শিরোনাম
◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক

প্রকাশিত : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ০৮:১৯ রাত
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ০৩:৫৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর উন্নয়নে শর্ত, আর্থিক স্বচ্ছতা চায় আইএমএফ

আইএমএফ

এম মাছুম বিল্লাহ: সামস্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর উন্নয়নে কিছু শর্ত দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। গত ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের বিপরীতে আইএমএফ মোটাদাগে এ ধরনের ছয়টি শর্ত দিয়েছে। বিশেষ করে বহুজাতিক সংস্থাটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা চেয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ৫০টি বৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সার্বিক তথ্য প্রকাশ করতে বলেছে তারা। 

বাংলাদেশ ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি হিসেবে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার পেয়েছে। বাকি ছয় কিস্তি পেতে আলাদা ছয়টি পর্যালোচনা (রিভিউ) পরীক্ষায় পাস করতে হবে। এর মধ্যে তৃতীয় ও পঞ্চম পর্যালোচনায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ রয়েছে।

তৃতীয় পর্যালোচনায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর প্রধান ঝুঁকি, এদের জন্য সরকারের গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তা, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশসহ আর্থিক ঝুঁকি বিবরণী প্রকাশ করার কথা বলা হয়েছে। অন্তত চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট থেকে এসব নিয়ে তথ্য প্রকাশ করতে হবে। এ ছাড়া ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে পঞ্চম পর্যালোচনার আগে দেশের ৫০টি বৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিবরণ তুলে ধরতে বলেছে আইএমএফ।

আইএমএফের ঋণ অনুমোদনের আগেই গত ২৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে সংস্থাটিকে যৌথভাবে প্রতিশ্রুতি দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। প্রতিশ্রুতিতে বলা হয়, অধিকতর স্বচ্ছতা আনতে ১০০টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার আর্থিক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। শুরুর দিকে বাছাইকৃত সংস্থাগুলোর ঝুঁকি নিরসনে কাজ করা হবে। আইএমএফের সময়বদ্ধ পরিকল্পনা অনুযায়ী ৫০টি বৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার প্রতিবেদনসহ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর সুশাসন পরিকাঠামো তৈরি করা হবে।

স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দেশে ৪৮টি অ–আর্থিক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রয়েছে। মূলত এগুলো নিয়েই কথা বলেছে আইএমএফ। এর মধ্যে বিটিএমসিসহ শিল্প খাতের ৬টি; পেট্রোবাংলাসহ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানিসম্পদ খাতের ৬টি; শিপিং করপোরেশনসহ পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের ৭টি; টিসিবিসহ বাণিজ্য খাতের ৩টি; মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনসহ কৃষি ও মৎস্য খাতের ২টি; রাজউকসহ নির্মাণ খাতের ৬টি এবং বিএসটিআইসহ সেবা খাতের ১৮টি সংস্থা রয়েছে।

আইএমএফ যেসব সংস্থার তথ্য প্রকাশ নিয়ে কথা বলেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনও (বিপিসি) রয়েছে। বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ গত শনিবার বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর যে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করি, তাতে সংস্থার সবকিছুরই প্রতিফলন থাকে। আর কি প্রকাশ করতে হবে, তা আমার বোধগম্য নয়।’

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর সার্বিক দেখভাল করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল। সেলটির কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, আইএমএফের স্টাফ মিশন আসার আগে থেকেই তাঁরা এ নিয়ে কাজ করছেন। অনেক সংস্থা নিজস্ব পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলে। এরপরও তাদের বুঝিয়ে রাজি করানো হচ্ছে। আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে সংস্থাগুলোর অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন শক্তিশালী হবে।

সরকারের বার্ষিক প্রতিবেদন অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২ অনুযায়ী গত বছরের মে পর্যন্ত সার্বিকভাবে ৪৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা মুনাফা করেছে ২ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) মুনাফাই হলো ২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। একই সময়ে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)।

গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে সংস্থাগুলোর নিট লোকসান ছিল ২ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। সমীক্ষা অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো থেকে সরকারি কোষাগারে লভ্যাংশ জমার পরিমাণও কমছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সংস্থাগুলো সরকারি কোষাগারে জমা দেয় ১ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা। এর আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরে তারা জমা হয়েছিল ১ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, সংস্থাগুলোর ব্যাপারে তাঁদের মনিটরিং বা তদারকির যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এর ওপর দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ, জবাবদিহি ও সুশাসনের অভাব তো আছেই। এসব সংস্থার জন্য সরকারকে প্রতিবছর ভর্তুকি বাবদ বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে। এসব সংস্থার কাছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণও রয়েছে বিপুল অঙ্কের।

অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য বলছে, সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৬টি রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে ১ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। সবচেয়ে বেশি ৫২২ কোটি টাকা ভর্তুকি নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ৪৮০ কোটি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ১৯৭ কোটি টাকা ভর্তুকি পেয়েছে।

অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩০টি রাষ্ট্রীয় সংস্থার কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পাওনা (ঋণ) দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা দেনা বিউবো। এ ছাড়া বিএডিসি ৮ হাজার ৩৫৭ কোটি, বিসিআইসি আট হাজার কোটি, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন ৭ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা দেনা।

জানতে চাইলে সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির জায়গা থেকে তথ্য প্রকাশ সরকারের জন্যই ভালো। সে বিবেচনায় আইএমএফের চাওয়ার সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ নেই। মুশকিল হচ্ছে, সংস্থাগুলো নিজেদের মতো চলতে চায়। কিন্তু আর্থিক শৃঙ্খলা তো থাকতেই হবে। আমি যখন অর্থ বিভাগের সচিবের দায়িত্বে ছিলাম, সব প্রতিষ্ঠান নিয়ে আলাদা পুস্তিকা বের করা হতো। জানি না সেই ধারাবাহিকতা এখনো আছে কি না। না থাকলে আবার চালু করা উচিত।

এমএমবি/এসএ 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়