শিরোনাম
◈ আবদুল্লাহ জাহাজে খাবার থাকলেও সংকট বিশুদ্ধ পানির ◈ কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, বেড়েছে আলুর ◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র

প্রকাশিত : ২৭ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৯:০৯ রাত
আপডেট : ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৭:১০ বিকাল

প্রতিবেদক : এম. মোশাররফ হোসাইন

ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পাকিস্তান

পাকিস্তান

এম. মোশারররফ হোসাইন: নজিরবিহীন সংকটে টালমাটাল পাকিস্তানের অর্থনীতি। ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে রীতিমত হিমসিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে আমদানি প্রায়ই বন্ধ হয়ে পড়েছে। জ্বালানি সংকটে বন্ধ অধিকাংশ কল-কারখানা। গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বেশিরভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ থাকার ফলে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে গোটা দেশ। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে ভয়াবহ বন্যায় বিপন্ন দেশটির জনগণ এখন নজিরবিহীন দুরবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৪.৩ বিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। এই রিজার্ভ দিয়ে তিন সপ্তাহের মতো আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। বৈদেশিক লেনদেনে বিশাল ব্যবধান তৈরি হয়েছে। রপ্তানি এবং বিভিন্ন খাত থেকে যে আয় হচ্ছে, তা দিয়ে ব্যয় সংকুলান সম্ভব হচ্ছে না। এতে জ্বালানি তেল কেনা পাকিস্তানের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ফাইন্যান্সিয়াল পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক নেতাদের অযোগ্যতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সামরিক নেতৃত্বের অতিমাত্রায় সম্পৃক্ততা এই অবস্থার সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তান সম্প্রতি আরব আমিরাতের দুটি ব্যাংকের ১০০ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধ করেছে। এর পরই বৈদেশিক মুদ্রার রিজাভেৃ টান পড়েছে।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে এ মাসে মূল্যস্ম্ফীতি ২৬.৬ শতাংশ হতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জামিল আহমেদ বলেন, মুদ্রাস্ম্ফীতির চাপ অব্যাহত রয়েছে। এ বছর সরকার ২ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে আশা করছে, তা চাপের মুখে পড়তে পারে।

খাদ্যসামগ্রী, কাঁচামাল এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের বন্দরে আটকা রয়েছে প্রায় ৬০০০ কনটেইনার। ডলার সংকটে সেগুলো খালাস করা যাচ্ছে না। ফলে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম কমার পরও দেশটিতে মুরগি, ডিম ও আটার দাম বেড়েছে। ডলার সংকটে এলসি খুলতে পারছে না ব্যাংকগুলো। ফলে বন্ধ হয়ে পড়েছে আমদানি।

বিবিসি বলছে, পাকিস্তানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যে কটি দাতা সংস্থা এগিয়ে এসেছে তার মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাংক, ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক ও সৌদি আরব। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ফ্রান্সও এ সহায়তায় অংশ নেবে। সম্প্রতি জেনেভায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে পাকিস্তানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো উন্নয়নে ৯০০ কোটি ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। এটা আসা শুরু হলে হয়তো কিছুটা উপকৃত হবে সংকটাপন্ন দেশটি।

এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পাকিস্তানে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি কিনতে সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে দেশটি। ২০১৮ সালে জ্বালানি কেনায় ঋণ ছিল প্রায় ৭২০ কোটি ডলার। ২০২১ সালে এই ঋণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৫৮০ কোটি ডলারে। আগামী তিন বছরে চক্রবৃদ্ধি হারে তা বেড়ে ২ হাজার ৬৩০ কোটি ডলারে গিয়ে ঠেকবে।

নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে দেশটিতে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে না পারলে ঘি ও ভোজ্যতেলের মতো পণ্যের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেবে। জনগণ দুধ, চিনি, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছে না। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে টেক্সটাইল শিল্পসহ কলকারখানা। চাকরি হারিয়েছেন হাজারো মানুষ।

করাচির মুদি দোকানদার জাভেদ আকতার জিও টিভিকে বলেন, বিদ্যুৎ নেই, গ্যাস নেই, চাকরি নেই। ময়দার জন্য ট্রাকের সামনে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করে মানুষ। মূল্যম্ফীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মনে হচ্ছে, আমরা প্রস্তরযুগে বাস করছি।

দ্য ডনের বিশ্নেষক এএএইচ সুমরোর মতে, সংকট থেকে উত্তরণে বহুমুখী অর্থনৈতিক সমাধান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সংকল্প প্রয়োজন। পাকিস্তানে বারবার প্রয়োজনীয় সংস্কার বিলম্বিত হয়েছে। নীতিনির্ধারক, রাজনীতিবিদ এবং আমলারা তাঁদের স্বার্থ পূরণ করছেন। জনগণকে নিয়ে তাঁরা খেলছেন।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক উপদেষ্টা আবিদ হাসান বলেন, এখন প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী, তা স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে তারা বলছে, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিশ্চল হয়ে পড়ছে, যা শ্রীলঙ্কার মতো হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে আইএমএফের কাছ থেকে ৭০০ কোটি ডলার অর্থনৈতিক সহায়তা প্যাকেজ নিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আইএমএফ শর্ত দিয়েছে, পেট্রোলিয়াম ও বিদ্যুতের ওপর ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে হবে। কিন্তু এই শর্ত মেনে নেওয়া পাকিস্তানের জন্য কঠিন হবে।

পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাঁচাতে দেশটি ব্যাপক হারে আমদানি কমিয়ে দিয়েছে।

এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের রুপির রেকর্ড দরপতন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি মুদ্রার দর দাঁড়িয়েছে ২৫৫.৪৩ রুপিতে। পাকিস্তানি মুদ্রার দামে ৯ বছরের মধ্যে এটি সর্বনিম্ন পতন।

এর আগে গত বুধবার পাকিস্তান সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশটির মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানিগুলো ডলার থেকে রুপিতে বিনিময় হারের ওপরে সীমা তুলে নেয়। খোলা বাজারে পাকিস্তানি মুদ্রার দাম কমাতেই পরিকল্পনামাফিক এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

এদিকে পাকিস্তানি মুদ্রার দামের ব্যাপক পতনের কারণে শুধু আর্থিক সংকট নয়, খাদ্যদ্রব্যেরও ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। পাকিস্তানের বেশ কিছু অংশে এক প্যাকেট আটা ৩ হাজার রুপিতে পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে।

খরচ কমাতে মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে পাকিস্তান। দেশটিতে নতুন যে প্রস্তাব আনা হয়েছে তাতে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের বেতন ১৫ শতাংশ এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ১০ শতাংশ কমানোর কথা বলা হয়েছে।

এমএইচ/এসবি২

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়