শিরোনাম
◈ বৃটেনে বাংলাদেশি প্রভাবশালীদের সম্পত্তি লেনদেন নিয়ে গার্ডিয়ানের বিস্ফোরক প্রতিবেদন ◈ জামায়াতের সমাবেশে বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের বার্তা ◈ এনসিপির নিবন্ধনে ঘাটতি: ৩ আগস্টের মধ্যে সংশোধনের সময় দিয়েছে ইসি ◈ ট্রাম্পের ক্ষোভে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, মামলা ১০ বিলিয়ন ডলারের ◈ নারী সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে শ্রীলঙ্কাকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ ◈ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনা: ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষণ ও ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগ ◈ রাজধানীর পল্লবীতে বাসে আগুন দিল দুর্বৃত্তরা ◈ ব্রহ্মপুত্রে চীনের দৈত্যাকার বাঁধ: ভারত ও বাংলাদেশের উদ্বেগ উপেক্ষা করেই প্রকল্পের উদ্বোধন ◈ জাতীয় মানবাধিকারের নামে সমকামিতার অফিস করতে দিবো না: মামুনুল হক ◈ মির্জা ফখরুলের ভাইয়ের ওপর হামলার প্রধান আসামি গ্রেফতার

প্রকাশিত : ২০ জুলাই, ২০২৫, ০৩:০২ রাত
আপডেট : ২০ জুলাই, ২০২৫, ০৭:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বৃটেনে বাংলাদেশি প্রভাবশালীদের সম্পত্তি লেনদেন নিয়ে গার্ডিয়ানের বিস্ফোরক প্রতিবেদন

বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে হওয়া বিপ্লবে শেখ হাসিনার পতনের আগে তার নিরাপত্তা বাহিনী শত শত বিক্ষোভকারীর রক্ত ঝরিয়েছে। প্রায় এক বছর আগে এই স্বৈরাচারী নেত্রী দেশ ছেড়ে পালানোর পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আর অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দিক খুঁজে ফিরছে। এই রক্তাক্ত পটভূমিতে লন্ডনের নাইটসব্রিজে বিলাসবহুল টাউনহাউস কিংবা সারে-এর কোনো সড়কের ব্যক্তিগত প্রাসাদ যেন এক ভিন্ন জগৎ। তবু বৃটেনের বিলাসবহুল সম্পত্তি এখন এই নাটকের কেন্দ্রবিন্দুতে।

ঢাকার তদন্তকারীরা অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন- হাসিনা সরকারের সময় ক্ষমতাশালী রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় চুক্তি ও ব্যাংকিং খাত থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে কোটি কোটি টাকা বৃটেনের সম্পদের বাজারে ঢুকিয়েছে। গত মে মাসে বৃটিশ ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)- যাকে অনেক সময় ‘বৃটেনের এফবিআই’ বলা হয়- তারা একটি পরিবারের ৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পত্তি ফ্রিজ করে, যাদের বৃটেনে বিশাল সম্পদ পোর্টফোলিওর তথ্য দ্য গার্ডিয়ান গত বছর প্রকাশ করে।

তিন সপ্তাহ পর এনসিএ হাসিনা সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ১৭০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি সম্পদ ফ্রিজ করে। হাসিনার শাসনামলে তিনি ৩০০-এর বেশি বৃটিশ অ্যাপার্টমেন্ট ও টাউনহাউসের মালিক হন। এখন দ্য গার্ডিয়ান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের যৌথ তদন্তে উঠে এসেছে- ঢাকা কর্তৃপক্ষের তদন্তাধীন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি বিপ্লব শুরুর পর থেকে বৃটেনের সম্পত্তি বিক্রি, হস্তান্তর বা পুনঃঋণায়ন করেছে।

এই লেনদেন প্রশ্ন তুলছে- লন্ডনে সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা কীভাবে অবাধে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছে এবং বৃটেনের আইনজীবী ও পরামর্শদাতারা, যারা এসব লেনদেন সহজতর করেছে, তারা যথাযথ সতর্কতা নিয়েছে কিনা। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এখন বৃটেনকে আহ্বান জানাচ্ছে- তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আরও সম্পদ ফ্রিজ করার জন্য। কেউ এটিকে বহুল প্রত্যাশিত দুর্নীতি দমন অভিযানের অংশ বলছে, আবার কেউ রাজনৈতিক প্রতিশোধ হিসেবেও দেখছে।

