ভারতের আসাম রাজ্যে পুলিশের গুলিতে এক মুসলিম যুবকের নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে ফের আলোচনায় এসেছে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বিতর্কিত মুসলিমবিরোধী অবস্থান। বৃহস্পতিবার গওয়ালপাড়া জেলার পাইকান রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকায় সরকারি উচ্ছেদ অভিযানে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নিহতের পাশাপাশি আরও একজন গুরুতর আহত হয়েছেন এবং অসংখ্য মানুষ আহত অবস্থায় গুয়াহাটি মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর অধিকাংশই বাঙালি ভাষাভাষী মুসলিম।
সরকারি ভাষ্যে দাবি করা হয়েছে, ১৪০ হেক্টর বনভূমি দখলমুক্ত করতেই এই অভিযান চালানো হয়। কিন্তু এই অভিযানে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১ হাজার ৮০টি পরিবার। তাদের অনেকেই বলছেন, তারা বহু প্রজন্ম ধরে ওই এলাকায় বসবাস করছেন। বন সংরক্ষিত ঘোষণার আগেই তাদের বসতি ছিল।
এই ঘটনার ঠিক আগের দিন, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছিলেন, উচ্ছেদ চলবে, বন রক্ষা ও ভূমি অধিকারের জন্য সংগ্রাম চলবে, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চলবে।
এর আগেও জুন মাসে একইভাবে গওয়ালপাড়ার হাসিলাবিল এলাকায় ৬৯০টি মুসলিম পরিবারের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
সম্প্রতি বিজেপির এই নেতা একের পর এক মুসলিমবিরোধী মন্তব্য করে রাজ্যজুড়ে আতঙ্ক ও বিদ্বেষের পরিবেশ তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ বিরোধী দলগুলোর। ২০২৩ সালের আগস্টে তিনি প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, আমি পক্ষ নেব। এটিই আমার আদর্শ।
তিন বছরে সাড়ে তিন হাজার পরিবার উচ্ছেদ
স্ক্রল ডট ইন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক মাসে আসামের চার জেলায় অন্তত পাঁচটি উচ্ছেদ অভিযানে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ পরিবার। এই পরিবারগুলোর বড় অংশই মুসলিম।
এই উচ্ছেদের ধরন এবং ভাষ্যকে বিরোধীরা বলছে ‘বুলডোজার ন্যায়বিচার’ বা ‘বুলডোজার জাস্টিস’। এর নিশানা মূলত সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী।
২০২৩ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক সাক্ষাৎকারে ভারতের মুসলমানদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানালে, হিমন্ত শর্মা বলেছিলেন, আমার রাজ্যে অনেক হুসেইন ওবামা রয়েছে, তাদের দেখভালের দায়িত্ব পুলিশ নেবে।
এই মন্তব্যকে ‘ইসলামবিদ্বেষী ইঙ্গিতপূর্ণ’ বলে কড়া ভাষায় নিন্দা জানান কংগ্রেসের সুপ্রিয়া শ্রীনেত এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সাকেত গোখলে।
অপরদিকে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কলামিস্ট অপূর্বানন্দ ঝা বলেছিলেন, হিমন্ত শর্মার মুসলিম বিদ্বেষ তার কথায় নয়, কর্মেও স্পষ্ট। তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।
উচ্ছেদ অভিযানে প্রাণহানির পর আসামজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। নাগরিক সমাজ বলছে, এই ধরণের অভিযান আসামের ঐতিহাসিক জাতিগত সহাবস্থানে আঘাত হানছে এবং সংঘাতের শঙ্কা বাড়াচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ), ওয়াকফ আইন সংশোধন এবং এই উচ্ছেদ অভিযান—সবকিছু মিলিয়ে আসামে মুসলমানদের অস্তিত্ব ও নিরাপত্তা আজ প্রশ্নের মুখে।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ বলে চিহ্নিতদের উচ্ছেদ চলবে। তিনি বলেছেন, ৩৫০ জন বাংলাদেশিকে উচ্ছেদে যদি কারও সমস্যা হলে সেটা তাদের সহ্য করতেই হবে।
সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড