সৌদি আরব ইরানকে সতর্ক করে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পারমাণবিক চুক্তিকে গুরুত্ব না দিলে দেশটি ইসরায়েলি সামরিক হামলার মুখে পড়তে পারে। দুই উপসাগরীয় ও দুই ইরানি সূত্র ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানায়, গত ১৭ এপ্রিল তেহরানে এক গোপন বৈঠকে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান এই বার্তা পৌঁছে দেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে। বৈঠকে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান, সেনাপ্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি উপস্থিত ছিলেন।
সূত্রগুলো জানায়, সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ নিজের পুত্র খালিদকে এই বার্তা দিয়ে পাঠান। কারণ তিনি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিরতার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন।
খালিদ বলেন, ট্রাম্প দীর্ঘ আলোচনা সহ্য করবেন না। দ্রুত চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে। না হলে কূটনৈতিক পথ বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি সতর্ক করেন, চুক্তি না হলে ইসরায়েলি হামলার আশঙ্কা রয়েছে, যা গাজা ও লেবাননে চলমান সহিংসতার মধ্যে নতুন উত্তেজনা ছড়াবে।
এই বৈঠকের বিষয়ে সৌদি আরব ও ইরানের কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করেনি।
২০১৬ সালের পর এটিই ছিল সৌদি রাজপরিবারের কোনও জ্যেষ্ঠ সদস্যের প্রথম তেহরান সফর। ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় দুদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়।
বৈঠকে পেজেশকিয়ান জানান, ইরান অর্থনৈতিক চাপ কমাতে একটি পারমাণবিক চুক্তি চায়। তবে তিনি বলেন, কেবল ট্রাম্প একটি চুক্তি চান বলে ইরান নিজের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করতে প্রস্তুত নয়।
ট্রাম্প সম্প্রতি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতে ঘোষণা দিয়েছেন, তেহরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চলছে। অথচ নেতানিয়াহু তখন ইরানবিরোধী সামরিক সমর্থন চেয়ে ওয়াশিংটন গিয়েছিলেন।
সূত্রমতে, ইরানি পক্ষ ট্রাম্প প্রশাসনের ‘অনিশ্চিত ও অসম’ কৌশল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কারণ আগে তারা সীমিত সমৃদ্ধকরণ মেনে নিয়েছে, আবার কখনও তা পুরোপুরি বন্ধের দাবি এসেছে।
এক ইরানি সূত্র জানায়, ইরান একটি চুক্তি চায়, তবে তা যেন সম্মানজনক হয় এবং তেহরানের শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধকরণ অধিকার স্বীকৃত হয়।
এদিকে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে, আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে এবং দুই পক্ষ এখন একটি রাজনৈতিক সমঝোতার দ্বারপ্রান্তে। তবে ইরান এখনও শর্তসাপেক্ষে আলোচনা চালিয়ে যেতে চায়।
হোয়াইট হাউজ সরাসরি সৌদি বার্তার বিষয়ে কিছু বলেনি। তবে মুখপাত্র কারোলিন লেভিট বলেন, ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন—চুক্তি করুন, না হলে পরিণতি ভয়াবহ হবে। বিশ্বও তা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানপন্থি শক্তিগুলোর সামরিক বিপর্যয় ও বাশার আল-আসাদের পতনে তেহরানের প্রভাব অনেকটাই কমেছে। এ সুযোগেই সৌদি আরব কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
কার্নেগি মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রের ইরান বিশেষজ্ঞ মোহানাদ হাগে আলী বলেন, তারা (সৌদি আরব) যুদ্ধ এড়াতে চায়, কারণ তা তাদের অর্থনৈতিক লক্ষ্য ও স্থিতিশীলতার পথে বড় বাধা হবে।
বৈঠকে প্রিন্স খালিদ আরও বলেন, রিয়াদ কখনোই আমেরিকা বা ইসরায়েলকে সৌদি ভূখণ্ড ব্যবহার করে ইরান আক্রমণের অনুমতি দেবে না। তবে তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ইরান ও তার মিত্রদের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড ওয়াশিংটনকে আরও কঠোর পদক্ষেপে প্ররোচিত করতে পারে।