইতোমধ্যেই যেহেতু আপনার ক্ষুধা কমে এসেছে, তাই দ্বিতীয় সপ্তাহে আমরা পরামর্শ দিই টানা ৭ দিন রোজা রাখতে। যেহেতু সবেমাত্র আপনার শরীর চর্বি গলিয়ে শক্তি তৈরি করতে প্রস্তুত হয়েছে, তাই এই সুযোগটা পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে টানা সাতদিন রোজা রাখলে শরীরে জমা থাকা অতিরিক্ত চর্বি গলিয়ে নিজেকে কিছুটা হালকা করে নিতে পারবেন অনায়াসেই। এই সময় শুধু একবেলাই খেতে পরামর্শ দিই। সন্ধ্যায় ইফতারির সময় খাবারের নির্দেশনা অনুযায়ী পেটভরে খেতে হবে। রাত আটটার মধ্যে খাওয়ার পর্ব শেষ করে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত শুধু পানি খাবেন। সেহেরীতে সামান্য পিংক সল্ট মিশানো এক/দুই গ্লাস পানি খাবেন। যদি শুধু পানি খেয়ে সারাদিন রোজা রাখতে আপনার খুব কষ্ট হয়, তাহলে সেহেরীতে দুইটা ডিম খাঁটি ঘি বা কোল্ড প্রেসড নারিকেল তেল দিয়ে ভেঁজে খাবেন। বিশেষভাবে উল্লেখ্য সেহেরিতে শুধু পানি খেয়ে রোজা রাখতে পারলে আপনি দীর্ঘক্ষণ অটোফেজির সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

ওয়াটার ফাস্টিং : সারাদিনে শুধু একবেলা খেয়ে পরবর্তি ২৩ ঘণ্টা শুধু পানি, ভিনেগারের পানি, সামান্য পিংক সল্ট দিয়ে পানি, শুধু গ্রীন-টি অথবা অর্গানিক কফি বিন দিয়ে তৈরি করা ব্ল্যাক কফি পান করে পরের দিন পুনরায় খাবার খাওয়াই হলো ওয়াটার ফাস্টিং। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১ ঘণ্টা খাবার খাওয়া আর বাকি ২৩ ঘণ্টা খাদ্য উপাদান নেই এমন পানীয় পান করা। এক্ষেত্রে অনেকেই না বুঝে বুলেট কফি খেয়ে থাকেন, যা মোটেও উচিত নয়। ওয়াটার ফাস্টিংয়ের মাধ্যমেও আপনি অটোফেজির সুবিধা ভোগ করতে পারেন।

ইন্টারমিটেন্টফাস্টিং: পুরো দিনে ৪-৬ ঘণ্টা খাবারের জন্য বরাদ্দ করে বাকি সময় ওয়াটার ফাস্টিংয়ের মতো করে শুধু পানি, ভিনেগারের পানি, সামান্য পিংক সল্ট দিয়ে পানি, শুধু গ্রীন-টি অথবা অর্গানিক কফি বিন দিয়ে তৈরি করা ব্ল্যাক কফি পান করার অভ্যাসকে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংবলে। এ ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম সময় অটোফেজি হয়। যারা মাঝে মাঝে বেশি পরিশ্রমের ফলে দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকতে কষ্ট অনুভব করেন, তারা সেই বেশি পরিশ্রমের দিনগুলোতে এই অভ্যাসটি অনুসরণ করতে পারেন। 

ওয়ান মিল এ ডে : সারাদিনে একবেলা ভরপেট খাবার খাওয়ার অভ্যাসই ওয়ান মিল এ ডে । এটি ফুল ফাস্টিং ও ওয়াটার ফাস্টিংয়ের মতোই। এক্ষেত্রে ফুল ফাস্টিং করে একবেলা খাবার খেলে বেশি ভালোভাবে আপনার শরীরে অটোফেজি হবে। 

