চোখের পানির কথা উঠলেই অনেকের মন হালকা হয়ে যায়। কখনো আনন্দে, কখনো দুঃখে, আবার কখনো নিঃশব্দ কষ্টে এই চোখের জল যেন হয়ে ওঠে হৃদয়ের গভীরতম ভাষা। যুগে যুগে কবিতা ও গানে এই এক ফোঁটা জলের রূপক হয়ে এসেছে ভালোবাসা ও বেদনার প্রতিচ্ছবি হিসেবে। তবে এবার এই এক ফোঁটা চোখের জল পেল এক অভূতপূর্ব বৈজ্ঞানিক পরিচয়—এবার তা ফিরিয়ে আনতে পারে প্রাণ, বাঁচাতে পারে সাপের বিষে মৃত্যুপথযাত্রী মানুষকে।
রাজস্থানের মরু প্রান্তরে এমনই এক অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। উটের চোখের পানিতেই খুঁজে পেয়েছেন এমন শক্তিশালী অ্যান্টিবডি, যা একসঙ্গে ২৬ রকমের সাপের বিষকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে।
উটের চোখের জল: বিষের প্রতিষেধক!
ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার অন ক্যামেল (NRCC) এর গবেষকদের দাবি, তারা এমন এক অ্যান্টিবডি আবিষ্কার করেছেন যা শুধু বিষকে নিস্ক্রিয়ই করে না, বরং সাপের বিষে শরীরে যে রক্তক্ষরণ বা জমাট বাঁধার সমস্যা দেখা দেয়, সেটাও প্রতিরোধে সক্ষম।
গবেষণার শুরুতে বিজ্ঞানীরা কিছু উটকে একটি বিশেষ ভ্যাকসিনের মাধ্যমে ছোট মাত্রায় সাপের বিষের সংস্পর্শে আনেন। কিছুদিন পর দেখা যায়—এই উটগুলোর চোখের জল ও রক্তে গঠিত হয়েছে এমন প্রাকৃতিক অ্যান্টিবডি, যা ২৬ রকমের সাপের বিষ প্রতিরোধে সক্ষম।
সস্তা, নিরাপদ এবং সহজলভ্য প্রতিষেধকের আশা
বর্তমানে সাপের কামড়ের প্রতিষেধক তৈরি হয় ঘোড়ার শরীর থেকে সংগৃহীত অ্যান্টিবডি ব্যবহার করে, যা একদিকে যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও বেশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, উটের চোখের জল থেকে তৈরি প্রতিষেধক হবে অধিক নিরাপদ, তুলনামূলক সস্তা এবং গ্রামাঞ্চলে সহজে পৌঁছানো সম্ভব।
এই আবিষ্কার সফল হলে শুধু যে মৃত্যুর ঝুঁকি কমবে তা-ই নয়, বাঁচবে গ্রামাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ ও তাদের পরিবার, যারা সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে প্রাণ হারাতেন অথবা আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতেন।
মরুভূমির জীবনে নতুন সম্ভাবনা
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, উট থেকে চোখের জল ও রক্ত সংগ্রহের জন্য একটি মানবিক, নির্যাতনমুক্ত পদ্ধতি উদ্ভাবনের কাজ চলছে। এতে করে প্রতি মাসে একজন উটপালক ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারবেন।
ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি এই গবেষণায় যুক্ত হয়েছে, এবং উটপালকদের জন্য বিশেষ ক্ষতিপূরণ পরিকল্পনাও রাখা হয়েছে।
এ যেন এক নতুন দিগন্তের সূচনা—যেখানে রাজস্থানের মরুভূমিতে উটের চোখের জলও হয়ে উঠতে পারে জীবনদানের প্রতীক। সূত্র: আরটিভি