শিরোনাম
◈ হাওরপাড়ের মেয়ে ইমার হকির আন্তর্জাতিক অভিষেক ◈ জামালপুর খনি থেকে দৈনিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের সম্ভাবনা  ◈ টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রের রাষ্ট্রীয় সম্পদ অবহেলায় ধ্বংসের পথে ◈ এনবিআর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্তে হস্তক্ষেপ নেই: অর্থ উপদেষ্টা ◈ স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়, জিআই স্বীকৃতি পেল গাজীপুরের কাঁঠাল! ◈ দক্ষিণ আফ্রিকার ‌টেস্ট ক্রিকেট ই‌তিহা‌সে যে রেকর্ড গড়লেন কেশব মহারাজ ◈ খেলার মা‌ঠেই মে‌সি‌কে ‘সর্বকালের সেরা’ বললেন ওসমান দেম্বেলে ◈ আজহার মাহমুদ‌ পা‌কিস্তান টেস্ট দলের কোচ ◈ সরকার দুই দুইবার সময় দিয়েও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি: নাহিদ ইসলাম ◈ ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ‘আল্লাহর শত্রু’ ঘোষণা করে ফতোয়া জারি করলেন ইরানের শীর্ষ শিয়া আলেম

প্রকাশিত : ৩০ জুন, ২০২৫, ০১:১৪ দুপুর
আপডেট : ৩০ জুন, ২০২৫, ০৮:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আসিফ মাহমুদের ম্যাগাজিন কাণ্ড নিয়ে সাংবাদিক আনিস আলমগীরের তীব্র সমালোচনা

আসিফ মাহমুদের বয়স ৩০-এর নিচে—এই বয়সে কি তিনি বৈধভাবে অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে পারেন? আইন কী বলে?

সাংবাদিক ও কলামিস্ট আনিস আলমগীর তার ফেসবুক পেজে ‘আসিফ মাহমুদের ম্যাগাজিন কাণ্ড: দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, আইনি ব্যত্যয় ও আত্মপ্রতারণার প্রতিচ্ছবি’ শিরোনামে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসে তিনি আসিফ মাহমুদের কর্মকাণ্ড এবং সাম্প্রতিক বিমানবন্দরে অস্ত্রের ম্যাগাজিনসহ ধরা পড়ার ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করেছেন।

আনিস আলমগীর লিখেছেন, “আসিফ মাহমুদের সঙ্গে আমার সরাসরি দেখা হয়েছিল গত বছরের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে, যখন তাদের কোটা আন্দোলন শুরু হয়। সে যেমন কোটার বিরুদ্ধে, আমিও তেমনি—তবে আমি শিক্ষায় সীমিত আকারে কোটা রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলাম।

আলোচনা চলছিল এক টিভি টকশোতে, যেখানে আরেকজন আলোচক ছিলেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের একটি সংগঠনের প্রতিনিধি; তিনি কোটার পক্ষে অবস্থান নেন।"

“বলে রাখা ভালো যে পুরো জুলাই আন্দোলনে ওইটাই ছিল আমার শেষ টিভি টকশো। আমি আর টিভিতে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করি নাই, যেই ধরনের টক শো তখন চলছিল। সেইদিন আসিফকে খুব সাধারণ, সাদাসিধে এক তরুণ বলেই মনে হয়েছিল।

কিন্তু শো শেষে দেখি সে এসেছে অনেক অনুসারী ও কর্মী নিয়ে—তখনই তার ভেতরে ভবিষ্যতের প্রদর্শন-নির্ভর পচা রাজনীতির একটি আগাম নমুনা দেখেছিলাম।”

তিনি আরও লিখেন, “আজ রবিবার তাকে নিয়ে দুটি খবর চোখে পড়েছে। এক, তার এলাকায় (মুরাদনগরে) এক সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, অথচ আসিফ নির্বিকার। দুই, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, একজন উপদেষ্টা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মুরাদনগরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে যাচ্ছেন।

যাক, ধর্ষক আওয়ামী লীগ বা বিএনপি—যেই দলেরই হোক, দোষীর দলীয় পরিচয় নয়, বিচারই মুখ্য হওয়া উচিত। এমনকি সে আসিফের আশ্রয়ে থাকলেও।”

অস্ত্রের ম্যাগাজিনসহ বিদেশযাত্রা—আলোচিত ঘটনা

আনিস আলমগীর লিখেছেন, “দ্বিতীয় ও সবচেয়ে আলোচিত বিষয়: অস্ত্রের ম্যাগাজিনসহ বিদেশযাত্রা। খবরে এসেছে, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার ব্যাগে একটি আগ্নেয়াস্ত্রের ম্যাগাজিন ধরা পড়েছে। বিষয়টি ‘ভুলবশত’ ঘটেছে বলে তিনি দাবি করেছেন, যদিও সেটি ছিল তার ব্যক্তিগত লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্রের অংশ।