না খাওয়ার অভ্যাস (অটোফেজি) : খাবারের বিষয়টির পরপরই গুরুত্ব দিতে হবে না খেয়ে থাকার বিষয়টিতে। অর্থাৎ উপবাস বা অটোফেজি প্রক্রিয়া। উপবাস সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছুই নেই, এটা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত, কিন্তু অটোফেজি শব্দটি হয়তো অনেকের অজানা। অটোফেজি শব্দটির উৎপত্তি হয় আজ থেকে প্রায় ৫৪ বছর আগে ১৯৬৩ সালে, তবে বিশ্ববাসী এটা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে ২০১৬ সালে। অটোফেজি প্রক্রিয়ার ক্রিয়া-কৌশল আবিষ্কার করার জন্য ২০১৬ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জাপানের বিজ্ঞানী ইওশিনোরি ওসুমি। 

অটোফেজি বা আত্মভক্ষণ কী? এটি মূলত গ্রিক শব্দ, যার বাংলা অর্থ হলোÑ‘আত্মভক্ষণ বা নিজেকে খেয়ে ফেলা’! বিষয়টি শুনতে ভয়ানক হলেও এটা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কেননা এটা শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহকে পরিষ্কার করার একটা প্রক্রিয়া, যা সম্পন্ন হয় কোষীয় পর্যায়ে (জীবদেহের গঠন ও কাজের একক হচ্ছে কোষ)। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই আত্মভক্ষণ কোষের কোনো ক্ষতি করে না। বরং কোষকে সজীব রাখতে সাহায্য করে। যদি এই আত্মভক্ষণ প্রক্রিয়াতে কোনো সমস্যা হয়, তবে শরীরে নানা রকম রোগের উৎপত্তি হতে পারে।

অটোফেজি কীভাবে করতে হয় এবং ফলাফলে আপনি কী পাবেন? আমাদের শরীরের বিভিন্ন কাজ করার জন্য প্রতিনিয়ত প্রোটিন তৈরি/সংশ্লেষ হয় এবং এই তৈরি হওয়া প্রোটিনের কাজটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য তার (প্রোটিনের) গঠনটি অ্যামিনোএসিড দ্বারা ত্রিমাত্রিক হতে হয়। যদি ত্রিমাত্রিক গঠন না হয় তবে প্রোটিনটি শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে এবং নানা রোগের সৃষ্টি করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০ শতাংশ প্রোটিন সঠিকভাবে সংশ্লেষ হতে পারে না। ফলে এদের ধ্বংস করা, শরীর থেকে বের করে দেওয়া কিংবা অন্য উপায়ে কাজে লাগানো জরুরি। কেননা শরীরে এরা থাকলে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হবে। চিন্তা করার কিছু নেই, আপনার দেহের অটোফেজি প্রক্রিয়া এ ক্ষতিকারক প্রোটিনকে ধ্বংস করে বা কাজে লাগায়। অটোফেজি প্রক্রিয়াটি আমাদের শরীরকে কার্যকরী করে রাখে, দুর্বল অঙ্গাণু থেকে মুক্তি দেয় এবং ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে। শরীরে এ প্রক্রিয়া অনুপস্থিত থাকলে ক্যান্সার কিংবা নানাবিধ স্নায়ুবিক রোগ হতে পারে। এককথায় বলা যায়, অটোফেজি রোগ-প্রতিরোধ করে এবং আমাদের তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে। এখন প্রশ্ন হলো, আপনি অটোফেজি কীভাবে করবেন, তাই তো? দীর্ঘক্ষণ উপবাসে থাকা বা রোজা রাখা, পরিমাণে কম কিংবা কম ক্যালরির খাদ্য খাওয়া, শারীরিক পরিশ্রম করা ও নিয়মিত সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত ঘুমানোর মাধ্যমে অটোফেজি প্রক্রিয়া চালু হয়। বুঝতেই পারছেন, এ প্রক্রিয়া শরীরে চালু করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো রোজা বা উপবাস। যখন শরীরে খাবারের সংকট তৈরি হয় তখন অটোফেজি প্রক্রিয়াটি চালু হয়। আপনার বাসায় অনেক ভালো টাটকা খাবার থাকতে আপনি নিশ্চয়ই পুরাতন খাবার খাবেন না! তেমনি আপনি যখন রোজা রাখবেন, শরীরে খাদ্য সংকট ঘটাবেনÑ তখন শরীরে জমে থাকা সেসব অপ্রয়োজনীয় ও অপরিপক্ক কোষগুলোকে শরীর খেয়ে নিবে। এভাবেই আত্মভক্ষণের মাধ্যমে আপনি রোগ থেকে বাঁচবেন, আর তারুণ্য ধরে রাখতে পারবেন।