লন্ডনের গুরুত্ব শুধু বাংলাদেশি প্রবাসীর কারণে নয়, বরং বৃটেন ঢাকার তদন্তকারীদের সম্ভাব্য মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের সন্ধানে সহায়তা করছে বলেও। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এসব সম্পদ ফেরত আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন- আমরা জানি সম্পদ তরল করার চেষ্টা চলছে। বৃটেনকে আরও ফ্রিজ আদেশ জারি করতে বিবেচনা করতে বলছি। এতে আমরা সম্পদ পুনরুদ্ধারে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের সুযোগ পাবো। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেনও এনসিএকে একই আহ্বান জানিয়েছেন, কারণ বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে সম্পত্তি লেনদেন হঠাৎ বেড়ে গেছে।
বৃটেনের ল্যান্ড রেজিস্ট্রি দেখাচ্ছে- গত এক বছরে কমপক্ষে ২০টি ‘অ্যাপ্লিকেশন ফর ডিলিং’ জমা পড়েছে, যেগুলো ঢাকা কর্তৃপক্ষের তদন্তাধীন ব্যক্তিদের সম্পত্তির সঙ্গে সম্পর্কিত। সাধারণত এগুলো বিক্রি, হস্তান্তর বা মর্টগেজ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এর মধ্যে তিনটি ২৪.৫ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি, যা বহুমুখী ব্যবসা সাম্রাজ্য একটি গ্রুপের (সিমেন্ট থেকে মিডিয়া) মালিকের পরিবারের হাতে।

নাইটসব্রিজের চারতলা টাউনহাউসটিতে সাম্প্রতিক দু’টি লেনদেন হয়েছে, যেগুলোর উদ্দেশ্য অস্পষ্ট। গত বছর এপ্রিল পর্যন্ত এটি ওই গ্রুপের এমডি’র নামে ছিল, যিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক একটি কোম্পানির মাধ্যমে মালিক ছিলেন। গার্ডিয়ান সূত্রে জানা যায়, দুদক ওই পরিবারকে মানি লন্ডারিংসহ নানা অভিযোগে তদন্ত করছে। এপ্রিল মাসে সম্পত্তিটি বিনামূল্যে যুক্তরাজ্যের ‘ব্রুকভিউ হাইটস লিমিটেড’-এ হস্তান্তর করা হয়। পরে এটি ৭.৩৫ মিলিয়ন পাউন্ডে বিক্রি হয় এক নতুন কোম্পানির কাছে, যার একমাত্র পরিচালক একজন হিসাবরক্ষক- যিনি একাধিক লন্ডন সম্পত্তির বিশেষ উদ্দেশ্যে গঠিত কোম্পানির পরিচালক হিসেবে তালিকাভুক্ত।
ল্যান্ড রেজিস্ট্রি আরও জানায়, ওই পরিবারের অন্য এক সদস্যের মালিকানাধীন আরও দু’টি সম্পত্তির ওপর বৃটেনের আইনজীবীরা ‘অ্যাপ্লিকেশন ফর ডিলিং’ করেছে, যার মধ্যে সারে’র ভার্জিনিয়া ওয়াটারের ৮ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি প্রাসাদও আছে। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তারা পূর্বে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দুদক ইতিমধ্যে এনসিএকে ওই পরিবারের এসব সম্পত্তি ফ্রিজ করার অনুরোধ করেছে।

সাইফুজ্জামান চৌধুরীর তদন্তে আরও দুই ব্যক্তি নজরদারিতে আছেন। একজন তার ভাই আনিসুজ্জামান, অন্যজন লন্ডনভিত্তিক এক সফল বৃটিশ-বাংলাদেশি রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী (গার্ডিয়ান তার নাম প্রকাশ করেনি)।

ল্যান্ড রেজিস্ট্রি তথ্য বলছে, আনিসুজ্জামানের চারটি সম্পত্তিতে সাম্প্রতিক লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গত জুলাইয়ে ১০ মিলিয়ন পাউন্ডে রিজেন্টস পার্ক সংলগ্ন একটি জর্জিয়ান টাউনহাউস বিক্রি। আরও তিনটি পুনঃঋণায়ন লেনদেন হয়েছে। আনিসুজ্জামানের আইনজীবীরা বলছেন, তার কোনো সম্পদ ফ্রিজ করার বৈধ কারণ নেই এবং রিজেন্টস পার্কের বাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত বিপ্লবের আগে, ২০২৩ সালে হয়।

বাংলাদেশি গণমাধ্যমের তথ্যমতে, দুদককে স্থানীয় বৃহৎ ব্যাংক ইউসিবি’র চেয়ারম্যান অনুরোধ করেছিলেন- চৌধুরী লন্ডনের ওই ডেভেলপারকে অনিয়মিতভাবে ঋণ পাইয়ে দিয়েছিল কিনা তা তদন্ত করতে। এই বছর আদালত ডেভেলপারের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়।

বৃটিশ এমপি জো পাওয়েল বলেছেন- অতীতে দেখা গেছে, তদন্ত চলাকালে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সম্পদ মিলিয়ে যেতে পারে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সম্পদ ফ্রিজ করতে হবে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, যেসব বৃটিশ ফার্ম সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের হয়ে কাজ করছে, তাদের কঠোর যাচাই-বাছাই ও ‘সোর্স অব ওয়েলথ’ পরীক্ষা করতে হবে এবং সন্দেহজনক কার্যক্রম পুলিশকে জানাতে হবে। দুদক তাদের চলমান তদন্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। অনুবাদ মানবজমিন।

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়