তিনি আরও বলেছেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ তার অস্ত্র থাকা জরুরি।”
তিনি আইনের উদ্ধৃতি দিয়ে লেখেন, “কিন্তু বাংলাদেশের আয়ুধ আইন, ১৮৭৮ এবং Arms Rules, ২০১৬ অনুযায়ী স্পষ্টভাবে বলা আছে—যে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র বা তার অংশ আন্তর্জাতিক ভ্রমণে বহন নিষিদ্ধ, বিশেষ অনুমোদন ব্যতিরেকে। এমনকি আন্তর্জাতিক সিভিল অ্যাভিয়েশন আইন (ICAO এবং IATA) অনুযায়ীও, যাত্রী ব্যাগে ম্যাগাজিন বহন নিষিদ্ধ এবং গুরুতর নিরাপত্তা লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হয়।”

প্রশ্ন তুললেন আনিস আলমগীর, “প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কি নিছক ভুল, নাকি অহংকারের বহিঃপ্রকাশ? যদি ধরা না পড়ত, তবে কি তিনি একে ‘ভুল’ বলতেন? একজন সাধারণ নাগরিক একই কাজ করলে কি তাকে ছেড়ে দেওয়া হতো? ঢাকা এয়ারপোর্টের রেকর্ড কি বলে? আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন: ‘লাইসেন্সড অস্ত্র’ কেনার অর্থ এল কোথা থেকে?”

তিনি আরও বলেন, “যে ব্যক্তি বছরখানেক আগেও মধ্যবিত্ত ঘরানার তরুণ ছিলেন, তার কাছে হঠাৎ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের অস্ত্র কেনার সামর্থ্য কীভাবে এলো? উপদেষ্টার বেতন কি এসব খরচের যোগান দেয়? নাকি তিনি সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয় এলজিইডির সোনার চেরাগ পেয়েছেন?”

আইন কী বলে—উঠছে নতুন প্রশ্ন

আনিস আলমগীর লিখেছেন, “আইন কী বলে? (আপডেট) আসিফ মাহমুদের বয়স ৩০-এর নিচে—এই বয়সে কি তিনি বৈধভাবে অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে পারেন? আয়ুধ আইন ১৮৭৮ ও Arms Rules ২০১৬ অনুযায়ী, সাধারণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে লাইসেন্স পেতে হলে বয়স হতে হয় কমপক্ষে ৩০ বছর, থাকতে হয় নিয়মিত ট্যাক্স রিটার্ন, এবং অস্ত্র ব্যবহারের যৌক্তিক কারণ দেখাতে হয়। তাহলে প্রশ্ন—আসিফ কীভাবে এইসব শর্ত পূরণ করলেন? যদি তিনি করদাতা না হন, বয়স সীমার নিচে থাকেন, এবং কোনো নিরাপত্তা সংস্থা তার ঝুঁকি যাচাই না করে থাকে, তাহলে এই লাইসেন্স আইনসঙ্গত নয়। এটি কেবল দম্ভের বিষয় নয়, বরং প্রশাসনিক সুবিধাপ্রাপ্তির স্পষ্ট ইঙ্গিত।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আসিফ বলেন, ‘আমার ওপর কয়েকবার হত্যাচেষ্টা হয়েছে।’ সত্য হলে, তাহলে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী কী করছে? উপদেষ্টাদের কি আলাদা নিরাপত্তা নেই? যদি না থাকেই, তবে পদত্যাগ করে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা গ্রহণ করাই কি শ্রেয় নয়?”

ক্ষমতার দম্ভ আর আত্মপ্রবঞ্চনার ছাপ

আনিস আলমগীর লিখেছেন, “যারা ক্ষমতায় থেকেও নিজেদের নিরাপদ মনে করেন না, তারা ক্ষমতা হারালে কোথায় যাবেন—এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে কি তাদের আশ্রয়স্থল বিদেশে? এখনই সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে আছে? একসময় আসিফ ছিলেন সদালাপী, সচেতন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন তরুণ। কিন্তু আজ তার ভাষা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আচরণ, অস্ত্রের যুক্তি—সব কিছুতেই এক ধরনের ক্ষমতার দম্ভ ও আত্মপ্রবঞ্চনার ছাপ স্পষ্ট। একজন অন্তর্বর্তী উপদেষ্টার এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন, বেআইনি ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ ব্যক্তি নয়, বরং রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। উচিত ছিল নিঃশর্ত দুঃখ প্রকাশ ও আত্মসমালোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। এটি কেবল একটি ম্যাগাজিন নয়—এটি দেশের শুদ্ধাচার, আইনের শাসন এবং নাগরিক নিরাপত্তা–এই তিনটির প্রতি আস্থার একটি বড় পরীক্ষা।”

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়