ঘুমের অভ্যাস : ইতোমধ্যেই বলেছি, আপনার শরীরে অটোফেজি চালু করতে হলে নিয়মিত সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত ঘুমানো এবং শারীরিক পরিশ্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমানোর সঠিক সময় শুরু হয় রাত ১০ টার মধ্যেই। কেননা রাত ১০টা থেকে ২টার মধ্যে মেলাটনিন হরমোনের মাত্রা বেশি থাকে। সুতরাং এই সময় ঘুমে থাকা আমাদের জন্য খুবই জরুরি। সঠিক সময়ে আমরা যদি ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে পারি তবেই সারা দিনের ক্লান্তি দূর হয়ে শরীর আবার সতেজ হয়ে উঠবে। যাদের অনিদ্রা রোগ আছে তারাসহ সবাই ভালো ঘুমের জন্য যা যা করতে পারেন  তাহলো- আপনার বিছানা আর শোবার ঘর যেন আরামদায়ক হয়। বেশি গরম বা বেশি ঠাণ্ডা যেন না হয় এবং সেখানে যেন বেশি আওয়াজ না হয়। আপনার বিছানায় যেন আপনি ঠিকভাবে শুতে পারেন। বেশি শক্ত হলে আপনার কোমর বা কাঁধে ব্যথা হবে, আর বেশি নরম হলে শরীর যথেষ্ট সাপোর্ট পাবে না। এক্সারসাইজ করুন। নিয়মিত হাঁটতে বা সাঁতার কাটতে চেষ্টা করুন। এক্সারসাইজ করার সবচেয়ে ভালো সময় সকাল বেলা। রাত ৮টা বা ৯টার পর সব ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমন মোবাইল, ল্যাপটপ, টিভি ইত্যাদি বন্ধ রাখুন। প্রয়োজনে রাত ৯টার দিকে সহনীয় মাত্রার গরম পানিতে গোসল করতে পারেন, তবে ঘুমানোর আগে অবশ্যই চুল শুকিয়ে নিবেন। 

ভালো ঘুমের জন্য যা যা করবেন না, তাহলো : চা বা কফি পান করার পর শরীরে অনেকক্ষণ ক্যাফেইনের প্রভাব থাকে। দুপুরের পর আর চা বা কফি পান করবেন না। কোনো প্রকার এলকোহল পান করবেন না। বেশি রাতে ভারী খাবার খাবেন না। নৈশভোজ সন্ধ্যার দিকে সারতে হবে। আপনার রাতে ঘুম না হলে পরদিন দিনের বেলা ঘুমাবেন না। তাহলে পুনরায় সেদিন রাতে ঘুম আসতে অসুবিধা হবে না। 

দৈনন্দিন ব্যায়ামের অভ্যাস : জেকে লাইফস্টাইলের অন্যতম আরেকটি শর্ত হলো, দৈনন্দিন ব্যায়ামের অভ্যাস। প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন সকালের নরম রোদে অন্তত ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা হাঁটার অভ্যাস করুন। যদি একসঙ্গে ১ ঘণ্টা সময়ের অভাব থাকে অথবা হাঁটতে কষ্ট হয় তাহলে সকাল-বিকেল ৩০ মিনিট করে মোট ১ ঘণ্টা হাঁটুন। এছাড়া বাসায় বসে নানান রকম সহজ ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম ও ইয়োগা করবেন। নিয়িমিত ব্যায়ামে ধীরে ধীরে আপনার পেশী শক্তিশালী হবে, আর রক্ত সঞ্চালনসহ নার্ভের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

মানসিক প্রশান্তির চর্চা : আমরা সবাই জানি শরীর ও মন একটি আরেকটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই শরীরের যত্নের সঙ্গে সঙ্গে মনের যত্ন নিতে হবে। মানসিক প্রশান্তির চর্চা করতে হলে উপরে বর্ণিত প্রতিটি শর্ত গুরুত্বসহকারে মানতে হবে, পাশাপাশি আরও কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এগুলো হলো, নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম। অনেক পদ্ধতি অনুসরণ করে শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করা যায়, তবে আমরা উইম হফ পদ্ধতিতে এটি করার কথা বলছি। কারণ এই পদ্ধতিটি শরীর ও মনকে প্রশান্তি দেওয়ার পাশাপাশি মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। জেকে (জাহাঙ্গীর কবির) লাইফস্টাইলের সঙ্গে সমন্বিত করে আমরা এই পদ্ধতিতে অধিক উপকার পেয়েছি। 

শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়ামের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ও প্রস্তুতি : খালি পেটে এটি করতে হবে। নিরাপদ স্থানে বসে বা শুয়ে ব্যায়ামটি করবেন। নিজের শরীরের অবস্থা বুঝে করবেন, শরীরে কোনো রকম চাপ সৃষ্টি করবেন না।

কীভাবে করবেন? বসে বা শুয়ে যেভাবে আপনার বেশি রিলাক্স বা শিথিল লাগে সেভাবে অবস্থান নিবেন। সাধারণত শুয়ে বেশি শিথিল লাগে, তাই শুয়ে ব্যায়ামটি শুরু করতে পারেন। প্রথমে পেট ফুলিয়ে জোরে নিঃশ্বাস নিন এবং সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিন। নিঃশ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার মাঝে কোনো বিরতি নিবেন না। এভাবে ত্রিশবার নিঃশ্বাস নিবেন ও ছেড়ে দিবেন। ত্রিশতম বার নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস বন্ধ করে রাখুন যতোক্ষণ সহজভাবে পারেন। অর্থাৎ ত্রিশ, চল্লিশ, পঞ্চাশ সেকেন্ড বা ১ মিনিট কোনো নিঃশ্বাস নিবেন না বা ছাড়বেন না। অবশ্যই মনে রাখবেন শরীরের কোনোভাবেই অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি না করে যতোক্ষণ সহজ লাগে ততোক্ষণ এভাবে নিঃশ্বাস বন্ধ রাখবেন। যখন মনে হবে আর বন্ধ করে রাখা সম্ভব না, তখনই আরেকবার জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে আটকে রাখবেন ১০-১৫ সেকেন্ড। এরপর পুরোপুরি ছেড়ে দিবেন। এভাবে করে পরপর মোট তিনবারে নিঃশ্বাসের ব্যায়ামটি প্রতিদিন নিয়মিত করতে হবে।
 
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের গুরুত্ব : নিঃশ্বাসের ব্যায়ামটি নিয়মিত করলে আমাদের রক্তের পিএইচ লেভেল বৃদ্ধি করে। ফলে রক্ত বিশুদ্ধ হয়। শরীরের অভ্যন্তরে রক্তনালী, ধমনী, স্নায়ুর কার্যক্ষমতা বাড়ায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী ব্যাক্টেরিয়াগুলোকে সচল করে ফলে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অভ্যন্তরীণ অঙ্গ যেমন- হার্ট, ফুসফুস, কিডনি, লিভার এবং ব্রেইনের কিছু অংশের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে আমাদের প্রাণবন্ত করে রাখে। এই ব্যায়ামটি আমাদের শরীর ও মনের উৎকর্ষতা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। 

ঠাণ্ডা ও গরম পানির থেরাপি নিতে হবে : মাঝে মাঝে নিজেই নিজেকে বাজে অভ্যাস পরিহারের চ্যালেঞ্জ দিয়ে একইসঙ্গে কিছু ভালো অভ্যাসের চর্চা শুরু করতে পারেন। ইতিবাচক বা পজেটিভ চিন্তার অভ্যাস গড়তে হবে। সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

হিট এক্সারসাইজ: ব্যায়ামটি করতে হয় সকাল বেলা। সবচেয়ে ভালো সময় সকাল ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে। যখন ন্যাচারালই শরীরে স্টোরেজটা বেশি থাকে। ফিট এক্সারসাইজ করার সময় শরীরে স্টোরেজ রিলিজ হয়। আর এই স্টোরেজ যে শরীরের জন্য খারাপ তা নয়, এটা শরীরের জন্য ভালো। এই স্টোরেজ কী পরিমাণ রিলিজ হচ্ছে? কতোক্ষণ রিলিজ হচ্ছে? কী পরিমাণ শরীরে থাকছে, সেটা জানা জরুরি। যেহেতু ন্যাচারালই সকালে শরীরে স্টোরেজ বেশি থাকে, তাই ব্যায়ামটা সকালে করলে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে। হিট এক্সারসাইজ করলে অনেকগুলো সুবিধা আছে। একটি হলো- যেটি মাসেলকে প্রিজার্ভ করে, কিন্তু ফ্যাট বার্ন করে। 

শরীরে খুবই দরকারি গ্রোথ হরমোন। যেটা শিশুদের প্রচুর থাকে, যে কারণে শিশুরা ক্লান্ত হয় না। তারা প্রচুর দুষ্টুমি করে, কিন্তু ক্লান্ত হয় না। আর বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এটা ধীরে ধীরে কমে যায়। এই কারণে এটাকে যদি আমরা বুস্টআপ করি, তাহলে এটা আমাদের চর্বি গলাতে সহায়তা করে। তবে মাসেলকে প্রিজার্ভ করে। হিট এক্সারসাইজ করলে কোয়ালিটি স্লিপ অনেক ভালো হয়। খালি পেটে ঘুমাতে যান। মানে ৭-৮টার মধ্যে ঘুমাতে যান। এরপর সকালে যখন খালি পেটে হিট এক্সারসাইজ করতে যান, তাহলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রাটা কম থাকবে। আর শরীরে ইনসুলিন কম থাকলে ফ্যাট কমাতে ভালো হয়। তখন ইনসুলিনের সাহায্য ছাড়াই গ্লোকোজ রক্ত থেকে সরাসরি কোষে ঢুকতে পারে, তবে লিভারের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন।

কীভাবে করবেন? প্রথমে ওয়ার্মআপ এক্সারসাইজ করুন। কারণ এটি অনেক হাই ইনটেনসিটিতে করতে হয়। এটি রানিং মেশিনে এবং সাইকেলে করতে পারেন। অথবা দৌড়ানো যেতে পারে। তবে দৌড়ানোর আগে জগিং করে নিতে হবে। শরীরটাকে ভালো করে ওয়ার্মআপ করে নিতে হবে। এরপর যতো জোরে পারেন দৌড় দেবেন। মাত্র ২০ সেকেন্ডে দৌড়ানোর পর ১০ সেকেন্ড রেস্ট নিতে হবে। আবার ২০ সেকেন্ডে দৌড় দেওয়ার পর ১০ সেকেন্ড রেস্ট নিতে হবে। এভাবে ৩ থেকে ৫ মিনিট ব্যয়াম করতে হবে। তবে সময় কম বেশি হতে পারে। এভাবে শরীরে গ্রোথ হরমোন বেড়ে যাবে। কিন্তু এই গ্রোথ হরমোন শরীরে ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় থাকে না। পেটের চর্বি, প্রেসার, রক্তনালীর চর্বি এবং ডায়াবেটিক একইভাবে কমানো সম্ভব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়